আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে বিকল্প বাম গণতান্ত্রিক শক্তির ‘উত্থান’ ঘটাতে দেশের সকল বাম, প্রগতিশীল ও প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল ও শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়া ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)।
শুক্রবার ঢাকার ‘মহানগর নাট্য মঞ্চে’ সিপিবির দ্বাদশ কংগ্রেসে এই আহ্বান জানান দলের নেতারা।
প্রথম অধিবেশনে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, “দেশে এখন লুটপাটের রাজত্ব বহাল আছে। শোষণ-বৈষম্য ও অনাচার ক্রমাগত বেড়ে চলছে।
“মানুষ আজ তাদের ভোট দানের ন্যূনতম অধিকারটুকু হারিয়েছে। শাসক দল আওয়ামী লীগ জনসমর্থন হারিয়ে প্রহসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ছলেবলে কৌশলে ক্ষমতায় আসীন আছে।”
বিরোধী দল হিসাবে ভূমিকা পালনে বিএনপি ‘চরম ব্যর্থ’ হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তারা যুদ্ধাপরাধী জামায়াতকে জোটসঙ্গী করেছে। ক্ষমতায় থাকাকালে তাদের দুর্নীতি লোটপাট দুঃশাসনের কথাও মানুষ ভোলেনি।
“আজ রাজনীতিতে একটি বিপজ্জনক শূন্যতা বিরাজ করছে। এই শূন্যতা পূরণে দেশের বামপন্থি ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তির সঙ্গে ঐক্য গড়ে তুলতে হবে এবং জনগণের সক্রিয় সমর্থনে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য অর্থপূর্ণ ও কার্যকর প্রস্তুতি নিতে হবে। আমরা এর জন্য দেশবাসীর সমর্থন ও সহযোগিতা চাই।”
বর্তমান আওয়ামী ‘দুঃশাসনের’ অবসান এবং ‘লুটপাটতন্ত্র, গণতন্ত্রহীনতা, সাম্প্রদায়িকতা এবং সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্যের’ ব্যবস্থা বদলাতে হবে মন্তব্য করেন সেলিম।
“এই বুর্জোয়া দলকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা দ্বি-দলীয় কাঠামোর বাইরে বিকল্প বাম-গণতান্ত্রিক শক্তির উত্থান ঘটাতে হবে। সে কাজে আমাদের পার্টি তার উদ্যোগী ও অগ্রণী ভূমিকা আরও জোরদার করবে।”
সিপিবি সভাপতি বলেন, “আসুন বামপন্থিরা ঐক্যবদ্ধ হই, পরিবর্তনের জন্য বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলি। সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে সর্বোচ্চ আন্তরিকতা নিয়ে দ্বি-দলীয় ধারার বাইরে দেশের সকল বাম, প্রগতিশীল ও প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, ব্যক্তি ও শক্তি ঐক্যবদ্ধ হই। এটাই আজকে আমাদের কংগ্রেস থেকে আমাদের আহ্বান।”
সকাল ১০টায় জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন ও গণসংগীতের মধ্য দিয়ে সিপিবির দ্বাদশ কংগ্রেসের উদ্বোধন করা হয়।
সিপিবির সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান খান বলেন, দেশে এখন করোনাভাইরাসের চেয়ে রাজনীতিতে ভয়াবহ সংকট চলছে।
“সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক নানা সংকটের মধ্যে ভোটের সংকট ও নির্বাচন ব্যবস্থার সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দেশের সমাজের নির্বাচন ব্যবস্থায় ঘুনে ধরেছে।”
“আমরা ভোট পেয়ে সেই ভোটকে কার্যকর করতে মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। আজকে সেই ভোটের স্বাধীনতাকে ধ্বংস করা হয়েছে। সেই স্বাধীনতাকে ধ্বংস করতে নানা ষড়যন্ত করা হয়েছে। আর এর জন্য অন্যান্য দলকে সঙ্গে নিয়ে লড়াই করেছে কমিউনিস্ট পার্টি,” বলেন তিনি।
মনজুরুল বলেন, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাদের জনগণের প্রতি এতই দরদ যে, জনগণকে আর ভোট দিতে আসতে হয় না। আওয়ামী লীগ দেশের জনগণ ও তার দলের উপরে আস্থা হারিয়ে প্রশাসনের শানসের উপরে দিয়ে ক্ষমতায় আছে।
“আবারও দেশে সিপাহী বিপ্লবের ষড়যন্ত্র দেশে-বিদেশে চলছে। সেই লড়াইয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিকে এগিয়ে আসতে হবে।”
কংগ্রেসে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সভাপতি শহীদ উল্লাহ চৌধুরী বলেন, “আমাদের কংগ্রেস থেকে দৃঢ় ঐক্য নিয়ে সংগ্রামের ধারাটা আমরা অব্যাহ রাখতে পারি নাই। আমরা যদি শ্রমিক শ্রেণির লোকদের সম্পৃক্ত করতে না পারি তাহলে লুটেরা শ্রেণি তাদের নিয়ে যাবে।
“আমাদের এই কংগ্রেসে দেশের মেহনতি মানুষদের, শ্রমিক শ্রেণির মানুষেদের সম্পৃক্ত করে সবাইকে ঐক্যব্ধভাবে লুটেরাদের বিরুদ্ধে নামতে হবে।”
কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান লক্ষ্মী চক্রবর্তী ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহ আলম প্রথম অধিবেশনে বক্তব্য দেন।