বিদেশে থাকা দুজন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টের প্ররোচনায় সাংবাদিক আনিস আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জশিতা ইসলামের আদালতে রিমান্ড শুনানিকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
এদিন তাকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উত্তরা পশ্চিম থানার পরিদর্শক মুনিরুজ্জামান।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন। আসামিপক্ষে আইনজীবী কামরুন্নাহার দীপুসহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী রিমান্ড বাতিলসহ জামিন আবেদনের শুনানি করেন।
শুনানির একপর্যায়ে সাংবাদিক আনিস আলমগীর আদালতের অনুমতি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমি একজন সাংবাদিক। আমি আফগানিস্তান ও ইরাক যুদ্ধে সেই দেশে গিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করেছি। তালেবানরা আমাকে অ্যারেস্ট করে। আমি সেখান থেকে বেঁচে এসেছি। আমি মৃত্যুকে কাছে থেকে দেখে এসেছি, মৃত্যুকে আর ভয় করি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি একজন সাংবাদিক। আমি বিগত দুই দশক ক্ষমতাকে প্রশ্ন করেছি। আমি খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনার সমালোচনা করেছি। আমি ইউনূস সরকারেরও সমালোচনা করি এবং ভবিষ্যতে যারা সরকারে আসবে তাদেরও সমালোচনা করব। আমার জীবনে নতজানু হওয়ার ইতিহাস নাই। আমি কোনো সুবিধা গ্রহণ করিনি। তারা আমাকে সরকারের গোলাম বানাতে চায়। আমি টকশোগুলোয় যা বলেছি, প্রকাশ্যেই বলেছি। এখানে অপ্রকাশিত কিছু নেই।’
গ্রামীণ ব্যাংক ও জুলাই স্মৃতি জাদুঘরে হামলা হতে পারে এমন বক্তব্যের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি একটা প্রেক্ষাপটে একথা বলেছি, যখন ৩২ নম্বর ভেঙে দেওয়া হয়। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে চলে গেছি। আমি জুলাইয়ে শেখ হাসিনার পদত্যাগ চেয়েছিলাম। এখন আমার জুলাইয়ের চেতনা শুনতে হয়। গত ১৩ নভেম্বর অবরোধে আওয়ামী লীগের জ্বালাও পোড়াওয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এসব কথা বলেছি। তারা এটা করতে পারলে পরে আরও কত কি করতে পারে! তারা পলাতক নেতাদের কথায় করেছে। তারা তো পলাতক হিসেবে করেছে। আমার এসব বক্তব্যের সাথে কারও যোগসূত্র নাই। আসামিদের মধ্যে শাওন ছাড়া কাউকে চিনি না। এখন ড. ইউনূস যদি দেশকে কারাগার বা দোজখ বানাতে চান, বানাতে পারেন।’
গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে আনিস আলমগীর বলেন, ‘এসব বক্তব্য আসলে কিছু না। দেশের বাইরে থেকে দুজন ইউটিউবার বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল ও নির্বাচনকে বানচালের জন্য কাজ করছে। আমি একমাত্র ব্যক্তি যে টকশোয় এসব বলেছি। আসল বিষয় হলো, এই দুই ব্যক্তি বিশেষ রাজনৈতিক দলকে প্রভাবিত করেছে, আর সেই দল প্রধান উপদেষ্টাকে প্রভাবিত করেছে। তাদের প্ররোচনায় আজ আমি গ্রেপ্তার হয়েছি।’
এরপর আদালত তার পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
এর আগে রোববার (১৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডির ২ নম্বরের একটি জিম থেকে বের হওয়ার পর আনিস আলমগীরকে হেফাজতে নেয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবির কার্যালয়ে নেওয়া হয়।
রাতেই আনিস আলমগীর, অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনসহ চারজনের বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা করেন জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্সের কেন্দ্রীয় সংগঠক আরিয়ান আহমেদ। মামলার অপর আসামিরা হলেন- মডেল মারিয়া কিসপট্টা (ফ্যাশন মডেল) ও ইমতু রাতিশ ইমতিয়াজ (উপস্থাপক)।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার অনুসারীরা বিভিন্ন কৌশলে ঘাপটি মেরে দেশে অবস্থান করে দেশকে অস্থিতিশীল ও অবকাঠামোকে ধ্বংস করার লক্ষে রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্র করে আসছে।
আসামিরা ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়াসহ বিভিন্ন টেলিভিশনের টকশোগুলোয় বসে নিষিদ্ধ সংগঠনকে ফিরিয়ে আনার গুজব (প্রোপাগান্ডা) চালিয়ে আসছে। এর মাধ্যমে তারা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের পাঁয়তারা করছে।
এসব বিভিন্ন পোস্টের ফলে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কর্মীরা অনুপ্রাণিত হয়ে রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল ও অবকাঠামোকে ধ্বংস করার লক্ষে রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধ সংঘটনের ষড়যন্ত্র ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছেন।





