চলমান শুদ্ধি অভিযানে মূলত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতারা ধরা পড়লেও সামনে অন্যান্য দলের লোকজনও এর আওতায় আসবে বলে জানিয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেছেন, “নেত্রী ঘরেরটা শেষ করে পরকে ধরবেন। সব আসবে। সব অপরাধী ধরা পড়বে এই নেটে-জালে। সব অপকর্মকারীরা ধরা পড়বে।”
রোববার চট্টগ্রাম নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ছয়টি সাংগঠনিক জেলার প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “আমরা লোক দেখানো শুদ্ধি অভিযান করছি না। আমরা এ দেশে প্রমাণ করব, আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা প্রমাণ করবেন অপকর্মের বিরুদ্ধে তিনি কঠোর অবস্থানে আছেন।
“এ শুদ্ধি অভিযান শুধু আওয়ামী লীগের লোক নয়, বিএনপিরও কে কী করেন সবার খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। কে কোথায় বসে কোন অপকর্ম করছেন, অপরাধ করছেন তার খোঁজ নেওয়া হচ্ছে, সময়মতো টের পাবেন, বুঝতে পারবেন।”
দলমত নির্বিশেষ সব অপকর্মকারীকে সাবধান হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সরকারের এই মন্ত্রী বলেন, “চট্টগ্রামে বলে যাচ্ছি, হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করছি- চিহ্নিত চাঁদাবাজরা সাবধান হয়ে যান, টেন্ডারবাজরা, ভূমিদস্যুরা, মাদক ব্যবসায়ীরা সাবধান হয়ে যান।
“শেখ হাসিনার আ্যাকশন ডাইরেক্ট অ্যাকশন। অ্যাকশান শুরু হয়ে গেছে। অপকর্ম করে করে কেউ পার পাবেন না।”
নিজের লোকদের ‘শায়েস্তা’ করার সৎসাহস শেখ হাসিনার আছে মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিএনপি নেতাদের জিজ্ঞেস করুন, একটা প্রমাণ দেখান দলের অপরাধীদের একজনেরও তারা শাস্তি দিয়েছেন কি না।”
চলমান ‘শুদ্ধি অভিযানের’ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক।
“তারা বড় বড় কথা বলেন, তাদের সময়ে দেশ পর পর পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তাদের মুখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বক্তব্য ভূতের মুখে রাম নাম।”
সে সময়ের ‘লুটপাটের কেন্দ্র’ হাওয়া ভবন এদেশের মানুষ ভুলে যায়নি বলে মন্তব্য করেন কাদের।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে মুচলেকা দিয়ে রাজনীতি ছেড়ে দেবে বলে বিদেশ গিয়েছিল। ওয়ান ইলেভেনের পর বিদেশ থেকে বসে বসে ষড়যন্ত্রের গুটি চালছে। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত করছে।”
চট্টগ্রামে বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিনকে অপহরণের পর হত্যার প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন, “চট্টগ্রামের উদাহরণ দিয়ে বলছি বিএনপি অত্যাচার, নির্যাতন, খুনের যে লীলাখেলা বাংলাদেশে করেছে, তার একটারও বিচার হয়নি।”
সভায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, গত এক মাস ধরে ক্যাসিনো নিয়ে আওয়ামী লীগকে বির্তকিত করার চেষ্টা হচ্ছে।
“ক্যাসিনো ছিল ক্লাবে, যুবলীগের অফিসে না। ক্লাবের কর্মকর্তা হিসেবে সব দলের মানুষ আছে। যুবলীগের কয়েকজন জড়িত থাকতে পারে। যাদের নাম এসেছে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অথচ সবগুলো দলের লক্ষ্য আওয়ামী লীগ-যুবলীগ। ভাবটা যেন আওয়ামী লীগ ক্যাসিনো চালিয়েছে।”
‘সুবিধাবাদীদের দলে নয়’
সভায় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ একাধিক শীর্ষনেতা দলে কোনো ‘সুবিধাবাদী ও অনুপ্রবেশকারীকে’ প্রশ্রয় না দিতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
কাদের বলেন, “অনেক জায়গায় শুনি ত্যাগী নেতাদের বাদ দিয়ে সুবিধাবাদী অনুপ্রবেশকারীরা পদ দখল করে নিয়েছে। এই অপকর্মটি করবেন না। দল ভারী করার জন্য বসন্তের কোকিলদের দলে ভেড়াবেন না। দুঃসময়ের নেতাকর্মীদের কোনঠাসা করে আওয়ামী লীগ টিকবে না।”
যুগ্ম সম্পাদক হানিফ বলেন, “অন্য দল থেকে ক্লিন ইমেজের সৎ যোগ্য কেউ আসলে কেন্দ্রের অনুমতি নিয়ে আওয়ামী লীগে যোগ দিতে পারে। এ সুযোগে অনেক খারাপ লোক ঢুকেছে।
“আমাদের কেউ কেউ তাদের আশ্রয় দিয়েছে। অন্য দল থেকে আসা অনৈতিক ও সন্ত্রাসীদের দল থেকে বিদায় করতে হবে।”
প্রচার সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, “২০ ও ২১ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের যে কেন্দ্রীয় সম্মেলন হবে সেই সম্মেলনকে সামনে রেখে দলকে পরিস্কার করার কাজে আমরা হাত দিয়েছি।
“দলের তৃণমূল পর্যায় থেকে বিভিন্ন স্তরে অনেক অনুপ্রবেশকারী ও সুবিধাবাদী ঢুকেছে। দলের বিভিন্ন পর্যায়ে সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে যেসমস্ত অনুপ্রবেশকারী ঢুকেছে সম্মেলনকে সামনে রেখে তাদেরকে পদ-পদবী থেকে বাদ দিতে হবে। সংগঠনকে পরিষ্কার করতে হবে। সুবিধাবাদী মুক্ত করতে হবে।”
সভায় বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম ঘোষণা জানান, ২৪ নভেম্বর খাগড়াছড়ি, ২৫ নভেম্বর রাঙামাটি, ২৬ নভেম্বর বান্দরবান, ৩০ নভেম্বর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা এবং ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে দক্ষিণ জেলার সম্মেলন করা হবে।
এছাড়া মহানগর আওয়ামী লীগের ১১ নভেম্বরের অনুষ্ঠিতব্য বর্ধিত সভায় সম্মেলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
সভায় পার্বত্য তিন জেলার নেতারা তাদের অঞ্চলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে হত্যা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলছে জানিয়ে নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি তুলে ধরেন।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি মোসলেম উদ্দিন চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপ্লব বড়ুয়া প্রমুখ।