আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিজেদের পরাজয় আঁচ করতে পেরে বিএনপি নেতারা আবোলতাবোল বকছেন, প্রলাপ বকছেন। তবে এসব নিয়ে আওয়ামী লীগ মাথা ঘামাচ্ছে না।
রোববার রাজধানীর রমনা পার্ক রেস্তোরাঁয় আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন উত্তর পুনর্মিলনী ও প্রীতিভোজ অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি নির্বাচন হওয়ার আগেই হেরে গেছে। তাদের মুখে এখন থেকেই পরাজয়ের সুর বেজে উঠেছে। তারা আন্দোলনে পরাজিত, নির্বাচনে কীভাবে বিজয়ী হবে? এদেশে দেখা যায়, আন্দোলনে পরাজিতরা কোনোদিনই নির্বাচনে বিজয়ী হয় না।
তিনি বলেন, বিএনপি এটা ভালো করে জানে, আন্দোলনে পরাজিত হওয়ার পর তারা নির্বাচনেও পরাজিত হবে। এজন্যই কথামালার চাতুরির মাধ্যমে নির্বাচন হওয়ার আগেই নির্বাচন সম্পর্কে আগাম বিষোদগার আর সরকারি দলকে অভিযোগ করে যাচ্ছে।
সিটি করপোরেশন নির্বাচন ‘প্রহসনের নির্বাচন’ হলেও আন্দোলনের অংশ হিসেবেই বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে- বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্বাচন এখনো হলোই না। এর মধ্যে নির্বাচন নিয়ে বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মওদুদ আহমেদ এখনই আগাম মন্তব্য করলেন! এটা বিএনপির পুরোনো স্বভাব। তারা এভাবেই কথা বলেন। অতীতেও দেখা গেছে ফল ঘোষণার আগে ব্যাপক কারচুপি কিংবা সরকারি দলের জালিয়াতি- এসব কথাই বিএনপি বলে থাকে। কাজেই এসব নিয়ে আওয়ামী লীগ মাথা ঘামায় না।
তিনি বলেন, নির্বাচনটা আগে হোক। জাতি দেখবে- এদেশে কেমন নির্বাচন হয়। আওয়ামী লীগ বলেছে- নির্বাচন কশিমনকে একটা ফ্রি, ফেয়ার ও ট্রেডিবল নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়েছেন ভোটারদের ঘরে ঘরে যাওয়ার জন্য। নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করতে চাইলে আওয়ামী লীগ কেন জনগণের দোরগোড়ায় ভোট ভিক্ষা করতে যাবে? আওয়ামী লীগ তো ভোটারদের মন জয় করেই বিজয়ী হতে চায়। এই নির্বাচন প্রহসন হবে না।
‘দেশ পরিবারতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে’- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মন্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া- এরা কোন পরিবারের নেতা সেটাই জানতে চাই। বিএনপির মূল নেতৃত্বই তো একটি পরিবার থেকে এসেছে। এটা খালেদা জিয়া ও তার সন্তান- তারাই তো হর্তা-কর্তা, বিধাতা। এখানে মির্জা ফখরুল তো তাদেরই ‘ইয়েস ম্যান’ হিসেবে কাজ করেন।
তিনি বলেন, বরং আওয়ামী লীগেই গণতন্ত্র আছে, বিএনপিতে গণতন্ত্র নেই। বিএনপি তাদের গত সম্মেলন আওয়ামী লীগের এক বছর আগে করেছে। আজ পর্যন্ত পরবর্তী সম্মেলন করতে পারেনি। সম্মেলনের পর গত সাড়ে ৪ বছরে ওয়ার্কিং কমিটির মিটিংও করতে পারেনি তারা। একবার এক হোটেলে জাম্বুজেড মার্কা কমিটির মিটিং আহ্বান করে তারা, সেই মিটিংও একটা ফ্লপ। সেখান থেকে কর্মীরা কিছু পাননি, কোনো কর্মসূচিও দিতে পারেননি তারা। তাদের কোনো ঘরোয়া গণতন্ত্র নেই। জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ের বেশিরভাগ জায়গায় বিএনপির কোনো কমিটির অস্তিত্ব নেই। কবে কমিটি হয়েছে কেউ জানে না। বিএনপির মুখে এই গণতন্ত্রের কথা শোভা পায় না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি। কেবল বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবেই তিনি এখানে আসেননি। তার যোগ্যতার বদৌলতে শেখ হাসিনাই প্রমাণ করেছেন, বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের তিনিই হচ্ছেন অসীম সাহসী কান্ডারি। যিনি উন্নয়ন ও অর্জনে বাংলাদেশকে বিশ্বসভায় বিশেষ মর্যাদায় মাথা উঁচু করে দাঁড় করিয়েছেন। এই সাফল্যের স্বাপ্নিক রুপকার হচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ক্ষমতার জন্য নয়, শেখ হাসিনা মানুষের জন্য রাজনীতি করেন। সেটাই তিনি প্রমাণ করেছেন। পরবর্তী নির্বাচন নয়, পরবর্তী জেনারেশনের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। সেজন্য তার স্বপ্ন ও তার ভিশন বিস্তৃত হয়েছে ২০২১, ২০৪১ এবং ২১০০ সাল পর্যন্ত। তিনি নিছক রাজনীতিবিদ নন। তিনি তার গুণ-কর্ম ও কীর্তিতে আজ সারাবিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সে কারণে গত ৪৪ বছরে সাহস, দক্ষতা, সততা ও পরিশ্রমের বিচারে শেখ হাসিনার সমতুল্য একজন নেতাও এদেশে নেই।
সেতুমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে অবিসংবাদিত নেত্রী শেখ হাসিনা। এটাই বাস্তবতা। এখানে পরিবারের কোনো বিষয় নয়। শেখ হাসিনা তার নিজের ক্যারিশমা, নেতৃত্বের অসামান্য গুণাবলী, মেধা এবং ভিশনের জন্যই আজ এগিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বাংলাদেশের নাম্বার ওয়ান লিডার। আজ ৭৩ বছর বয়সেও তার গতি অ্যারাবিয়ান হর্সের মত। এটাতে অনেকেই অবাক হন। এখনো তিনি ২৪ ঘন্টার ১৮ ঘন্টা দেশের জন্য কাজ করেন, পরিশ্রম করেন।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন- অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, মির্জা আজম, ফরিদুন্নাহার লাইলী, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, অসীম কুমার উকিল, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া, অ্যাডভোকেট এ বি এম রিয়াজুল কবির কাওছার প্রমুখ।