নুয়ে পড়া শরীর। নত হয়ে আসা মাথা। রণে ভঙ্গ দিয়ে একেকজন ব্যাটসম্যান উইকেট ছেড়ে গেলেন আর একটু একটু করে হারিয়ে গেল বাংলাদেশের স্বপ্ন। লক্ষ্যটাকে নাগালে পেয়েও ছোঁয়া হলো না। উত্থান-পতনের বিশ্বকাপ থেকে নিশ্চিত হয়ে গেল বাংলাদেশের বিদায়।
বাংলাদেশের শেষ চারের আশা গুঁড়িয়ে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করল ভারত। বার্মিংহামে মঙ্গলবার ভারতীয় সমর্থকে ঠাসা গ্যালারিকে উত্তাল করে দুইবারের চ্যাম্পিয়নরা জিতল ২৮ রানে।
পরাজয়ের ব্যবধান হয়তো খুব বড় মনে হচ্ছে না, তবে ম্যাচের উত্তেজনা অনেকটা শেষ হয়ে গেছে আসলে ম্যাচ শেষের বেশ আগেই। মূল ব্যাটসম্যানদের আলগা শটের মিছিলে বাংলাদেশের রান তাড়া জমে ওঠেনি সেভাবে।
বাংলাদেশের দুর্দশার শুরু ম্যাচের শুরুর দিকেই। ৯ রানে রোহিত শর্মার ক্যাচ ছাড়েন তামিম ইকবাল। জীবন পেয়ে ভারতীয় ওপেনার করেন রেকর্ড ছোঁয়া সেঞ্চুরি। ভারতের শুরুটা হয় দুর্দান্ত।
মুস্তাফিজুর রহমানের ৫ উইকেটের সৌজন্যে পরে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। ভারতকে আটকে রাখা গেল ৩১৪ রানে। এই উইকেটে লক্ষ্য ছোঁয়া ছিল খুবই সম্ভব। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা সেটিকে অসম্ভব করে তুললেন নিজেরাই। দুই ওভার বাকি থাকতে তাই ইনিংস শেষ ২৮৬ রানে।
৮ ম্যাচে ৩ জয় আর একটি পরিত্যক্ত ম্যাচ থেকে বাংলাদেশের প্রাপ্তি ৭ পয়েন্ট। পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি এখন আনুষ্ঠানিকতার। কিংবা পয়েন্ট টেবিলে অবস্থান একটু ভালো করার।
এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের উজ্জ্বলতম বিজ্ঞাপন সাকিব আল হাসান আবারও ছড়িয়েছেন আলো। দারুণ বোলিংয়ের পর ব্যাট হাতে করেছেন ফিফটি। কিন্তু বাকি ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতাই ছিটকে দিয়েছে দলকে।
৩১৫ রান তাড়ায় প্রয়োজন ছিল গোছানো ব্যাটিং। কিন্তু গুছিয়ে উঠতে উঠতেই একের পর এক ব্যাটসম্যান বিলিয়ে এসেছেন উইকেট। প্রথম ৫ ব্যাটসম্যানই ছাড়িয়েছেন ২০, ফিফটি কেবল সাকিবের। প্রথম চার জুটি ছুঁয়েছে ৩৫, পঞ্চাশে যায়নি একটিও। ম্যাচ হার একরকম নিশ্চিত হয়ে যায় তাতেই।
রান তাড়ার শুরুটা যদিও ছিল আশা জাগানিয়া। দারুণ তিনটি বাউন্ডারিতে তামিমের ব্যাটে ছিল শুভ ইঙ্গিত। রানের স্রোত তীব্র না হলেও উইকেট ধরে রাখা উদ্বোধনী জুটিতে ছিল আশার জোয়ার।
ভাটার টান আসার শুরু তামিমকে দিয়েই। দশম ওভারে স্টাম্পে টেনে আনলেন মোহাম্মদ শামির বাইরের বল। এই বিশ্বকাপে ষষ্ঠবার দুই অঙ্ক ছুঁয়ে বাংলাদেশের সফলতম ব্যাটসম্যান যেতে পারলেন না ফিফটিতে।
এরপর চলতে থাকল পুনরাবৃত্তি। একেকজন ব্যাটসম্যান থিতু হলেন। ভালো খেলতে খেলতেই রণে ভঙ্গ দিলেন আলগা শটে। অপমৃত্যু হতে থাকল একেকটি সম্ভাবনাময় জুটির।
সৌম্য সরকার, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, সবাই আউট হলেন ৩০ গজ বৃত্তের ভেতর ক্যাচ দিয়ে। বাইরের বল স্টাম্পে টানলেন মোসাদ্দেক হোসেন।
আশার বাতি হয়ে ছিলেন সাকিব। বিশ্বকাপে ৭ ইনিংসে ষষ্ঠবার পেরিয়ে যান ফিফটি। কিন্তু ৬৬ রানে সেই আলো নিভে যায় হার্দিক পান্ডিয়ার স্লোয়ারে। ব্যাটিংয়ে শূন্য রানে ফেরা পান্ডিয়ার সেটি তৃতীয় উইকেট!
