সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, এবারের বাজেট প্রণয়নে অলিগার্ক বা লুটেরা গোষ্ঠীর কথা শুনেছেন অর্থমন্ত্রী, যারা ক্ষমতার প্রশ্রয়ে ফুলেফেঁপে উঠেছে। এই শ্রেণিগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করেই কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আবার এই বিশেষ শ্রেণির কথা চিন্তা করে অর্থনীতিতে সংস্কার ও ব্যাংক খাত নিয়ে তেমন আলোচনা করা হয়নি।
সোমবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নোয়াব এবং জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ আয়োজিত বাজেট আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনার বিষয় ছিল ‘অর্থনীতির চালচিত্র ও প্রস্তাবিত বাজেট ২০২৪-২৫।’
অর্থমন্ত্রী তিন শ্রেণির কথা শুনেছেন উল্লেখ করে হোসেন জিল্লুর বলেন, প্রথমত- আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কথা শুনেছেন। আইএমএফ বলেছে, এবার বেশি উচ্চাকাঙ্ক্ষী বাজেট করা যাবে না। কারণ সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতিও থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত- অলিগার্ক বা লুটেরা গোষ্ঠীর কথা শুনেছেন। তৃতীয়ত- এবারের বাজেট গতানুগতিক বাজেট। এতে মনে হচ্ছে, অর্থমন্ত্রী আমলাদের কথা শুনেছেন। আমলাদের সুযোগ-সুবিধার যেন কমতি না হয়।
তবে কার কথা শোনেননি অর্থমন্ত্রী এমন ব্যাখ্যাও দিয়েছেন হোসেন জিল্লুর। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই দুই শ্রেণি হলো পরিশ্রমী উদ্যোক্তা এবং পরিশ্রমী কর্মী। ক্ষমতার প্রশ্রয়ে ফুলেফেঁপে উঠেছেন, এই শ্রেণিগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করেই কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। আবার এই বিশেষ শ্রেণির কথা চিন্তা করে অর্থনীতিতে সংস্কার ও ব্যাংক খাত নিয়ে তেমন আলোচনা করা হয়নি।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, সামষ্টিক অর্থনীতির ভঙ্গুরতা মোকাবিলায় বাজেটের আকার কিছুটা কমানো হয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ে প্রায় সবাই সংকটে আছে। কিন্তু মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার বাজেটের লক্ষ্যটি কাগুজে লক্ষ্য ছাড়া আর কিছু নয়। মূল্যস্ফীতি কমানোর কোনো কৌশল নেই। কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বাজেটে তেমন বিশ্বাসযোগ্য কর্মকৌশল নেই।
হোসেন জিল্লুর আরও বলেন, ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ স্থবির হয়েছে। এ দেশের বিনিয়োগকারীরা পরিশ্রম করতে রাজি আছেন। কিন্তু আস্থার পরিবেশের অভাব আছে। বাজেটে সৎ করদাতাদের জন্য ৩০ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছে। আর কালোটাকার জন্য ১৫ শতাংশ কর নির্ধারণ করা হয়েছে। মোটরসাইকেলে কর বাড়ানো হয়েছে, কিন্তু ইউএনওদের বিলাসবহুল গাড়ির সুবিধা কমানো হয়নি।
সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও দৈনিক প্রকাশক অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, নোয়াব সভাপতি একে আজাদ এমপি, অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর, সাবেক অর্থসচিব মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, বেসরকারি সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও বণিক বার্তার সম্পাদক দেওয়ান হানিফ মাহমুদ।