বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে নতুন মুখ আসছে। চারটি শূন্য পদের মধ্যে অন্তত তিনটি পূরণের নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে পরামর্শ করে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান শিগগিরই পদগুলো পূরণ করবেন।
এছাড়াও জাতীয় নির্বাহী কমিটির শূন্য পদও পূরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি নির্বাহী কমিটি ও জেলা নেতাদের সঙ্গে দুদফা ধারাবাহিক বৈঠকের পর হাইকমান্ড শূন্য পদ পূরণে তৎপর হয়েছেন।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল করেছিল বিএনপি। দলটির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, জাতীয় নির্বাহী কমিটি তিন বছরের জন্য নির্বাচিত হয়। পরবর্তী জাতীয় নির্বাহী কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত এ কমিটিই দায়িত্ব পালন করবেন। গঠনতন্ত্রের ৭-এর ‘খ’ ধারায় বলা আছে, দলের চেয়ারম্যান জাতীয় স্থায়ী কমিটি এবং জাতীয় নির্বাহী কমিটি এবং বিষয়ভিত্তিক উপকমিটিগুলোর শুন্য পদ পূরণ করতে পারবেন।
২০১৯ সালের মার্চে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে। সে সময় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় কাউন্সিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এর মধ্যে গত বছরের মার্চ থেকে দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়। এখন করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় সারা দেশে দল পুনর্গঠনের দিকে মনোযোগ বিএনপির। এ মুহূর্তে স্থায়ী কমিটিসহ নির্বাহী কমিটির পদ পূরণ করতে চায় হাইকমান্ড। পরে সুযোগ মতো কাউন্সিল করা হবে বলে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, কাউন্সিল হওয়া দরকার। না হলে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চাইলে স্থায়ী কমিটিতে শূন্য পদ পূরণ করতে পারেন। দলে আরও বেশ কিছু শূন্য পদ রয়েছে। সেগুলোও পূরণ করতে পারেন।
স্থায়ী কমিটির একজন সিনিয়র নেতা বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির শূন্য পদ পূরণের বিষয়ে ইতোমধ্যে হাইকমান্ড কাজ শুরু করেছে। শিগগিরই এ পদে নিয়োগ দেয়া হবে। দুর্দিনে যারা বিএনপির, বিশেষ করে জিয়া পরিবারের পাশে ছিলেন এবং নানা প্রতিকূল পরিবেশেও দল ছাড়েননি-এমন পরীক্ষিত নেতার মাধ্যমে স্থায়ী কমিটির শূন্য পদ পূরণ করা হবে।
দলীয় সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির শূন্য পদে আলোচনায় রয়েছেন-বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ, বরকতউল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। এদের মধ্যে অন্তত দুজন অপেক্ষাকৃত কম বয়সি নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণার সময় ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটির দুটি পদ ফাঁকা ছিল। বাকি ১৭ সদস্যের মধ্যে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, তরিকুল ইসলাম, আ স ম হান্নান শাহ ও এমকে আনোয়ার মারা গেছেন। এ ছাড়া রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান। যদিও এ বিষয়ে দল অনুষ্ঠানিক কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় কাগজে-কলমে তার নাম এখনও রয়েছে। আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া অসুস্থ থাকায় দীর্ঘদিন ধরে কোনো বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারছেন না। এর মধ্যে ২০১৯ সালের জুনে বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে স্থায়ী কমিটির শূন্য পদে নিয়োগ দেয়া হয়। এখনও চারটি পদ ফাঁকা।
উপদেষ্টা-ভাইস চেয়ারম্যানসহ নির্বাহী কমিটির শূন্য পদও পূরণ হচ্ছে : শুধু স্থায়ী কমিটি নয় দলের চেয়াপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিল, জাতীয় নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তা ও সদস্যের অন্তত ৫০টি পদ শূন্য রয়েছে। এসব পদে নতুনদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, দলটির ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটির মধ্যে ফজলুর রহমান পটল, বেগম সরোয়ারি রহমান, হারুন-অর রশীদ খান মুন্নু, আখতার হামিদ সিদ্দিকী, জাফরুল হাসান, নূরুল হুদা, কবির মুরাদ, সঞ্জীব চৌধুরী, ওয়াহিদুল ইসলাম, এমএ হকসহ বেশ কয়েকজন মারা গেছেন। এছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউছুফ, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আবু সাইদ খোকন, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক বদরুজ্জামান খসরু, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ মোজাফফর হোসেন মারা গেছেন।
নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মধ্যে মারা গেছেন- স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, আহসান উল্লাহ হাসান, আবুল কাশেম চৌধুরী, এএফএম ইকবাল, মোজাহার হোসেন, মোজাহার আলী প্রধান, কামরুদ্দিন ইয়াহিয়া খান মজলিশ, সরোয়ার আজম খান, কাজী আনোয়ার হোসেন, শফিকুর রহমান ভূঁইয়া, চমন আরা, এমএম মতিন, এমএ মজিদ, মিয়া মোহাম্মদ সেলিম, কাজী সেকান্দার আলী ডালিম প্রমুখ।
নির্বাহী কমিটির ঢাকা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে থাকা শহিদুল ইসলাম বাবুলকে সম্প্রতি কৃষক দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এজন্য সহ-সাংগঠনিক পদে একজন নারী নেত্রীকে নেওয়ার চিন্তা করছে হাইকমান্ড। এ পদে নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর নাম আলোচনায় রয়েছে। এছাড়া কমিটি ঘোষণার পরপরই পদত্যাগ করেন ভাইস চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ফালু। আরেক ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমেদ চৌধুরী দল ত্যাগ করেন। ছাত্র ও সহ-ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক পদ দুটি কমিটি ঘোষণার পরই ফাঁকা। নির্বাহী কমিটির সাতটি আন্তর্জাতিক সম্পাদকের মধ্যে দুটি ফাঁকা। সহ-যুববিষয়ক সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হলেও যুববিষয়ক সম্পাদকের পদটি এখনও ফাঁকা। এছাড়া বিএনপি থেকে পদত্যাগ করা নেতারা হলেন-কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান সিনহা, সহ-সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক মনির খান, সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক শাহাবুদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য আলী আসগর লবী ও ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল। এসব পদও ফাঁকা রয়েছে।