সাব্বির রহমান ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন এরপর লড়াই করেছেন। একটু হলেও জাগিয়ে তুলেছেন আশা। তবে জাসপ্রিত বুমরাহ বোলিংয়ে ফিরে বুঝিয়ে দিয়েছেন, কেন ডেথ ওভারে তিনি বিশ্বের সেরা বোলার।
সাইফের ৩৮ বলে ৫১ রানের অপরাজিত ইনিংসটি তার ভবিষ্যতের উজ্জ্বল বার্তা দিল বটে, তবে বিশ্বকাপে দলের ভবিষ্যৎ তখন আর কিছু নেই।
সকালে বাংলাদেশের হতাশার শুরু টস হার দিয়ে। সেই রেশ আরও দীর্ঘায়িত হলো তামিমের ক্যাচ মিসে। মুস্তাফিজের বলে পুল করেছিলেন রোহিত, স্কয়ার লেগ থেকে মিড উইকেটের দিকে ছুটে বলের নিচে গেলেও তামিম পারেননি হাতে জমাতে।
বিশ্বকাপে এবার আগের তিন সেঞ্চুরির দুটিতেই শুরুর দিকে জীবন পেয়েছিলেন রোহিত। এই ম্যাচেও সেটির চড়া মূল্য বুঝিয়ে দিয়েছেন প্রতিপক্ষকে। ৭ চার ও ৫ ছক্কায় ৯২ বলে করেছেন ১০৪।
এবারের আসরে রোহিতের যেটি চতুর্থ সেঞ্চুরি। এক বিশ্বকাপে চারটি সেঞ্চুরি আছে কেবল আর কুমার সাঙ্গাকারার।
লোকেশ রাহুলের সঙ্গে রোহিতের উদ্বোধনী জুটিতে ভারত তোলে ১৮০ রান। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম জুটিতে সর্বোচ্চ রান এটিই।
ওই ক্যাচ ছাড়া তেমন কোনো সুযোগ আর তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ। কেবল সাকিব ছাড়া শুরুর দিকে কারও বোলিংয়ে ছিল না ধার। ১০৫ বলে আসে জুটির শতরান, পরের পঞ্চাশে লাগে কেবল ৩৫ বল।
রোহিত ফিফটি স্পর্শ করেন ৪৫ বলে। পরের পঞ্চাশেও লেগেছে ঠিক ৪৫ বল। এই বিশ্বকাপে এটি তার চতুর্থ ও ওয়ানডেতে ২৬তম সেঞ্চুরি।
অনেক সময়ই সেঞ্চুরির পর আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন রোহিত। এ দিন সুযোগটি দেননি সৌম্য সরকার। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের মতো আবারও দলকে ব্রেক থ্রু এনে দেন এই অনিয়মিত বোলার। তার স্লোয়ার উড়িয়ে মারতে গিয়ে ফেরেন রোহিত।
সঙ্গীকে হারানোর পর বেশি দূর যেতে পারেননি রাহুল। স্লোয়ারে ফেরেন তিনিও। ৯২ বলে ৭৭ রান করা ওপেনার বিশ্বকাপে এবার রুবেলের প্রথম শিকার।
চোখধাঁধানো কয়েকটি শটে বিরাট কোহলির রান রথ ছুটতে শুরু করেছিল। ইনিংসের বাংলাদেশের সেরা সময়টুকু আসে তখনই। মুস্তাফিজের দুটি কাটার দলকে উপহার দেয় দুটি উইকেট। পুল শট সীমানায় সোজা ফিল্ডারের হাতে তুলে দেন কোহলি। নতুন ব্যাটসম্যান হার্দিক পান্ডিয়া দ্বিতীয় বলেই শূন্য রানে ফেরেন স্লিপে সৌম্য সরকারের দারুণ ক্যাচে।
ডাবল উইকেট মেডেনে যে চাপ সৃষ্টি করেছিলেন মুস্তাফিজ, পরের ওভারে সাইফকে টানা তিন বাউন্ডারিতে তা আলগা করে দেন রিশাভ পান্ত।
৪১ বলে ৪৮ রান করা পান্তকে পরে বিদায় করেন ইনিংস জুড়ে দারুণ বোলিং করা সাকিব। অনেকটা কমে আসে ভারতের রানের গতি। শেষ পর্যন্ত মহেন্দ্র সিং ধোনির ৩৩ বলে ৩৫ ভারতকে নিয়ে যায় তিনশর ওপারে।
শেষ ১০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ভারত তুলতে পারে ৬৩ রান। শেষ ওভারে দুটি উইকেট নিয়ে মুস্তাফিজ পূরণ করেন ৫ উইকেট।
