টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, সারা দেশে বাড়ি বাড়ি ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়াকেই মূল চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন তিনি।
এ লক্ষ্যে এই বছরই দেশের সবগুলো ইউনিয়নকে ফাইবার অপটিক কেবলে যুক্ত করার পাশাপাশি দুর্গম এলাকাগুলোকে স্যাটেলাইট সংযোগের অধীনে আনার পরিকল্পনা জানিয়েছেন তিনি।
মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর সম্প্রতি সঙ্গে আলাপচারিতায় টেলিযোগাযোগ খাতের আগামী কর্মপরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরেন মোস্তাফা জব্বার।
বিজয় বাংলা কীবোর্ড চালু করা আনন্দ কম্পিউটার্সের উদ্যোক্তা মোস্তাফা জব্বার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অভিযাত্রার সঙ্গে আছেন শুরু থেকেই।
দেশের ৭৭২টি ইউনিয়ন ছাড়া সবগুলোতে ফাইবার অপটিক কেবল সংযোগ চলে গেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “বাকি ৭৭২টি ইউনিয়নে সংযোগ পৌঁছাতে প্রজেক্ট চলমান আছে, ২০১৯ সালে তা হয়ে যাবে। দুর্গম এলাকায় সাউথ এশিয়া স্যাটেলাইট কাজে লাগানো হবে।”
মোবাইল সংযোগ, ফিক্সড ব্রডব্যান্ড এবং স্যাটেলাইট ব্যবহারের ফলে ‘২০১৯ সালের মধ্যে দেশে কানেকটিভিটি ছাড়া কোনো এলাকা থাকবে না’ বলে আশার কথা শোনান মোস্তাফা জব্বার।
আর সংযোগ অবকাঠামোর এই কাজ শেষ হওয়ার পরই বাড়ি বাড়ি ফিক্সড ব্রডব্র্যান্ড সংযোগ পৌঁছানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, “পরবর্তী চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছানো। বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছাতে বিভিন্ন পরিকল্পনা করা হচ্ছে, কোথাও ওয়াই ফাই করে দেব; যেমন একটি বাজার এলাকা, কোনো একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেবল নিয়ে গেলাম।”
ইন্টারনেট সহজলভ্য করতে ফ্রি ওয়াই ফাই জোন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “৫৪৭টি ফ্রি ওয়াই ফাই জোন করছি সরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। এক বছর পর্যন্ত ফ্রি করে দেওয়া হবে, এরপর ব্যান্ডউইডথের মিনিমাম দামটা প্রতিষ্ঠান দেবে।”
সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোকেও ইন্টারনেট সেবার আওতায় আনার পরিকল্পনার কথা জানান মোস্তাফা জব্বার, যার লেখা আইসিটি বিষয়ক বেশ কয়েকটি বই প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে রয়েছে।
তিনি বলেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ইন্টারনেট সুবিধা দিতে হবে। প্রাইমারি স্কুলগুলোতেও ইন্টারনেট সেবা দিতে চাই। বাচ্চাটাকে লেখাপড়া করতে দিচ্ছি, সে লেখাপড়া যদি ইন্টারনেটে থাকে তাহলে ক্ষতি কী? যে যদি গেমও খেলে তাহলেও মস্তিষ্কের চর্চা হয়।”
শিশু শ্রেণি থেকে প্রোগ্রামিং শেখানো এবং সব পাঠ্যপুস্তক ডিজিটাল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী।
জনগণের কাছে সরকারের সব সেবা ডিজিটাল পদ্ধতিতে পৌঁছে দেওয়ার আশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “৫৩টি মন্ত্রণালয় কীভাবে ডিজিটাইজড হবে, সব চিত্র আমার হাতে রয়েছে। ৯০০ সার্ভিস আছে যা জনগণকে দেওয়া হয়, এ সার্ভিসগুলো মোবাইলের মাধ্যমে দেওয়া হবে।”
সরকারি সেবা ডিজিটাইজড করার কাজ দেশীয় প্রতিষ্ঠানকেই দেওয়া হবে বলেও নিশ্চিত করেন মোস্তাফা জব্বার।
