মহামারীর মধ্যে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটে বেশ কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যে কর ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে, তবে এখনও তার প্রভাব বাজারে দেখা যায়নি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজেট ঘোষণার পরদিন শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় কর ছাড়ের প্রভাব বোঝা যায়নি।
শুক্রবার রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাজেটের পর খুচরায় কোনো পণ্যের দাম কমেনি, আবার বাড়েওনি। তবে বাজেটের আগের দিনই ঢাকার পাইকারি বাজার মৌলভীবাজারে চিনি ও সয়াবিন তেলের দাম কিছুটা কমেছে বলে এই বাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল উত্থাপিত বাজেটে চাল, আটা, আলু, পেঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি স্থানীয় পর্যায়ে সরবরাহের ক্ষেত্রে উৎসে আয়করের হার বিদ্যমান সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ভিত্তিমূল্য নির্বিশেষে ২ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। রসুন ও চিনি আমদানির ওপর ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর কমিয়ে ২ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। অপরদিকে পেঁয়াজের ওপর আমদানি শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও চিনি ব্যবসায়ী আবুল হাশেম শুক্রবার রাতে বলেন, বাজেট ঘোষণার পর শুক্রবার বন্ধের দিন থাকায় নতুন কোনো কেনাকাটা হয়নি। ফলে পণ্যের দাম কতটুকু কমে বা পরিবর্তিত হয় সেটা এখনও বোঝা যাচ্ছে না।
“ব্যবসায়ীরা নিজেদের মজুদ কমানোর সুবিধার্থে চিনি ও সয়াবিন তেলের দাম কিছুটা কমিয়েছেন। বুধবারই এই দুটি পণ্যের দাম কেজিতে অন্তত এক টাকা করে কমেছে।”
ব্যবসায়ীরা জানান, গত এক মাস ধরেই বাজারে চিনির দাম কম। সরকারি চিনির দাম প্রতি কেজি ৬০ টাকা হলেও পাইকারিতে বেসরকারি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি সাড়ে ৫৩ টাকা দরে।
শ্যামবাজারে পেঁয়াজের আমদানিকারক আব্দুল মাজেদ বলেন, বাজেটে পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক আরোপের কথা তিনি শুনেছেন। তবে বাজারে এখনও এর প্রভাব পড়েনি। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে।
“আরও দুই-চার দিন গেলে পেঁয়াজ রসুনের বাজারে বাজেটের প্রভাব বোঝা যাবে। শুক্রবার বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ ২৬ টাকা এবং দেশি পেঁয়াজ ৩৭ টাকা থেকে ৩৮ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে। এতে বাজেটের কোনো প্রভাব নেই।”
উত্তর বাড্ডার মুদি দোকানি আলমগীর বলেন, বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজ ৪০ টাকা থেকে ৪২ টাকায়, ভারতীয় পেঁয়াজ ৩৫ টাকায়, চীনা রসুন ১২০ টাকায়, দেশি রসুন ১০০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে।
“এই দামের মধ্যে বাজেটের কোনো প্রভাব আমি দেখছি না।”
এই বাজারের আরেকজন মুদি দোকানি বিল্লাল হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার তিনি মিল গেইট থেকে ১১৩০ টাকায় আটার বস্তা (৫০ কেজি) কিনেছেন। ময়দা কিনেছেন বস্তা ১৩৮০ টাকায়। ঈদের পর থেকে এই দাম চলছে।
রাজধানীর রামপুরায় মার্জিয়া ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, মহামারীর কারণে মুদি দোকানে এখন বেচাকেনা খুব কমে গেছে। বাজেটের আগে কিংবা বাজেট ঘোষণার পর কোনো পণ্যের দাম বাড়েনি, কমেওনি।
চালের বাজার চড়া
বোরো মওসুমের ধান উঠার পর সরু চালের দাম কিছুটা কমলেও গত একমাস ধরে আবার বাড়তে শুরু করেছে। ধানের দাম বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম বাড়ছে বলে ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন।
বাজারে এখন প্রতি মণ ধানের দাম ৮০০ টাকা থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে রয়েছে, যা গত বছর ৬৫০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকার মধ্যে ছিল।
মিরপুরের চাল ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন হারুন বলেন, নতুন ধান উঠার পর প্রায় ১০ দিনের মতো চালের দাম কমেছিল। গত এক মাস ধরে দাম ‘হু হু করে বাড়ছে’।
“মে মাসের শুরুর দিকে নতুন আটাশ চাল প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) সাড়ে ১৮শ টাকা থেকে ১৯০০ টাকায় বিক্রি করা গেছে। মিনিকেটের দাম নেমেছিল প্রতি বস্তা ২৩০০ টাকায়। এখন আটাশ চাল ২২০০ টাকা এবং মিনিকেট চাল ২৫০০ টাকা থেকে ২৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।”
এর মধ্যে প্রতি বস্তায় প্রায় দুইশ টাকা করে বেড়েছে চালের দাম। তবে সেটা হঠাৎ করে নয়, প্রতি সপ্তাহে ৫০ টাকা করে বাড়তে বাড়তে বর্তমান অবস্থানে পৌঁছেছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন।
মিরপুরে চালের খুচরা বিক্রেতা ঝন্টু জানান, চালের দাম বাড়তি। প্রতি ৫০ কেজির বস্তা পাইজাম চাল ২২০০ টাকা, রশিদ মিনিকেট ২৬০০ টাকা, আটাশ চাল ২৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।