এই প্রথম বিশ্বকাপে ৫ উইকেট পেলেন বাংলাদেশের কোনো পেসার। ক্যারিয়ারের প্রথম ৯ ওয়ানডেতেই ৩ বার ৫ উইকেট নেওয়া মুস্তাফিজ আরেকটি ৫ উইকেটের স্বাদ পেলেন ৪৩ ম্যাচ পর।
তখনও বেঁচে বাংলাদেশের আশা। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা বইতে পারলেন না ভার। ম্যাচ শেষ হতেই গ্যালারির গর্জনের মাঝে যখন উল্লাস করছে ভারতীয় ক্রিকেটাররা, অপরাজিত ব্যাটসম্যান সাইফ তাকিয়ে রইলেন অসহায় চোখে। সেটি যেন গোটা বাংলাদেশেরই দৃষ্টি!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৫০ ওভারে ৩১৪/৯ (রাহুল ৭৭, রোহিত ১০৪, কোহলি ২৬, পান্ত ৪৮, পান্ডিয়া ০, ধোনি ৩৫, কার্তিক ৮, ভুবনেশ্বর ২, শামি ১, বুমরাহ ০*; মাশরাফি ৫-০-৩৬-০, সাইফ ৭-০-৫৯-০, মুস্তাফিজ ১০-১-৫৯-৫, সাকিব ১০-০-৪১-১, মোসাদ্দেক ৪-০-৩২-০, রুবেল ৮-০-৪৮-১, সৌম্য ৬-০-৩৩-১)।
বাংলাদেশ: ৪৮ ওভারে ২৮৬ (তামিম ২২, সৌম্য ৩৬, সাকিব ৬৬, মুশফিক ২৪, লিটন ২২, মোসাদ্দেক ৩, সাব্বির ৩৬, সাইফ ৫১*, মাশরাফি ৮, রুবেল ৯, মুস্তাফিজ ০; ভুবনেশ্বর ৯-০-৫১-১, বুমরাহ ১০-১-৫৫-৪, শামি ৯-০-৬৮-১, চেহেল ১০-০-৫০-১, পান্ডিয়া ১০-০-৬০-৩)।
ফল: ভারত ২৮ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রোহিত শর্মা
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ৩২ ওভারে ১৭২/৪(ভারত ৩১৪/৯)
শর্ট বলে আউট লিটন
হার্দিক পান্ডিয়ার শর্ট বল ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টায় ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন লিটন দাস। ভাঙল আরেকটি সম্ভাবনাময় জুটি।
দাপুটে ব্যাটিংয়ে সাকিবের ফিফটি
বড় রান তাড়ায় বাংলাদেশকে টানছেন সাকিব আল হাসান। আইসিসি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ অলরাউন্ডার তুলে নিয়েছেন আসরে চতুর্থ ফিফটি, আছে দুটি সেঞ্চুরিও।
৫৮ বলে ক্যারিয়ারের ৪৬তম ফিফটি তুলে নেন সাকিব। এই সময়ে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান হাঁকিয়েছেন পাঁচটি চার।
২৮ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ১৪৭/৩। সাকিব ৫০ ও লিটন দাস ১৪ রানে ব্যাট করছেন।
মুশফিককে থামালেন চেহেল
দুই ওপেনারের পর মুশফিকুর রহিমও ফিরলেন থিতু হয়ে। মিডল অর্ডারের সবচেয়ে বড় ভরসাকে ফিরিয়ে ৪৭ রানের জুটি ভাঙলেন যুজবেন্দ্র চেহেল।
লেগ স্পিনারের বল সুইপ করতে গিয়ে মাটিতে রাখতে পারেননি মুশফিক। মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ মুঠোয় জমান মোহাম্মদ শামি।
২৩ বলে তিন চারে ২৪ রান করেন মুশফিক। ক্রিজে সাকিব আল হাসানের সঙ্গী ভারতের বিপক্ষে সবশেষ ওয়ানডের সেঞ্চুরিয়ান লিটন দাস।
থিতু হয়ে আউট সৌম্য
তামিম ইকবালের মতো থিতু হয়ে ফিরলেন অন্য ওপেনার সৌম্য সরকার। আলগা শটে উইকেট ছুড়ে এলেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
