বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়া-আজারবাইজানের লড়াই

1601206826.aa

বিতর্কিত নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে লড়াই শুরু হয়েছে।

রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিবিসি জানায়, ইতোমধ্যে আজারবাইজানের অন্তত একটি হেলিকপ্টার গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে।

আর্মেনিয়ার দাবি, আজারবাইজানই প্রথমে বিমান এবং আর্টিলারি হামলা চালায়। অন্যদিকে, আজারবাইজান বলছে, পুরো সীমান্তজুড়ে শুরু হওয়া আর্মেনিয়ার হামলার জবাবে পাল্টা হামলা চালায় তারা।

দু’পক্ষ থেকেই জানানো হয়েছে, এ লড়াইয়ে বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে।

নাগোরনো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজানের মধ্যে দ্বন্দ্ব অনেক পুরনো। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এ দ্বন্দ্ব ফের বাড়তে শুরু করে।

১৯৯১ সালের আগ পর্যন্ত আর্মেনিয়া এবং আজারবাইজান দু’টি দেশই তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর তারা দু’টি স্বাধীন দেশ হিসেবে আলাদা হয়।

গত চার দশক ধরে নাগোরনো-কারাবাখ নিয়ে দেশ দু’টির মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। নাগোরনো-কারাবাখ আজারবাইজানের অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত হলেও জাতিগত আর্মেনিয়ানরা অঞ্চলটি নিয়ন্ত্রণ করে।

গত জুলাই মাসেও দুই দেশের মধ্যে লড়াইয়ে ১৬ জন নিহত হয়। এ ঘটনার পর আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে বিরাট বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা ওই অঞ্চল পুনর্দখলে নিতে সরকারের প্রতি পূর্ণ সামরিক শক্তি প্রয়োগের আহ্বান জানায়।

আর্মেনিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, রোববার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ১০ মিনিটে রাজধানী স্তেপানাকের্তে এবং নাগোরনো-কারাবাখ বেসামরিক বসতির ওপর হামলা শুরু হয়। তারা দু’টি হেলিকপ্টার ও তিনটি ড্রোন গুলি করে ফেলে দিয়েছে এবং তিনটি ট্যাংক ধ্বংস করেছে বলেও জানায়।

এক বিবৃতিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলে, ‘আমরা এর উচিৎ জবাব দেবো এবং এ পরিস্থিতির সম্পূর্ণ দায়িত্ব আজারবাইজানের সামরিক-রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই নিতে হবে। ’

আর্মেনিয়া জানায়, একজন নারী ও শিশু মারা গেছে এবং আরও যেসব হতাহতের খবর পাওয়া গেছে সেগুলো যাচাই করে দেখা হচ্ছে।

পরে আর্মেনিয়া সরকার ওই অঞ্চলে সামরিক আইন জারি করে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমাদের পবিত্র বাসভূমি রক্ষা করতে প্রস্তুত হোন। ’

অন্যদিকে, আজারবাইজান জানায়, গোটা রণক্ষেত্র বরাবর সশস্ত্র বাহিনীর পাল্টা হামলা শুরু হয়েছে, যার লক্ষ্য আর্মেনিয়ার বাহিনীর হামলা প্রতিহত করা এবং বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, কয়েকটি গ্রামের ওপর ব্যাপক গোলাবর্ষণের ফলে সেখানে অনেক বেসামরিক মানুষ হতাহত হয়েছে এবং সেখানকার অবকাঠামো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

দেশটি জানায়, তাদের একটি হেলিকপ্টার নষ্ট হয়েছে, তবে হেলিকপ্টারের ক্রুরা বেঁচে গেছেন। আর্মেনিয়ার ১২টি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করে তারা।

তবে আর্মেনিয়া যেসব ক্ষয়ক্ষতির কথা বলেছে, আজারবাইজান সেগুলো অস্বীকার করে।

আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের এ বিরোধে অনেক বছর ধরে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করছে অর্গানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপ (ওএসসিই)।

একটি যুদ্ধবিরতির জন্য এ প্রচেষ্টায় জড়িত রয়েছে মিনস্ক গ্রুপ নামে কূটনীতিকদের একটি দল। এতে ফ্রান্স, রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা আছেন।

Pin It