বাধা না থাকায় আজ বড় জমায়েতের প্রত্যাশা বিএনপির

image-619325-1669410105

কুমিল্লা বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। গণসমাবেশ ঘিরে নেই পরিবহণ ধর্মঘট। রাজনৈতিক উত্তেজনাও নেই তেমন। অন্যান্য বিভাগীয় সমাবেশের মতো পথে পথে বাধা দেওয়ার তেমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তাই কুমিল্লার সমাবেশে বিএনপি কী দাবি তুলবে বা দলীয় নির্দেশনা কী থাকবে তা ছাপিয়ে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে কেন এবার ধর্মঘট ডাকা হয়নি।

বাধাহীন এই সমাবেশে লোক সমাগম কেমন হয় সেদিকে দৃষ্টি থাকবে সবার। বাধা না থাকলেও সমাবেশের একদিন আগে শুক্রবার আশপাশের জেলার নেতা-কর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেছেন। রাতে মাঠে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা যায়।

আজ শনিবার কুমিল্লার টাউন হল মাঠে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিএনপির অষ্টম বিভাগীয় গণসমাবেশ। ধর্মঘট বা বড় ধরনের বাধা না থাকলেও সমাবেশ ঘিরে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বিষয়টিও আলোচনায় আছে। কুমিল্লার দুই প্রভাবশালী নেতা আমিনুর রশীদ ইয়াসিন এবং মনিরুল হক সাক্কুর কোন্দল সমাবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে কি-না তা নিয়ে কিঞ্চিত সংশয় রয়েছে।

অন্য সমাবেশের মতো ধর্মঘট ডাকা হতে পারে এমন শঙ্কা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ধর্মঘটের ঘোষণা না আসায় সাধারণ জনগণ স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। গণসমাবেশ ঘিরে মহানগরে তেমন রাজনৈতিক উত্তেজনাও নেই। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। বৃহস্পতিবার কুমিল্লা টাউন হল মাঠে জেলা বইমেলার সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুমিল্লা-৬ (সদর) আসনের সংসদ-সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘আপনারা মিটিং করেন অসুবিধা নেই, ফাঁকা মাঠ দিয়ে দিলাম। কিন্তু ভুলেও শান্তির কুমিল্লায় অশান্তি করার চেষ্টা করবেন না।’

গণসমাবশের প্রস্তুতি ও সফলতা প্রসঙ্গে বিভাগীয় সমাবেশের দলনেতা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, ধর্মঘট ডাকা না হলেও সমাবেশে আসতে নেতাকর্মীদের নানাভাবে বাধা দেওয়া হচ্ছে। বাধা উপেক্ষা করেই আজ কুমিল্লায় স্মরণকালের বৃহৎ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

ধর্মঘট না দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। এক দিন আগেই হাজার হাজার নেতাকর্মী সমাবেশ মাঠে উপস্থিত হয়েছেন।

১২ অক্টোবর চট্টগ্রামের গণসমাবেশের মাধ্যমে বিএনপির বিভাগীয় এই কর্মসূচি শুরু হয়। চট্টগ্রামের সমাবেশে পথে পথে বাধা দেওয়া হয়। এরপর ময়মনসিংহ সমাবেশে অঘোষিত ধর্মঘট ডেকে জনসমাগম ঠেকানোর চেষ্টা হয়। খুলনা, রংপুর, বরিশাল, ফরিদপুর ও সিলেটের সমাবেশের বাধার তীব্রতা আরও বাড়ে। তবে কুমিল্লায় সমাবেশে ভিন্ন চিত্র দেখা গেল।

গণসমাবেশের এক দিন আগেই নেতাকর্মী ও সমর্থকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা নগরী। সমাবেশে কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে কুমিল্লা সাংগঠনিক বিভাগের অধীনে বিভিন্ন সংসদীয় আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা পৃথক পৃথক শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।

সরেজমিন সমাবেশস্থলে দেখা যায়, নিজেদের জনসমর্থন জাহির করতে মাঠের চতুর পাশে নেতারা দুদিন আগেই ব্যানার ফেস্টুন টানিয়ে কর্মী-সমর্থক দ্বারা জায়গা দখল করে রেখেছন। তাছাড়া হাজার হাজার কর্মী সমর্থকের সমাগম ঘটিয়ে কুমিল্লাকে বিএনপির ঘাঁটি হিসাবে প্রমাণ করতে সব প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন এ সাংগঠনিক বিভাগের নেতারা। কে কার চেয়ে বেশি লোকের সমাগম ঘটাতে পারেন সে লক্ষ্যে চলছে প্রতিযোগিতা। নেপথ্যে সমাবেশ সফলের চেয়ে নিজেদের শোডাউনই প্রধান লক্ষ্য।