হার্দিক পান্ডিয়ার অফ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বল যে কোনো জায়গায় পাঠাতে পারতেন সৌম্য। বাজে বলটি কাজে লাগাতে পারেননি তিনি। উল্টো এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ দিলেন বিরাট কোহলিকে। ভাঙল ৩৫ রানের জুটি।
৩৮ বলে চারটি চারে ৩৩ রান রান করেন সৌম্য। ১৬ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর ৭৫/২। ক্রিজে সাকিব আল হাসানের সঙ্গী মিডল অর্ডারে সবচেয়ে বড় ভরসা মুশফিকুর রহিম।
বোল্ড হয়ে ফিরলেন তামিম
থিতু হয়েও ইনিংস বড় করতে পারলেন না তামিম ইকবাল। মোহাম্মদ শামির বলে বোল্ড হয়ে ফিরে গেলেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
একটু নিচু হয়ে যাওয়া বল ঠিক মতো খেলতে পারেননি তামিম। ব্যাটের নিচের দিকে লেগে আঘাত হানে স্টাম্পে। ভাঙে ৩৯ রানের উদ্বোধনী জুটি।
১০ ওভার শেষে স্কোর ৪০/১। এক ম্যাচ পর ওপেনিংয়ে ফেরা সৌম্য সরকার ১৬ ও দারুণ ছন্দে থাকা সাকিব আল হাসান ১ রানে ব্যাট করছেন।
বাংলাদেশের সামনে ৩১৫ রানের লক্ষ্য
রোহিত শর্মার সেঞ্চুরির পরও ক্যারিয়ারে চতুর্থবারের মতো পাঁচ উইকেট নিয়ে ভারতকে খুব বড় সংগ্রহ গড়তে দেননি সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান। বিশ্বকাপে টিকে থাকতে বাংলাদেশ পেয়েছে ৩১৫ রানের লক্ষ্য।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ৩১৪ রান করে ভারত। ৫৯ রানে ৫ উইকেট নেন মুস্তাফিজ। ভারতের বিপক্ষে এ নিয়ে তৃতীয়বার পাঁচ উইকেট পেলেন তিনি।
দারুণ বোলিং করেছেন সাকিব আল হাসান। ১০ ওভারে ৪১ রান দিয়ে নেন ১ উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৫০ ওভারে ৩১৪/৯ (রাহুল ৭৭, রোহিত ১০৪, কোহলি ২৬, পান্ত ৪৮, পান্ডিয়া ০, ধোনি ৩৫, কার্তিক ৮, ভুবনেশ্বর ২, শামি ১, বুমরাহ ০*; মাশরাফি ৫-০-৩৬-০, সাইফ ৭-০-৫৯-০, মুস্তাফিজ ১০-১-৫৯-৫, সাকিব ১০-০-৪১-১, মোসাদ্দেক ৪-০-৩২-০, রুবেল ৮-০-৪৮-১, সৌম্য ৬-০-৩৩-১)।
মুস্তাফিজের পঞ্চম শিকার শামি
ইনিংসের শেষ বলে মোহাম্মদ শামিকে বোল্ড করে ভারতের বিপক্ষে তৃতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট নিলেন মুস্তাফিজুর রহমান।
শাফল করে লেগে বল ঘুরাতে চেয়েছিলেন শামি। ব্যাটে-বলে করতে পারেননি। এলোমেলো হয়ে যায় স্টাম্পস। ২ বলে ১ রান করেন শামি।
২০১৫ সালের পর ওয়ানডেতে পাঁচ উইকেট নিলেন মুস্তাফিজ। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বোলার হিসেবে বিশ্বকাপে নিলেন পাঁচ উইকেট।
রান আউট ভুবনেশ্বর
কিপারের কাছে বল রেখে দ্রুত একটি রান নেওয়ার চেষ্টায় রান আউট হয়ে ফিরে গেলেন ভুবনেশ্বর কুমার। মুশফিকুর রহিম বল গ্লাভসে জমিয়ে থ্রো করেন বোলার মুস্তাফিজুর রহমানের কাছে। বাকিটা সারেন তিনি। ২ বলে ১ রান করেন ভুবনেশ্বর।
মুস্তাফিজের চতুর্থ শিকার ধোনি
