রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের কেনাকাটায় ‘দুর্নীতি’ নিয়ে আলোচিত প্রকৌশলী মাসুদুল আলম কখনই ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না বলে দাবি করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
দেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য নির্মাণাধীন আবাসন প্রকল্পের আসবাবসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজে ‘অস্বাভাবিক’ ব্যয়ের অভিযোগ ওঠার পর প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলমকে প্রত্যাহার করা হয়। ওই ঘটনা তদন্তে দুটি কমিটিও কাজ করছে।
সেখানে একটি বালিশের পেছনে ৬ হাজার ৭১৭ টাকা ব্যয় দেখানোর খবর গণমাধ্যমে আসায় এটা ‘বালিশ দুর্নীতি’ হিসেবে পরিচয় পেয়েছে।
গত সোমবার জাতীয় সংসদে এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওই ঘটনায় যিনি দায়িত্বে ছিলেন, তার কিছু পরিচয় আমরা পেয়েছি। এক সময় তিনি বুয়েটে ছাত্রদলের নির্বাচিত ভিপিও নাকি ছিলেন।”
শনিবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর সাংবাদিকদের কাছে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিবাদ জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, “সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী সংসদে রূপপুর পারমানবিক প্রকল্পের একজন প্রকৌশলী মাসুদুল আলম সম্পর্কে একটা বক্তব্য রেখেছেন। সেই বক্তব্যে তিনি বলেছেন, যে ওই প্রকৌশলী ছাত্রদলের বুয়েটের ভিপি ছিলেন। এটা সর্বেবই মিথ্যা, একেবারে একটা অসত্য কথা তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন। একজন প্রধানমন্ত্রী যখন এ করম অসত্য বক্তব্য দেন সেটা অপ্রত্যাশিত ও গ্রহণযোগ্য নয়।”
মির্জা ফখরুল বলেন, “প্রকতপক্ষে প্রকৌশলী মাসুদুল আলম বুয়েটের ছাত্র নন, তিনি খুলনার প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়-কুয়েটের ছাত্র। আমরা তার সব তথ্য সংগ্রহ করেছি। সে কুয়েটের এ কে এম ফজলুল হক হলের ২৬ নম্বর রুমে থাকত। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র তার রোল নম্বর ৯২১৩৫।
“সে কোনো দিনই ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। সম্ভবত সে বাম কোনো ছাত্র সংগঠনের সাথে ছিল। সে এখন বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলীর সাথে জড়িত। এ রকম একটি অসত্য তথ্য সংসদকে দেওয়া-এটা সংসদের বিরুদ্ধে। আমরা মনে করি এ রকম বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর জন্য কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এটা অনভিপ্রেত।”
সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজের ভাগ্নেকে অপহরণের নিন্দা জানিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। সোহেল তাজের ভাগ্নে উদ্ধার হলেও বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী, পারভেজ আলম হীরু, চৌধুরী আলমসহ দীর্ঘ দিন ধরে নিখোঁজ নেতা-কর্মীদের কোনো তথ্য সরকার না দিতে পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব।
খালেদার মুক্তি আন্দোলন
খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলন বেগবান করতে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে বিভাগীয় পর্যায়ে কর্মসূচি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম।
মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে স্থায়ী কমিটির সভায় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন আরও বেগবান করার জন্য কর্মসূচি নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই কর্মসূচি হচ্ছে, আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে দেশের সকল বিভাগীয় শহরে দেশনেত্রীর মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
“এই কর্মসূচিগুলোতে জাতীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।”
এই চার সপ্তাহের মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে দল এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
কর্মসূচির ধরন কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “বিভাগগুলোতে গণতান্ত্রিক যেসব কর্মসূচি আছে যেমন বিক্ষোভ সমাবেশ, সমাবেশ ইত্যাদি হবে।”
ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধদের প্রতি আহ্বান
ছাত্রদলের বিক্ষুব্ধদের প্রতিবাদী কর্মসূচি থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “ছাত্রদলের ব্যাপারে দীর্ঘ আলোচনা করে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অল স্টেক হোল্ডারদের সাথে কথা বলেছেন। অর্থাৎ ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে যারা অতীতে জড়িত ছিলেন, নেতা ছিলেন, বর্তমানে যারা নেতা আছেন এবং যারা এখন বিক্ষোভ করছে, আন্দোলন করছে সকলের সঙ্গে উনি কথা বলেছেন। কথা বলার পরেই দল থেকে একটা সিদ্ধান্ত তাদের দেওয়া হয়েছে। এখন যে আন্দোলন হচ্ছে, আমরা মনে করি যে, এটা খুব একটা যুক্তিসঙ্গত আন্দোলন নয়।
“তাদের (বিক্ষুব্ধরা) এ কথাও বলা হয়েছে যে, তারা দলের প্রতি অত্যন্ত নিবেদিত প্রাণ কর্মী-নেতা, তারা অন্যান্য অঙ্গ সংগঠনে যুক্ত হতে পারেন। আমার মনে হয় তাদের উচিত হবে, এই বিষয়টা বিবেচনায় নিয়ে এই আন্দোলনটা বন্ধ করে দিয়ে প্রয়োজনে তারা কথা বলতে পারে। কিন্তু আজকে যেটা তারা করেছে এটা ভীষণভাবে নিন্দনীয়। এটাকে কোনো মতেই গ্রহণ করা যায় না।”
আন্দোলন প্রত্যাহার শান্তিপূর্ণ জায়গায় ফিরে আসতে ছাত্রদল নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিকালে স্থায়ী কমিটির এই বৈঠক হয়। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন থেকে স্কাইপেতে এই বৈঠকে যুক্ত ছিলেন।
বৈঠকে মহাসচিব ছাড়াও খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, মাহবুবুর রহমান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নবনির্বাচিত সদস্য সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ছিলেন।
সকালে শেরে বাংলা নগরে নবনির্বাচিত স্থায়ী কমিটির দুই সদস্যকে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
গত বুধবার সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা করা হয়। এর আগে তারা দুজনই দলের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। তাদের অন্তর্ভুক্তিতে ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে এখন সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ জনে।