বিদ্রোহী কন্যা

image-187256-1601522505

বলিউডের বিদ্রোহী কন্যা বলা যায় তাকে। এই সময়ে তার এই পরিচিতিটি ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। গ্ল্যামার জগত ছাড়িয়ে সেই আলোড়ন রাজনীতির অঙ্গনে পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। আজকাল সবার মুখে মুখে তার নামটি বেশ আলোচিত হচ্ছে। হ্যাঁ, কঙ্গনা রানাওতের কথাই বলছি। ঠোঁটকাটা স্বভাবের মেয়ে বলে এমনিতেই সবাই তাকে সমঝে চলতে চায়। সিনিয়র-জুনিয়র কেউই তার তীর্যক মন্তব্যের কবল থেকে মুক্ত নয়। উল্টাপাল্টা, অনিয়ম, অন্যায় আচরণ নিগ্রহ বলিউডের যেখানেই যাই ঘটুক না কেন— সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদী হয়ে তীর্যক মন্তব্য ছুঁড়ে দিতে এক মুহূর্ত দেরি করেন না বলিউডের কুইনখ্যাত এই অভিনেত্রী।

সমসাময়িক অন্যান্য অনেক তারকা অভিনেতা অভিনেত্রী যেখানে নানা ইস্যুতে সহজে মুখ খুলতে চান না কিংবা কোনো বেঁফাঁস কটু মন্তব্য করে বেকায়দা অবস্থার মধ্যে পড়তে চান না পারতপক্ষে, কোনোভাবে গা বাঁচিয়ে চলতে চান, ক্যারিয়ার ও ব্যক্তিজীবনে অযথা কোনোপ্রকার উত্তেজনার আঁচ লাগতে দিতে চান না— তেমনি পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটে কঙ্গনাকে অসাধারণ ব্যতিক্রম বলা যায় অনায়সেই। বলিউডে ঘটে যাওয়া যে কোনো ধরনের ঘটনা ও ইস্যুতে নিজের জ্বালাময়ী প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আলোচনা, সমালোচনা ও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে নিজেকে ধরে রাখা কিংবা প্রচলিত সিস্টেমের বিরুদ্ধে ঠোঁটকাটা অকপট মন্তব্য করে নিজেকে বিদ্রোহী কন্যারূপে জাহির করতে মোটেও পিছপা হননা কঙ্গনা। এ কারণে গত বেশ কয়েক বছরে অনেকবার মারাত্মক কিছু ঝামেলার মধ্যে পড়তে হয়েছে তাকে।

কারো বিরুদ্ধে মুখ খুললে অনেক অপ্রিয় অসুন্দর সত্যি কথা বেরিয়ে আসে। কঙ্গনাকে এ জন্য অনেকেই আলাদাভাবে পছন্দ করেন এবং সমর্থনও করেন। আবার যারা তাকে দেখতে পারেন না, তার মন্তব্যে যাদের আঁতে ঘা লাগে তারা তাকে মানসিক বিকারগ্রস্ত, মতলববাজ, চরিত্রহীন, লোভী নারী হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রকাশ্যে মন্তব্য করতে ছাড়েন না। মফস্বল শহর থেকে কাজের ধান্ধায় কিশোরী বয়সে মুম্বাই শহরে পা রাখার পর তার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে অনেক অন্যায় করেছেন কেউ কেউ। তার শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটেছে বহুবার।