বাউন্ডারি হাঁকানোর আশায় মুস্তাফিজুর রহমানের করা ইনিংসের শেষ ওভারে দুটি সিঙ্গেল নেননি মহেন্দ্র সিং ধোনি। সেই বাউন্ডারি হাঁকানোর চেষ্টাতেই ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান এই কিপার-ব্যাটসম্যান।
বাঁহাতি পেসারের শর্ট বল পুল করে ওড়াতে চেয়েছিলেন ধোনি। টাইমিং করতে পারেননি, মিড অনে ধরা পড়েন সাকিব আল হাসানের হাতে। ৩৩ বলে চারটি চারে ৩৫ রান করেন ধোনি।
মুস্তাফিজের তৃতীয় শিকার কার্তিক
এবারের আসরে প্রথমবারের মতো খেলা দিনেশ কার্তিককে ফিরিয়ে নিজের তৃতীয় উইকেট নিলেন মুস্তাফিজুর রহমান।
বাঁহাতি পেসারের অফ কাটার বাউন্সার ঠিকমতো পুল করতে পারেননি কার্তিক। মিডউইকেটে ক্যাচ মুঠোয় জমান মোসাদ্দেক হোসেন।
এই ওভারেই তিনশ স্পর্শ করে ভারতের স্কোর। অষ্টাদশ ওভারে একশ ছুঁয়েছিল তারা। ৩৪তম ওভারে ছুঁয়েছিল দুইশ। তিনশ রান হলো ৪৮তম ওভারে।
৪৮ ওভার শেষ ভারতের স্কোর ৩০০/৬। ক্রিজে মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গী দলে ফেরা ভুবনেশ্বর কুমার।
নিজের শেষ ওভারে পান্তকে থামালেন সাকিব
দ্রুত এগোনো রিশাব পান্তকে ফিরিয়ে দিলেন সাকিব আল হাসান। নিজের দশম ওভারে প্রথম উইকেট পেলেন আইসিসি ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ অলরাউন্ডার।
বাঁহাতি স্পিনারকে স্লগ সুইপ করে ছক্কায় ওড়াতে চেয়েছিলেন পান্ত। টাইমিং করতে পারেননি। সীমানায় সহজ ক্যাচ নিতে গিয়ে তালগোল পাকিয়েছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন। বল কাঁধে লাগার পর দ্বিতীয় প্রচেষ্টায় কোনোমতে মুঠোয় জমান তিনি। ভাঙে ৪০ রানের জুটি।
৪১ বলে ছয় চার ও এক ছক্কায় ৪৮ রান করেন পান্ত। ৪৫ ওভার শেষে ভারতের স্কোর ২৭৯/৫। ক্রিজে মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গী দিনেশ কার্তিক।
বিরাট কোহলিকে ফেরানোর পর একই ওভারে হার্দিক পান্ডিয়াকে বিদায় করলেন মুস্তাফিজুর রহমান।
বাঁহাতি পেসারের অ্যাঙ্গেলে বেড়িয়ে যাওয়া বল ঠিকমতো খেলতে পারেননি পান্ডিয়া। ব্যাটের কানায় লেগে স্লিপে আসা ক্যাচ মুঠোয় জমান সৌম্য সরকার।
২ বল খেলে শূন্য রান করেন পান্ডিয়া। ৩৯ ওভার শেষে ভারতের স্কোর ২৩৭/৪। ক্রিজে রিশাব পান্তের সঙ্গী মহেন্দ্র সিং ধোনি।
বিপজ্জনক কোহলিকে ফেরালেন মুস্তাফিজ
আক্রমণে ফিরে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে বিদায় করলেন মুস্তাফিজুর রহমান।
বাঁহাতি পেসারের শর্ট বলে পুল করেছিলেন কোহলি। কাটারে ঠিক মতো টাইমিং করতে পারেননি। মিডউইকেটে ক্যাচ মুঠোয় জমান রুবেল হোসেন। ভাঙে ৪২ রানের জুটি।
আগের পাঁচ ম্যাচে ফিফটি করা কোহলি ২৭ বলে তিন চারে করেন ২৬ রান।
আক্রমণে ফেরা মোসাদ্দেক হোসনকে ছক্কা হাঁকিয়ে ভারতের রান দুইশতে নিয়ে গেলেন রিশাব পান্ত।
অষ্টাদশ ওভারে একশ ছুঁয়েছিল ভারতের স্কোর। পরের একশ করার পথে দুই ওপেনার ফিরে গেলেও রানের গতি কিছুটা বাড়িয়েছে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। রান দুইশ হয়েছে ৩৪তম ওভারে।
