অধ্যাপক এম শামসুল আলম। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ। ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রকৌশল অনুষদের ডিন ও ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় গঠিত কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা।
‘রিজার্ভের যে অবস্থা, প্রয়োজন হলে দিনে বিদ্যুৎ ব্যবহার করবো না’- প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহীর এমন মন্তব্য এবং বিদ্যুৎ-জ্বালানির প্রসঙ্গ নিয়ে মুখোমুখি হন।
অধ্যাপক এম শামসুল আলম: আমদানির ওপর অধিক নির্ভরতা অর্থনীতিকে সব সময় বেকায়দায় ফেলে। এটি নতুন কিছু নয়। আমরা ভোজ্যতেল বলি আর জ্বালানি তেল বলি- সব ক্ষেত্রে একই অবস্থা হওয়ার কথা। পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হলেও আমাদের বেকায়দায় পড়তে হয়।
তেল, কয়লা বা বিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে আমরা এমন ঢালাওভাবে নির্ভর করলাম যে কোনো কিছুই আর বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। এটিই হচ্ছে আমার কাছে বড় বিস্ময়কর ব্যাপার। এ পরিস্থিতিতে পড়তে হবে, তা আমরা শুরু থেকেই বলে এসেছি।
পরিকল্পনায় কি কোনো ভুল ছিল
কিন্তু বিদ্যুৎ নিয়ে জনমনে স্বস্তিও এসেছিল। অন্তত ব্যাপকহারে বিদ্যুতায়ন প্রশ্নে।
শামসুল আলম: বিদ্যুৎ পাওয়ার নামে জনগণ প্রতারিত হয়েছে। মানুষকে প্রতারিত করে এটিকে বানানো হয়েছে ব্যবসাখাত। যাকে-তাকে দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের নাম করে লুটপাট করা হয়েছে। এ খাতের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাচার করা হয়েছে। লুটপাট করতে গিয়ে এই খাতকে তছনছ করে ফেলা হয়েছে।
তৌফিক-ই-ইলাহী একজন মন্ত্রীর দায়িত্বে সব সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই দায় তিনি অস্বীকার করতে পারবেন?
অনেক উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। তাহলে দিনের বেলায় বিদ্যুৎ বন্ধ রাখার কথা বলা হচ্ছে কেন। এর সঙ্গে বিশ্ব পরিস্থিতির কোনো সম্পর্ক নেই। আছে লুটপাটের সম্পর্ক।
জনগণের কোনো বিষয় আমলে না নিয়েই তৌফিক-ই-ইলাহী ঘোষণা করলেন দিনের বেলায় বিদ্যুৎ বন্ধ থাকতে পারে।
জ্বালানির ভর্তুকি তুলে নিয়ে এখানে পুরো দামটা অ্যাডজাস্ট করা হয়েছে। গ্যাসের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। গ্যাসের ঘাটতি ছিল না। তবুও বাড়তি টাকা নেওয়া হলো। রাষ্ট্রীয় খাত অথচ জ্বালানির সঠিক দাম নির্ধারণ হচ্ছে কতিপয় আমলার সিদ্ধান্তে। সঠিক দামের পরিবর্তে বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে। এজন্য আমি যে চিৎকার করছি, তার প্রতিকার কোথায়? ফার্নেস অয়েল ব্যবহারে বেসরকারি খাতকে আট হাজার কোটি টাকা বেশি দেওয়া হলো। সব অর্থ তো ভোক্তাদের কাছ থেকেই কেটে নেওয়া হচ্ছে।
বিদ্যুৎ দেবে বলে সরকার অতিরিক্ত অর্থ নিয়েছে। লোডশেডিংমুক্ত থাকতে বেশি দাম দিতে হয়েছে। উৎপাদনে যে ব্যয় হচ্ছে, তা অর্ধেকে করা সম্ভব ছিল। আমরা একেবারে হিসাব করে দেখিয়ে দিয়েছি।
ভোক্তার আর কী-ই বা করার আছে?
শামসুল আলম: ভোক্তা সবাই। দায় সবার আছে। আমি সে বিষয়ে আলোচনায় যেতে চাই না। আপনি সাংবাদিক বলে আমার সঙ্গে কথা বলছেন। তা না হলে আপনার সঙ্গেও আমার কথা হতো না। এর খেসারত আমি আপনি বলে মীমাংসা করতে পারবো না।
কী অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য?
শামসুল আলম: সামনে কী অপেক্ষা করছে, তা বিধাতাই ভালো বলতে পারবেন। আপনি বাড়ি থেকে ঢাকায় আসবেন। যদি সঠিক পথে আসেন তাহলে পৌঁছাতে পারবেন সময়মতো। কিন্তু আপনি যদি সঠিক পথে না আসেন, তাহলে তার পরিণতি আপনাকেই ভোগ করতে হবে।
সরকার তো বৈশ্বিক সংকটকে দায়ী করছে আজকের পরিস্থিতির জন্য…
শামসুল আলম: ২০০৭-০৮ অর্থবছরে জ্বালানির দাম সবচেয়ে বেশি ছিল। বিশ্বমন্দাও ছিল। সংকট তো মোকাবিলা করা গেছে। ভোজ্যতেলের সংকট মোকাবিলা করা যায়। খাদ্য সংকট মোকাবিলা করা যায়। জ্বালানি সংকটও মোকাবিলা করা সম্ভব। আপনি নিজে থেকে সংকট তৈরি করে রাখলে তো মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।
কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বারবার দাম বাড়ানো হয়েছে। দাম বাড়িয়েও যখন সমাধান করা সম্ভব হয়নি, তখন বুঝতে হবে গোড়ায় গলদ আছে। সংকট সমাধানে আমরা বারবার পরামর্শ দিয়েছি। গোলটেবিল আলোচনা করা হয়েছে। সরকারের ব্যক্তিরাও ছিলেন। আমাদের কথা আমলে নেওয়া হয়নি। সব ইচ্ছামতো করেছেন। এখন কেন হাহাকার বা সর্বনাশের চূড়ান্ত পর্যায়ে সরকার?