দুই দিকেই সুইং, ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার সৌজন্যে পাওয়া বাড়তি বাউন্স আর দুর্দান্ত লাইন-লেংথ, সব মিলিয়ে কাইল জেমিসন যেন ব্যাটসম্যানদের দুঃস্বপ্ন! প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের নাকাল করে ছাড়লেন এই পেসার। পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে নিউ জিল্যান্ড নিশ্চিত করল প্রথমবার আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে ওঠা।
ক্রাইস্টচার্চে টেস্টে ইনিংস ও ১৭৬ রানে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিল নিউ জিল্যান্ড। সিরিজের প্রথম টেস্টে কিউইদের জয় ছিল ১০১ রানে।
ম্যাচের চতুর্থ দিনে বুধবার পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংসে গুটিয়ে যায় ১৮৬ রানেই।
জেমিসনের শিকার ৪৮ রানে ৬ উইকেট। প্রথম ইনিংসে তিনি ৫ উইকেট নিয়েছিলেন ৬৯ রানে। ৬ টেস্টেই চারবার ৫ উইকেট ও প্রথমবার ম্যাচে ১০ উইকেটের স্বাদ পেয়ে গেলেন এই পেসার।
সিরিজ জয়, হোয়াইটওয়াশ ও র্যাঙ্কিং শীর্ষে ওঠার পাশাপাশি এই জয়ে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলার পথেও এগিয়ে গেল নিউ জিল্যান্ড।
এই নিয়ে টানা ৬ টেস্ট জিতল নিউ জিল্যান্ড, টানা তিন সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করল প্রতিপক্ষকে। আগের দুই সিরিজে তাদের শিকার ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ভারত। দেশের মাটিতে এই নিয়ে টানা ১৭ টেস্ট অপরাজিত তারা। সবশেষ হেরেছিল ২০১৭ সালের মার্চে, দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে।
ম্যাচে ১০ উইকেট নেওয়ার পর জেমিসনকে ঘিরে সতীর্থদের উল্লাস। ছবি : নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেটের টুইটার।
ম্যাচের ভাগ্য অনেকটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আগেই। দেখার ছিল, পাকিস্তান লড়াই কতটা করতে পারে। কিন্তু জেমিসনের জবাব খুঁজে পায়নি তারা।
নাইটওয়াচম্যান মোহাম্মদ আব্বাসকে ফিরিয়ে দিনের প্রথম উইকেট এনে দেন ট্রেন্ট বোল্ট। জেমিসন দিনের শিকার শুরু করেন আবিদ আলিকে ফিরিয়ে। অতিরিক্ত ফিল্ডার উইল ইয়াং পয়েন্টে নেন দুর্দান্ত ডাইভিং ক্যাচ।
প্রথম সেশনে ৩০ ওভার ব্যাট করে পাকিস্তান ৬১ রান তুলতে পারে ওই দুটি উইকেটই হারিয়ে। পরের সেশনে জেমিসন তুলে নেন একের পর এক উইকেট। বাড়তি বাউন্সে বিদায় নেন হারিস সোহেল। খানিকটা প্রতিরোধ গড়া আজহার আলিকে (৩৭) জেমিসন ফেরান রাউন্ড দা উইকেটে এসে শরীর তাক করা বাউন্সারে।
তার পরের শিকার পাকিস্তানের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মোহাম্মদ রিজওয়ান। সিরিজের আগের তিন ম্যাচে ফিফটি করা ব্যাটসম্যানকে ইনসুইঙ্গারে বোল্ড করে জেমিসন পূর্ণ করেন ৫ উইকেট। পরে তার ষষ্ঠ শিকার ফাহিম আশরাফ (২৮)।
জেমিসনের উইকেট উৎসবের ফাঁকে বোল্টের বলে খোঁচা দিয়ে বিদায় নেন আগের টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান ফাওয়াদ আলম। দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার আগে সময় কাটানোর বোলিং করতে এসে উইকেটের দেখা পেয়ে যান কেন উইলিয়ামসনও। শাহিন শাহ আফ্রিদিকে ফিরিয়ে ৫ বছর পর স্বাদ পান টেস্ট উইকেটের। অধিনায়ক হিসেবে ৩৫ টেস্টে যেটি তার প্রথম উইকেট!
অভিষিক্ত জাফর গোহার তার ব্যাটিং সামর্থ্যের প্রমাণ আবার রাখেন লোয়ার অর্ডারে। দ্বিতীয় নতুন বলে তাকে ৩৭ রানে ফিরিয়ে ম্যাচ শেষ করে দেন বোল্ট।
উইলিয়ামসনের ডাবল সেঞ্চুরির পরও ম্যাচের সেরা কাইল জেমিসন। ম্যাচে তার প্রাপ্তি ১১৭ রানে ১১ উইকেট। কিউইদের ইতিহাসে তার চেয়ে ভালো বোলিং ফিগার আছে পেসারদের মধ্যে কেবল স্যার রিচার্ড হ্যাডলির।
আগের টেস্টে সেঞ্চুরি ও এই টেস্টের ডাবল সেঞ্চুরিতে সিরিজের সেরা উইলিয়ামসনই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান ১ম ইনিংস : ২৯৭
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস : ৬৫৯/৬ (ডি.)
পাকিস্তান ২য় ইনিংস : ৮১.৪ ওভারে ১৮৬ (আগের দিন ৮/১) (মাসুদ ০, আবিদ ২৬,, আব্বাস ৩, আজহার ৩৭, হারিস ১৫, ফাওয়াদ ১৬, রিজওয়ান ১০, ফাহিম ২৮, গোহার ৩৭, আফ্রিদি ৭, নাসিম ০*; সাউদি ২০-৮-৪৫-০, বোল্ট ১৮.৪-৬-৪৩-৩, জেমিসন ২০-৬-৪৮-৬, হেনরি ১৫-৫-২৫-০, মিচেল ৫-১-৮-০, উইলিয়ামসন ৩-০-১৬-১)।
ফল : নিউ জিল্যান্ড ইনিংস ও ১৭৬ রানে জয়ী
সিরিজ : ২ ম্যাচ সিরিজে নিউ জিল্যান্ড ২-০তে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ : কাইল জেমিসন।
ম্যান অব দা সিরিজ : কেন উইলিয়ামসন।