৩৪ ওভার শেষে ভারতের স্কোর ২০৪/২। বিরাট কোহলি ৯ ও পান্ত ৮ রানে ব্যাট করছেন।
দলে ফেরা রুবেল হোসেনের হাত ধরে এলো দ্বিতীয় সাফল্য। কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরে গেলেন লোকেশ রাহুল।
ডানহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল ঠিক মতো খেলতে পারেননি এই ওপেনার। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে।
৯২ বলে ছয় চার ও এক ছক্কায় ৭৭ রান করেন রাহুল। ৩৩ ওভার শেষে ভারতের স্কোর ১৯৬/২। ক্রিজে বিরাট কোহলির সঙ্গী রিশাব পান্ত।
সেঞ্চুরি করে আউট রোহিত
সেঞ্চুরিয়ান রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে প্রথম সাফল্য এনে দিলেন সৌম্য সরকার।
সাকিব আল হাসানের করা ২৯তম ওভারের শেষ বলে সিঙ্গেল নিয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন রোহিত। আসরে চতুর্থ, ক্যারিয়ারের ২৬তম।
৯০ বলে বাংলাদেশের বিপক্ষে তৃতীয় সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন রোহিত। এই সময়ে তার ব্যাট থেকে আসে ৬টি চার ও পাঁচটি ছক্কা।
অনিয়মিত পেসার সৌম্যর পরের ওভারের প্রথম বলে হাঁকান বাউন্ডারি। পরের বলটি উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন ডানহাতি ওপেনার। টাইমিং করতে পারেননি। অফ কাটারে এক্সট্রা কাভারে ধরা পড়েন লিটন দাসের হাতে। ভাঙে ১৮০ রানের উদ্বোধনী জুটি।
৯২ বলে ৭ চার ও ৫ ছক্কায় ১০৪ রান করেন রোহিত। ৩০ ওভার শেষে ভারতের স্কোর ১৮১/১। ক্রিজে রাহুলের সঙ্গী বিরাট কোহলি।
রোহিত শর্মার পর ফিফটি তুলে নিলেন লোকেশ রাহুল।
রুবেল হোসেনকে চার হাঁকিয়ে স্বাগত জানান রাহুল। পরের বলে দুই রান নিয়ে পৌঁছান ফিফটিতে। ওভারের শেষ বলে আবার হাঁকান চার। দলে ফেরা রুবেলের প্রথম ওভার থেকে আসে ১২ রান।
১৯ ওভার শেষে ভারতের স্কোর ১১৭/০। রোহিত শর্মা ৫৮ ও রাহুল ৫৫ রানে ব্যাট করছেন।
শুরুর জুটিতে একশ
প্রায় এক ছন্দে এগিয়ে চলেছে ভারত। নবম ওভারে পঞ্চাশ ছুঁয়েছিল দলটির স্কোর। তিন অঙ্কে রান গেল অষ্টাদশ ওভারে।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ডেভিড ওয়ার্নারের ক্যাচ ছেড়ে চড়া মাশুল দিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার রোহিত শর্মাকে জীবন দিয়ে বিপদ ডেকে এনেছে তারা।
৯ রানে তামিম ইকবালের হাতে জীবন পাওয়ার পর থেকে দাপুটে ব্যাটিং করছেন রোহিত। আস্থার সঙ্গে খেলছেন আরেক ওপেনার লোকেশ রাহুল।
১৮ ওভার শেষে ভারতের স্কোর ১০৫/০। রোহিত ৫৭ ও রাহুল ৪৪ রানে ব্যাট করছেন।
জীবন পেয়ে রোহিতের ফিফটি
শুরুতেই জীবন পাওয়া রোহিত শর্মা ভোগাচ্ছেন বাংলাদেশকে। ছন্দে থাকা ওপেনার দাপুটে ব্যাটিংয়ে তুলে নিয়েছেন ফিফটি।
৪৫ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করেন রোহিত। এই সময় তার ব্যাট থেকে আসে চারটি চার ও তিনটি ছক্কা। বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি তার তৃতীয় ফিফটি, আছে দুটি সেঞ্চুরিও।
