টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে সড়ক ও বাঁধে আশ্রয় নেওয়া অসহায় অনেক পরিবারে ঈদের দিনেও চুলায় আগুন জ্বলেনি। রান্না হয়নি কোন বিশেষ খাবার। ফলে ঈদ কি সেটাই ভুলে গেছে তারা। সরেজমিনে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
জানা গেছে, জেলার কয়েকটি উপজেলার বানভাসি অসহায় মানুষদের মাঝে ঈদের আমেজ নেই। ঈদের দিনেও বাড়ি-ঘর ফেলে বাঁধের ওপর খোলা আকাশের নিচে হাজার হাজার মানুষ অবস্থান করছে। ঈদের দিনে বিশেষ রান্না হয়নি এসব বানভাসি মানুষের ঘরে। ছেলে মেয়েকেও এক টুকরো কাপড় কিনে দিতে পারেনি অনেকেই। কারও আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি থেকে খাবার পাঠালেও বেশিরভাগ মানুষের ঘরে ঈদের দিনেও চুলা জ্বলেনি।
উপজেলার খানুরবাড়ির বঙ্গবন্ধু সেতু রক্ষা গাইড বাঁধের ওপর আশ্রয় নেওয়া নুর নাহার বলেন, ‘ঈদে সন্তানদের জামা-কাপড় দিতে পারিনি। আবার কোরবানি দিমু কেমনে। করোনা আর বন্যায় স্বামীও বেকার হয়ে রয়েছে অনেকদিন ধরে। সকালে অন্যের বাড়ির সেমাই এনে ছেলে মেয়েদের দিয়েছিলাম। পাশে অনেকেই কোরবানির গরু কাটছে সেটা দেখে সন্তানরা এসে মাংস খাবে বলে জানায়। কিন্তু সেই সমর্থ্যতো নেই তাদের মাংস খাওয়াতে পারবো। ঘরে বন্যার পানি উঠেছে মাসখানেক হলো। শিশু সন্তানরা পানিতে পড়বে এমন ভয়ে বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিয়েছি সড়কের ওপর।
আরও পড়ুন: তিতাসে ঈদের দিন পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু
একই বাঁধের ওপর আশ্রয় নেওয়া মহিরন বেওয়া (৮০) বলেন, ‘এক ছেলে ও ছেলের বউ বাঁধের নিচে সরকারি জমিতে ঘর তুলে থাকছি। তাতেও পানি উঠে পড়েছে। ছেলেটা দিনমুজুরের কাজ করে যা উপার্জন করে তাতে তাদের সংসারই চলে না। ঈদের দিনে ছেলের বউ ঈদের নাস্তা দিয়েছিল। সবাই ঈদের দিনে দুপুরের পর গোস্ত খাবে। কিন্তু আমরা অসহায় মানুষ সেমাই কিনতেই টাকা পাই না। কেউ এখন পর্যন্ত কোন ত্রাণ সহায়তা করেনি। অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি কিন্তু ঈদের আগে কিছুই পেলাম না।’
রুবিয়া বেওয়া নামের আরেক নারী বলেন, ‘একটা ত্রাণের কার্ড পাইছিলাম, কিন্তু সেই যাওয়ার আগেই ত্রাণ শেষ হয়ে গিয়েছি। তাই কার্ডটাই বাড়িতে যত্ন করে রেখে দিছি, যে কার্ডটা দিয়েছি তাকে ফেরত দেওয়ার জন্য।’
ভুঞাপুর-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়কের ওপর আশ্রয় নেওয়া সুর্য্য বানু বলেন, ‘সড়কের ওপর পলিথিন তুলে থাকছি। রাতে অনেক ভয় করে কখন গাড়ি তাম্বুর ওপর উঠে পড়ে। সকালে নাস্তা করতে পারলেও দুপুরে কি খাবো জানি না। ঈদে কোন ত্রাণ সহায়তা পায়নি। অনেকেই পেয়েছে ত্রাণ হিসেবে কিছু চাল পেয়েছে।’
ভুঞাপুর-বঙ্গবন্ধু সেতু সড়ক ও বাঁধের ওপর আশ্রয় নেওয়া বহু বানভাসি মানুষই অভিযোগ করেছে তারা ত্রাণ সহায়তা পায়নি। বাঁধ ও সড়কের ওপর আশ্রয় নেওয়া মানুষজন মানবেতর জীবন যাপন করছে। এখানকার মানুষের খাবারেরই নিশ্চয়তা নেই, ঈদের আনন্দতো দূরের কথা। অনেকের বাড়িতে সকালের নাস্তার জন্য চুলা জ্বললেও দুপুরে রান্না করতে দেখা যায়নি।