‘বাজারে সিন্ডিকেট বলে কিছু নেই’- সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ একথা বলার পরদিনই বিপরীত সুর শোনা গেল শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুনের কণ্ঠে।
তিনি বলেছেন, কিছু ব্যবসায়ী ‘সিন্ডিকেট’ করে বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চাইছেন।
পেঁয়াজ সঙ্কট দেখা দেওয়ার পর থেকে বাজারে ব্যবসায়ীদের ‘সিন্ডিকেট’র বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে। সন্দেহ করা হচ্ছে, কিছু ব্যবসায়ী যোগসাজশ করে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে বিপুল লাভ করছেন।
এনিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর কমিটির সভাপতি তোফায়েল বলেছিলেন, “বাজার সিন্ডিকেট বলতে আসলে কিছু নেই। ব্যবসায়ীরা সরকারের বন্ধু। তাদের সহযোগিতা নিয়েই সরকার কাজ করতে চায়।”
কিন্তু সোমবার শিল্পমন্ত্রী হুমায়ুন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত এক কর্মশালায় সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, দেশে এখনও পণ্যের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
“বিভিন্ন সেক্টরে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সিন্ডিকেট করে, বিভিন্ন বাজারকে অশান্ত করে আজকে দেশে অচল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে অবশ্যই আপনারা (সাংবাদিকরা) সরকারকে সতর্ক করবেন। কিছু বিষয় এখনও চলছে।”
বাজারে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে জনগণকে কষ্ট দিয়ে ব্যবসা না করতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান হুমায়ূন।
ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমরা ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে সুদের হার কমানোর জন্য চেষ্টা করছি। প্রধানমন্ত্রী নিজে চেষ্টা করছেন। কিন্তু আপনারা জনগণের জীবনকে দুর্বিষহ করে ব্যবসা করবেন, এটা কিন্তু ঠিক না।”
‘চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উন্নয়ন নীতিমালা ২০১৯ অবহিতকরণ’ শীর্ষক এই কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পমন্ত্রী হুমায়ুন।
শিল্প মন্ত্রণালয় এবং ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) যৌথ আয়োজনের দিনব্যাপী এ কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার।
শিল্পসচিব আবদুল হালিমের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ, ইআরএফ সভাপতি সাইফুল ইসলাম দিলাল, ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।
শিল্পমন্ত্রী হুমায়ুন বলেন, বর্তমান বিশ্বে ২ হাজার ২০০ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বাজার রয়েছে। অথচ বাংলাদেশে এই খাত থেকে মাত্র ১২০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে।
বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, এ খাতে ৬০ শতাংশ মূল্য সংযোজন করার সুযোগ রয়েছে। তাই সরকার ২০২১ সালের মধ্যে চামড়া খাত থেকে ৫০০ কোটি ডলার রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাজ করছে।
তিনি বলেন, “যে হারে চামড়া খাতে আগানোর কথা ছিল, আমরা কিন্তু সে হারে আগাতে পারিনি। আমি ঢাকার লোক। ৫২-৫৪ ঢাকায় অনেক উন্নত মানের বুট, ব্যাগ, জুতো তৈরি করা হত। তখন চীনারা এখানে ব্যবসা করত। আমাদের দেশে তখন অনেক উন্নত মানের জুতো পাওয়া যেত। কিন্তু সেই খাত পৃথিবীতে এখন কোথায় চলে গেছে! আর আমরা কোথায় পড়ে আছি!”
শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, চামড়া শিল্পের কাঁচামালে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও প্রতিবছর বিপুল পরিমাণে চামড়া আমদানি করতে হচ্ছে। ফলে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হচ্ছে।
তিনি দেশি চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বিশ্বমানের চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে বাংলাদেশে উন্নত প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহারের তাগিদ দেন।
শিল্পসচিব হালিম বলেন, চামড়া শিল্পের উন্নয়নে পারস্পরিক দোষারোপের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সরকার, ট্যানারি মালিক, ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে চামড়া শিল্পের উন্নয়নের পথে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলো চিহ্নিত করে এর সমাধানে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।