মুস্তাফিজুর রহমানের বলে ৯ রানে তামিম ইকবালের হাতে জীবন পান রোহিত। আগের ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই মাঠেই চার রানে জীবন পেয়ে করেছিলেন সেঞ্চুরি।
১৫ ওভার শেষে ভারতের স্কোর ৮৭/০। রোহিত ৫১ ও লোকেশ রাহুল ৩২ রানে ব্যাট করছেন।
পাওয়ার প্লেতে টুর্নামেন্টে নিজেদের সর্বোচ্চ রান ভারতের
বোলারদের ওপর শুরু থেকে চড়াও হয়ে দলকে ভালো শুরু এনে দিয়েছেন রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল। দুই ওপেনারের সৌজন্যে প্রথম পাওয়ার প্লেতে ভারত পেয়েছে টুর্নামেন্টে নিজেদের সর্বোচ্চ রান।
১০ ওভার শেষে ভারতের স্কোর ৬৯/০। ৯ রানে তামিম ইকবালের হাতে জীবন পাওয়া রোহিত শর্মা ৩৮ ও রাহুল ২৮ রানে ব্যাট করছেন। এই সময়ে তাদের ব্যাট থেকে এসেছে আটটি চার ও দুটি ছক্কা।
পাওয়ার প্লেতে ৩ বোলার ব্যবহার করেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাংলাদেশ অধিনায়ক ২ ওভারে দিয়েছেন ২০ রান। ৪ ওভারে ২৫ রান দিয়েছেন মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। একমাত্র সুযোগটি তৈরি করা মুস্তাফিজুর রহমান ৪ ওভারে দিয়েছেন ২৩ রান।
দাপুটে ব্যাটিংয়ে শুরুর জুটিতে ফিফটি
দাপুটে ব্যাটিংয়ে ভারতকে ভালো শুরু এনে দিয়েছেন রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল। নবম ওভারে দলের রান পঞ্চাশে নিয়ে গেছে উদ্বোধনী জুটি।
৫০ বলে পঞ্চাশ স্পর্শ করে রোহিত ও রাহুলের জুটির রান। এই সময়ে তাদের ব্যাট থেকে এসেছে পাঁচটি চার ও দুটি ছক্কা।
৯ ওভার শেষে ভারতের স্কোর ৫৯/০। রোহিত ৩৩ ও রাহুল ২৩ রানে ব্যাট করছেন।
রোহিতকে জীবন দিলেন তামিম
আসরে তিন সেঞ্চুরি করা রোহিত শর্মাকে জীবন দিলেন তামিম ইকবাল। সীমানায় ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারলেন না তিনি।
বোলিংয়ে এসে প্রথম ওভারেই উইকেট পেতে পারতেন মুস্তাফিজুর রহমান। বাঁহাতি এই পেসারকে শর্ট বাউন্ডারি দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে চেয়েছিলেন রোহিত। টাইমিং করতে পারেননি ভারতীয় ওপেনার। ডিপ স্কয়ার লেগ থেকে দৌড়ে বলের নিচে গিয়েছিলেন তামিম। কিন্তু বুক উচ্চতার ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি। সে সময় ৯ রানে ছিলেন রোহিত।
মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনের করা আগের ওভারে ডিপ স্কয়ার লেগে সাকিব আল হাসানের মিস ফিল্ডিংয়ে বাউন্ডারি পেয়েছিলেন লোকেশ রাহুল।
ভারত দলে ফিরলেন ভুবনেশ্বর, কার্তিক
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে যাওয়া দলে দুটি পরিবর্তন এনেছে ভারত। সেই ম্যাচে মন্থর ব্যাটিং করা কেদার যাদব জায়গা হারিয়েছেন একাদশে। তার জায়গায় দলে এসেছেন দিনেশ কার্তিক।