জেলার পাশাপাশি কুমিল্লা দক্ষিণ এবং মহানগর নেতাদের রয়েছে আলাদা আলাদা শোডাউন প্রস্তুতি। মাঠের বেশির ভাগ তাদের দখলে রয়েছে। তাছাড়া বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা এবং কুসিকের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এবং নিজাম উদ্দিন কায়সারেরও পৃথক শোডাউন রয়েছে। বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে হাইকমান্ডের নজর কাড়ার চেষ্টা করছে। তবে এ দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে মাঠে বিশৃঙ্খলারও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জানতে চাইলে কুমিল্লা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু বলেন, আমরা স্বাগতিক জেলা, তাই আমরা আলাদা কোনো শোডাউনের প্রস্তুতি নেইনি, আমরা আগত নেতাকর্মী সমর্থকদের থাকা খাওয়া এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্যসহ সার্বিক নির্দেশনা শোনার ব্যবস্থা করেছি। আমরা মূলত ভলেনটিয়ারের কাজ করছি।

কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবং সাবেক সংসদ-সদস্য হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াছিন বলেন, লক্ষাধিক নেতাকর্মী-সমর্থকের সমাগম ঘটবে, তাই টাউন হল মাঠে জায়গা হবে না, আমরা নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে মাইক সেটিং করেছি, নগরীর সবকটি পয়েন্ট থেকেই কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্য শোনা যাবে। তিনি বলেন, যারা সমাবেশস্থলে কর্মী সমর্থক দ্বারা জায়গা দখল করেছেন তারা মৌসুমি রাজনীতিবিদ, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ তাদের বিষয়ে অবগত আছেন। আমাদের টার্গেট স্বাগতিক জেলা হিসাবে আমরা যেকোনো মূল্যে সমাবেশ সফল এবং সার্থক করব।

গণসমাবেশে রেকর্ড লোকসমাগম হবে-ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন : বাধা সত্ত্বেও গণসমাবেশে রেকর্ড লোকসমাগম হবে বলে দাবি করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। শুক্রবার নগরীর একটি রেস্তোরাঁয় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ বিষয়ে অবহিত করতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

কুমিল্লায় এ অবৈধ সরকারকে লাল কার্ড দেখানো হবে মন্তব্য করে ড. মোশাররফ বলেন, তারা (মন্ত্রীরা) বলছেন খেলা হবে, আমরা রাজনীতি করি, খেলা হবে তো গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য। তিনি বলেন, সমাবেশে লোক সমাগম ঠেকাতে কুমিল্লা, চাঁদপুর ও ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পুলিশ সরকারি দলের হেলমেট বাহিনীর হামলার শিকার হচ্ছেন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে যে খবর আছে এরই মধ্যে নগরী ও এর আশপাশের এলাকায় লাখো নেতাকর্মী চলে এসেছেন। এ সমাবেশ হবে কুমিল্লায় স্মরণকালের বড় সমাবেশ। সংবাদ সম্মলনে আরও বক্তব্য রাখেন, গণসমাবেশ প্রস্তুতি কমিটির দলনেতা ও ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিন, জেলা বিএনপির সচিব হাজী মো: জসিম উদ্দিন, বিএনপি নেতা কাউসার জামান বাপ্পী, ভিপি জসিম উদ্দিন, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক উৎবাতুল বারী আবু, সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু প্রমুখ।

কুমিল্লায় টাউন হল মাঠে নেতাকর্মীদের নিয়ে সাক্কুর পৃথক জুমআর জামাত : কুমিল্লা টাউন হল মাঠে শুক্রবার পৃথক জামাতে জুমার নামাজ আদায় করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। একই মাঠে ১০ মিনিটের ব্যবধানে দুটি জামাত হয়েছে। মাঠের পশ্চিম পাশের এক জামাতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিনসহ দলের জেলা, মহানগরসহ চাঁদপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আসা নেতাকর্মীরা অংশ নেন। মাঠের পূর্বপাশে প্যান্ডেলের নিচে অপর জামাতে অংশ নেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মনিরুল হক সাক্কু।

একই মাঠে কেন পৃথক জামাতে নামাজ আদায় করলেন এ নিয়ে চলে নানা গুঞ্জন। কেউ কেউ বলেছেন সাবেক মেয়র সাক্কু সমাবেশ সফল করতে শুরু থেকে কাজ করছেন, নেতাকর্মীদের থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। তিনি যেহেতু দল থেকে বহিষ্কৃত, তাই ইচ্ছে করেই দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নামাজ পড়তে আসেননি।

তবে মনিরুল হক সাক্কু এ বিষয়ে বলেন, তাদের সঙ্গে নামাজ পড়তে আমাকে কেউ বলেনি। আমি আগেই এখানে নামাজের ব্যবস্থা করেছিলাম। যেহেতু আমি বহিষ্কৃত, এজন্য আমি আলাদাভাবে প্রচারণা চালাচ্ছি।

অন্য দিকে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া বলেন, নামাজ তো সবার জন্য উন্মুক্ত, এখানে আসতে সাবেক মেয়র সাক্কুকে তো কেউ নিষেধ করেনি, তিনি কেন আমাদের সঙ্গে না এসে পৃথক জামাতে নামাজ আদায় করেছেন তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। নামাজের সঙ্গে রাজনীতি টেনে আনা ঠিক নয়।

Pin It