তিনি বলেন, “সব মিলে দুই হাজার ৭৬০টি সরকারি কাজ ডিজিটাইজড করা হবে। এ কাজ পাওয়ার পর স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বেড়ে যাবে এবং আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে। ৮০০ থেকে ৯০০ কোম্পানি গড়ে তোলা যাবে, যারা সার্ভিস তৈরি করতে পারবে।”
এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরে এসব প্রতিষ্ঠান দেশের বাইরেও কাজ করতে পারবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সাবেক সভাপতি মোস্তাফা জব্বার ।
পোস্ট অফিসগুলোকে ‘ডিজিটাল ডাকঘর’ করার পরিকল্পনা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, “সব ধরনের ডিজিটাল সেবা এখানে দেওয়া হবে। এজন্য কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।”
ডাক বিভাগে কর্মরতদের মধ্যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘লিডারশিপে’ পরিবর্তন আনা হবে বলে জানান তিনি।
মন্ত্রণালয়ের অধীনে যে সব কোম্পানি রয়েছে সেগুলোকে লাভজনক করার উদ্যেগ নেওয়ার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “সাবমেরিন কেবল লাভজনক, টেসিস ও টেলিটকও লাভজনক হবে।”
রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটক গ্রাহক সংখ্যার দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে।
টেলিটকের এগোতে না পারার পেছনে কম বিনিয়োগকে কারণ হিসেবে দেখছেন মোস্তাফা জব্বার।
“…মূল বিষয় হচ্ছে এখানে বিনিয়োগ হয় না। এখানে টাকা ছাড় হয়ে বসে থাকে, যে প্রজেক্ট থ্রিজির সময় ছাড় হয়েছে, তা ফোরজিতে কাজে লাগানো হয়।”
তারপরও টেলিটক লাভজনক প্রতিষ্ঠান হবে বলে আশাবাদী মোস্তাফা জব্বার বলেন, “টেলিটকে লোক আছে কিন্তু প্রপার লোক প্রপার জায়গায় নেই, এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বাংলাদেশকে ‘ডিজিটাল ডিভাইস মেনুফ্যাকচারিং’ দেশে পরিণত করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “মোট ছয়টি মোবাইল ফোন সংযোজন কারখানা কাজ শুরু করছে। কিছু দিনের মধ্যে আরও দুটি শুরু করবে।
“ওয়ালটন মাদারবোর্ড তৈরি করা শুরু করছে। ক্যাশ ইনসেনটিভসহ সব সুযোগ এজন্য দেওয়া হচ্ছে।”
এই খাতের বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা নিয়েও কথা বলেন ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
“ইন্টারনেটের দামের ক্ষেত্রে আইটিইউ রিপোর্ট আছে কিন্তু অ্যানালাইসিস করে দেখা হয়নি যে আসলে কী পাওয়া গেছে। কোয়ালিটি অব সার্ভিসের গাইডলাইন করা হয়েছে, তবে বাস্তবায়ন করা হয়নি। সিগনিফিকেন্ট মার্কেট পাওয়ার বা এসএমপি প্রবিধানমালা করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন হয়নি। ”
সীমাবদ্ধতার মাঝেও ‘এসব বিষয়ে দ্রুত অগ্রগতি হবে’ বলে আশাবাদী উদ্যোক্তা হিসেবে সফলতার ছাপ রাখা মোস্তাফা জব্বার। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিটিআরসির কাজে গতি বাড়াতে পদক্ষেপ নেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, আইডিটিএসসি পলিসি ও ১৮ বছরের আগের টেলিকম অ্যাক্ট বদলাতেও উদ্যোগ নেওয়া হবে।
টেলিযোগাযোগ ক্ষেত্রে সেবার মান বাড়াতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন বলেও জানান মোস্তাফা জব্বার।
এজন্য অপারেটরগুলোর আরো তরঙ্গ কিনতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।