এজবাস্টনের এক পাশের ছোট সীমানার কথা বিবেচনা করে একজন স্পিনার কমিয়ে পেসার বাড়িয়েছে ভারতও। বসানো হয়েছে বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার কুলদীপ যাদবকে, একাদশে ফিরেছেন পেসার ভুবনেশ্বর কুমার।
ভারত: বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, দিনেশ কার্তিক, হার্দিক পান্ডিয়া, রিশাব পান্ত, মহেন্দ্র সিং ধোনি, যুজবেন্দ্র চেহেল, ভুবনেশ্বর কুমার, জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ শামি।
চোটে ছিটকে গেলেন মাহমুদউল্লাহ
কাফ মাসলের চোটে ছিটকে গেলেন মাহমুদউল্লাহ। অভিজ্ঞ এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের জায়গায় দলে এসেছেন সাব্বির রহমান।
এজবাস্টনের এক পাশের ছোট সীমানার কথা বিবেচনা করে একজন স্পিনার কমিয়ে বাড়ানো হয়েছে পেসার। বসানো হয়েছে অফ স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজকে, একাদশে ফিরেছেন পেসার রুবেল হোসেন। বাংলাদেশ খেলছে চার পেসার নিয়ে।
বাংলাদেশ: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাস, সাব্বির রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, রুবেল হোসেন, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুস্তাফিজুর রহমান।
টস হেরে বোলিংয়ে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিং নিয়েছেন বিরাট কোহলি। ব্যবহৃত পিচ ভেঙে যাওয়ার আগে যত বেশি সম্ভব রান চান ভারত অধিনায়ক । বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা জানান, টস জিতলে ব্যাটিং নিতেন তিনিও।
“ভারতের বিপক্ষে প্রথমে বোলিং করাটা খারাপও নয়। কারণ, ওরা লক্ষ্য তাড়া করতে পছন্দ করে। এটা আমাদের বাঁচা-মরার ম্যাচ। প্রত্যেক বিভাগে আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে।”
বাঁচা-মরার ম্যাচে জয়ের আত্মবিশ্বাস
ভারতের বিপক্ষে হারলেই বিশ্বকাপ স্বপ্নের মৃত্যু। জিতলে টিকে থাকবে আশা; সমীকরণ তবুও অনেক কঠিন। এই কঠিন পথে হেঁটেই আনন্দের ঠিকানা খুঁজে নিতে চায় বাংলাদেশ।
বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে ভারতের বিপক্ষে মাশরাফি বিন মুর্তজার দলের ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে তিনটায়।
ভারত এবারের টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট। শক্তি-সামর্থ্যে এগিয়ে অনেকটাই। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমি-ফাইনালে এই মাঠেই ভারতের কাছে উড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। গত বছর এশিয়া কাপে তাদের কাছে বাংলাদেশ হেরেছে দুইবার।
তবে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে অনেক সময়ই বেরিয়ে আসে সেরাটা। মরিয়া পরিস্থিতি অনেক সময় খুঁজে নেয় জয়ের পথ। আশায় বুক বাঁধছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। নিজেদের সেরাটা খেললে ভারতকে হারানো সম্ভব, বিশ্বাস অধিনায়কের।