অভিনেতা আদিত্য পাঞ্চোলির বাড়িতে আশ্রিতা হিসেবে ছিলেন কঙ্গনা। তখন বলিউডের এই অভিনেতা তাকে ফিল্মে কাজের সুযোগ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে অনেকবার নিজবাড়িতে ধর্ষণ করেছেন। আদিত্য পাঞ্চোলির মতো একজন সিনিয়র অভিনেতার দুশ্চরিত্রের অভিযোগ এনে পুলিশের কাছেও মামলা করেছিলেন কঙ্গনা। হূত্বিক রোশনের সঙ্গে ‘কাইটস’ ও ‘কৃষষ্ণ’ ছবিতে অভিনয়ের সময় গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া এবং পরবর্তী সময়ে হূত্বিকের ইউটার্ন, প্রেমে প্রতারণা ইত্যাদি বিষয়ে অনেকদিন খোলামেলা নানা কথা বলে আলোচনার ঝড় তুলেছিলেন এই বিদ্রোহী অভিনেত্রী। গত বেশ কয়েকমাসে বিভিন্ন ইস্যুতে বিস্ফোরক মন্তব্য করে রীতিমতো টর্নেডো ঝড় সৃষ্টি করেছেন তিনি বলিউডসহ ভারতীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে। অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বলিউডে বিরাজমান স্বজন তোষণ, পোষণ, তারকা পরিবারের ছেলেমেয়ে নায়ক-নায়িকাদের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তি, এর বাইরে সাধারণ পরিবার থেকে আসা নন ফিল্মি ব্যাকগ্রাউন্ডের সম্ভাবনাময় অভিনেতা অভিনেত্রীদের প্রতি চরম অবহেলা, বঞ্চনা, নিগ্রহের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে অনেক অপ্রিয় সত্যি কথা বলে বিতর্ক ও আলোচনা উস্কে দিয়েছেন তিনি।

বলিউডের প্রভাবশালী চিত্রনির্মাতা, প্রযোজক পরিচালকের স্বেচচ্ছাচারী আচরণ, অনিয়ম, দুর্নীতি, লাম্পটা, কাস্টিং কাউচ কর্মকান্ড ইত্যাদি বিষয়ে সোচ্চার হয়েছেন কঙ্গনা। ফলে অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়েছিলেন হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির অনেক রথি মহারথী। কঙ্গনার সঙ্গে সুর মিলিয়ে এরপর আরো অনেক অভিনেতা অভিনেত্রী সাহসী মন্তব্য করেছেন, বক্তব্য দিয়েছেন। এরপর বলিউডে মাদকের ছোবল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কঙ্গনা রনবীর সিং, রনবীর কাপুর, দীপিকা পাড়ুকোন, ভিকি কুশল প্রমুখ অভিনেতা অভিনেত্রীর মাদক সেবনের বিষয়ে দুঃসাহসী মন্তব্য করতে ছাড়েননি। এক পর্যায়ে মুম্বাই শহরকে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর হিসেবে আখ্যায়িত করে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক সমালোচনার জালে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এতে মহারাষ্ট্র সরকারে থাকা রাজনৈতিক জোট শিবসেনা-কংগ্রেস নেতাদের রোষানলে পড়েছেন কঙ্গনা। তার বাড়ির এবং প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান কার্যালয়ে ভবন নকশায় ত্রুটি বিচ্যুতির অভিযোগ তুলে পৌর কর্তৃপক্ষের লোকজন বুলডেজার, ক্রাক্টর নিয়ে ভবন ভাঙার নোটিশসহ হামলা চালিয়েছে। তাতেও দমে যাননি কঙ্গনা। ৩৩ বছর বয়সী এই বলিউড অভিনেত্রী বরং তার অপ্রিয় সত্যি ভাষণে ক্ষুব্ধ ও ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন প্রভাবশালী চলচ্চিত্র তারকা ও নির্মাতার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তাদের।

বলিউডের অনিয়ম, অন্যায়, স্বেচ্ছাচার ইত্যাদির বিবরণ তুলে ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মনোযোগ আকর্ষণ করে টুইটও করেছেন তিনি। হালে একজন অখ্যাত উঠতি অভিনেত্রী পায়েল ঘোষের পক্ষ নিয়ে প্রখ্যাত চিত্রনির্মাতা অনুরাগ কাশ্যপের যৌন নিগ্রহের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন কঙ্গনা।

Pin It