দীর্ঘ দুই মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর রাজধানীতে গণপরিবহন চালুর তিন দিন না যেতেই চরম বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি, নিয়মকানুন কিছুই মানা হচ্ছে না। বাসে যাত্রীদের কাছ থেকে ইচ্ছেমতো অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। অর্ধেক যাত্রী বহনের কথা থাকলেও সব সিটের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে যাত্রী নিতেও দেখা গেছে। ফলে গণপরিবহনের ৬০ শতাংশ অতিরিক্ত ভাড়া এখন গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে। পরিবহন মালিক, চালক ও শ্রমিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন যাত্রীরা।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রথম দুই-এক দিন রাস্তায় গাড়ির চাপ কম থাকলেও গতকাল অফিস আদালতের উদ্দেশ্যে বের হওয়া মানুষকে যানজটে পড়তে হয়েছে। বিজয়সরণি, ফার্মগেট, কাওরান বাজারে দুপুরে লম্বা যানজট দেখা গেছে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাসে ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। সরকার ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করলেও কোথাও ১০০ শতাংশ বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা। ফার্মগেটে কথা হয় বেসরকারি প্রাইম ব্যাংকের কর্মচারী আহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, মিরপুর থেকে কাওরান বাজারের ভাড়া ছিল ১৫ টাকা। অথচ আজ তিনি এসেছেন ৩০ টাকা দিয়ে। শাহবাগ মোড়ে রফিকুল ইসলাম জানালেন, মোহাম্মদপুর থেকে গুলিস্তানের ভাড়া ছিল ১৮ টাকা। আজ তার কাছ থেকে ৩৫ টাকা নিয়েছে। অধিকাংশ যাত্রীই দ্বিগুণ ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ করেছেন।
অন্যদিকে কিছু বাসে ভেতরে অর্ধেক যাত্রী নিতে দেখা গেলেও অধিকাংশ বাসই ছিল যাত্রীতে ঠাসা। হেলপারদের অধিকাংশের হাতেই কোনো স্যানিটাইজার দেখা যায়নি। আব্দুর রহমান নামে মিডওয়ে পরিবহনের এক হেলপার জানান, মালিক তাদের স্যানিটাইজার দেয়নি। শুধু বেসরকারি গণপরিবহন নয়, সরকারি বিআরটিসি বাসেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অনেক যাত্রী অভিযোগ করেছেন। কাওরান বাজারে একটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কর্মকর্তা রাফাত হোসেন বললেন, বিআরটিসি বাসে বনানী থেকে কাওরান বাজার এসেছেন তিনি। আগে এই ভাড়া ছিল ১০ টাকা। আজ তার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়েছে। অথচ সরকারের বর্ধিত ভাড়ায় তার কাছ থেকে ১৬ টাকা নেওয়ার কথা।
বিমানের সব ফ্লাইট বাতিল : সীমিত পরিসরে অভ্যন্তরীণ তিনটি রুটে বিমান চলাচল শুরু হলেও যাত্রী একেবারেই পাচ্ছে না বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। এ কারণে গতকাল বুধবার ও আজ বৃহস্পতিবার বিমানের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উপ-মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তিনি বলেন, যাত্রী না থাকার কারণে বিমান অভ্যন্তরীণ রুটের সব ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এ নিয়ে গত ১ জুন থেকে ৪ জুন পর্যন্ত ৪৬টি ফ্লাইট বাতিল করল বাংলাদেশ বিমান। অন্যদিকে যাত্রী কম থাকার কারণে ফ্লাইট সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে বেসরকারি বিমান সংস্থা নভোএয়ার। তবে ইউএস বাংলা তাদের ফ্লাইট শিডিউল আগের মতোই ২০টি রেখেছে।
আরো ৯ জোড়া ট্রেন চালু : ৩১ মে থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। প্রথম দিন আট জোড়া ট্রেন চলে। গতকাল আরো ১১ জোড়া ট্রেন নামার কথা ছিল। কিন্তু কুড়িগ্রাম ও বেনাপোল এক্সপ্রেসের সিডিউল ডেট না থাকায় ৯ জোড়া ট্রেন চলাচল শুরু করে। সব মিলিয়ে এখন ১৭ জোড়া ট্রেন চলছে। আজ বৃহস্পতিবার থেকে আরো দুই জোড়া ট্রেন যোগ হবে। তবে ট্রেনে যাতায়াত করা যাত্রীদের তেমন কোনো অভিযোগ নেই। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সবাই চলাচল করছেন।