বঙ্গবন্ধু ও সংবিধান অবমাননার অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী এবং যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের গ্রেপ্তার দাবিতে ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘিরে মানববন্ধন করবে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবীদের ৬০টি সংগঠন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে মঙ্গলবার বেলা ৩টায় এই কর্মসূচি শুরু হবে।
নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির সোমবার বলেন, “মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য এবং সংবিধানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির ধৃষ্টতাপূর্ণ হুমকির প্রতিবাদে স্বাধীনতা চত্বর (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঘিরে এক মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
“মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, ধর্মীয়, জাতিগত, শিশু, কিশোর, ছাত্র, যুব, নারী সংগঠন এবং রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের পরিবারের ৬০টি সংগঠন এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নেবে।”
ঢাকায় মৎস্য ভবন থেকে শুরু করে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, শাহবাগ ও টিএসসি হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে এই কর্মসূচি হবে। একই সময়ে সারা দেশে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে।
শাহরিয়ার কবির বলেন, “এই মানববন্ধন ও সমাবেশের মূল দাবি হচ্ছে- অবিলম্বে জাতির পিতা এবং বাংলাদেশের সংবিধান অবমাননাকারী হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী ও নতুন যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে গ্রেপ্তার করতে হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে জামায়াত-হেফাজতের মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক, সন্ত্রাসী রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।”
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির এ কর্মসূচিতে অংশ নেবে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম , সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা অ্যাসোসিয়েশন, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, প্রজন্ম ’৭১, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, ইতিহাস সম্মিলনী, জাতীয় কবিতা পরিষদ, সম্প্রীতি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন, জাতীয় কবিতা পরিষদ, বাংলাদেশ আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ পথনাটক পরিষদ, বাংলাদেশ গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ, বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা, বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু গবেষণা সংসদ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন, বাংলাদেশ যুব মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ (জাসদ), জাতীয় যুব জোট, ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ কেন্দ্র, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলন, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ, ’৭২-এর সংবিধান পুনঃপ্রবর্তন জাতীয় কমিটি, কেন্দ্রীয় খেলাঘর, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্র, মুক্তিযুদ্ধ সংহতি পরিষদ, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ), বাংলাদেশ ফার্মাসিস্ট ফোরাম, গৌরব ’৭১, অপরাজেয় বাংলা, মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মৃতি পাঠাগার, কর্মজীবী নারী, জাতীয় নারী জোট, নারী মুক্তি সংসদ, বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ, শেখ রাসেল ফাউন্ডেশন ইউএসএ (বাংলাদেশ চাপ্টার), জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ মোর্চা, সেক্যুলার ইউনিটি বাংলাদেশ, ইউথ ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, আওয়ামী প্রজন্ম লীগ, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, ঘাসফুল শিশু কিশোর সংগঠন, বাংলাদেশ মানবাধিকার আন্দোলন, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, জঙ্গিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলন বাংলাদেশ।
শুক্রবার চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এক ধর্মীয় সভায় বক্তব্যে ভাস্কর্য বসালে তা ‘টেনে হিঁচড়ে’ ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী।শুক্রবার চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এক ধর্মীয় সভায় বক্তব্যে ভাস্কর্য বসালে তা ‘টেনে হিঁচড়ে’ ফেলে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী।মুজিববর্ষে ঢাকার ধোলাইড়পাড়ে বঙ্গবন্ধুর যে ভাস্কর্য সরকার স্থাপন করছে, তার বিরোধিতায় নেমেছে হেফাজতে ইসলামসহ ইসলামী কয়েকটি দল। এদের মধ্যে হেফাজতের আমির জুনায়েদ বাবুবনগরী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মামুনুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করিম বেশ সরব।
সম্প্রতি রাজধানীর ধোলাইরপাড়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করে সে কাজ অবিলম্বে বন্ধের দাবি তোলেন হেফাজত নেতা মামুনুল হক।
এরপর গত ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের এক অনুষ্ঠানে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী বলেছেন, যে কোনো দল ভাস্কর্য বসালে তা ‘টেনে হিঁচড়ে’ ফেলে দেওয়া হবে।
হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকসহ বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গত ২৮ নভেম্বর রাজধানীর শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেছিল মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ নামে একটি সংগঠন।
বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি ইসলামী সংগঠনের নেতাদের প্রতিক্রিয়াকে ‘ভাস্কর্য বিরোধী ধর্মীয় উন্মাদনা’ আখ্যা দিয়ে তা কঠোর হাতে দমন এবং রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক ছাত্রনেতারা।
নতুন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, ভাস্কর্য আর মূর্তি- দুটো এক জিনিস নয়, বিষয়টি নিয়ে ‘ভুল বোঝাবুঝি’ হচ্ছে।
আর আওয়ামী লীগের জোটসঙ্গীরা বলছেন, ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে সরকার ‘আশকারা’ দেওয়ায় তারা এখন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যও অপসারণের দাবি তোলার সাহস দেখাচ্ছে।