জীবনযাত্রায় ছোটখাটো স্বাস্থ্যকর অভ্যাস রপ্ত করতে পারলে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম রাখা যায়।
কোলেস্টেরল বেড়ে গেছে এই খবর যে কারও মাঝে একটা আতঙ্ক তৈরি করতে পারে। কারণ কোলেস্টেরল বেশি হওয়ার ক্ষতিকর দিক এবং কী করতে হবে তা নিয়ে আলোচনার কোনো শেষ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘লরা বুরাক নিউট্রিশন’য়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং ‘স্লিপডাউন উইথ স্মুদিজ’য়ের রচয়িতা পুষ্টিবিদ লরা বুরাক বলেন, “কুসুম বাদ দিয়ে ডিম খাওয়া শুরু করলেই হুট করে কোলেস্টেরল কমে যায় না। বরং জীবনযাত্রায় আনা ছোট ছোট স্বাস্থ্যকর পরিবর্তনগুলোই দীর্ঘমেয়াদে কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।”
স্বাস্থ্য ও খাবারের প্রভাব
ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে, লরা বুরাক এবং আরেক স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞ ও ‘দি ফার্স্ট টাইম মম’স প্রেগনেনসি কুকবুক অ্যান্ড ফুয়েলিং মেল ফার্টিলিটি’র রচয়িতা লরেন মানাকার’য়ের পরামর্শের আলোকে জানানো হল বিস্তারিত।
পরিপূর্ণ খাবার
বুরাক বলেন, “যাদের কোলেস্টেরল বেশি তাদের কিছু নির্দিষ্ট খাবার বাদ দিতে হবে কিংবা সীমিত পরিমাণে খেতে হবে। পাশাপাশি এমন খাবার খাদ্যাভ্যাস যোগ করতে হবে যেগুলো পরিপূর্ণ খাবার।”
খাদ্যাভ্যাসের মূল উপকরণ হবে ফল ও সবজি। বাদাম, বীজ, অ্যাভোকাডো, অলিভ অয়েল, স্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত মাছ ইত্যাদি খাদ্যাভ্যাসে থাকা আবশ্যক। এগুলোই রক্তে লিপিড’য়ের মাত্রার উন্নয়ন ঘটাবে।
ওটস: এই খাবারের উপকারিতা অনেক। অন্ত্রের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, ‘ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স’ সৃষ্টির সম্ভাবনা নিয়ন্ত্রণ করা এবং কোলেস্টেলর নিয়ন্ত্রণ করা ওটস’য়ের বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য উপকারী দিক।
মানাকার বলেন, “‘বেটা-গ্লুকান’ নামক একটি আঁশ থাকে ‘ওটস’য়ে যা শরীর থেকে কোলেস্টেরল বের করে দিতে সহায়ক। সকালের নাস্তায় ‘ওটস’ খাওয়া এর সবচাইতে প্রচলিত ব্যবহার। তবে অন্যান্য অনেক খাবারের সঙ্গে যোগ করে অন্যান্য বেলাতেও এটি খেতে পারেন।”
প্রক্রিয়াজাত খাবার আর বাড়তি চিনি এড়ান
বুরাক বলেন, “প্রক্রিয়াজাত খাবার ও বাড়তি চিনি থেকে যত দূরে থাকবেন ততই হৃদযন্ত্র ভালো থাকবে। যে যাই বলুক না কেনো, বর্তমান সময়ে উচ্চ কোলেস্টেরল আর হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ হল আমাদের দৈনন্দিন খাবারে বাড়তি চিনির প্রাচুর্য।”
শুধু ডিম আর দুধ’কে কোলেস্টেরল বাড়ানোর জন্য দায়ী করা এখন আর যুক্তি সঙ্গত নয়। তাই ‘ক্যান্ডি’, ‘কুকিজ’ ইত্যাদি যেসব খাবারে বাড়তি চিনি যোগ করা হয় এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের মধ্য দিয়ে প্রস্তুত হয় সেগুলোকে খাদ্যাভ্যাস থেকে কমিয়ে দিতে যতটুকু সম্ভব।
তরমুজ: এই ফলের উপকারিতা তালিকা মানুষকে অবাক করতে পারে, বিশেষ করে হৃদযন্ত্রের উপকারিতার দিক থেকে।
মানাকার বলেন, “লাইকোপেন’ নামক ‘ক্যারোটিনয়েড’য়ের প্রাকৃতিক উৎস তরমুজ। দৈনিক নির্দিষ্ট মাত্রা এই উপাদান শরীরে গেলে তা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমায় এবং উপকারী কোলেস্টেরল’য়ের মাত্রা বাড়ায়।”
শরীরের আর্দ্রতা বাড়ানোর সুস্বাদু এক উপায় এই খাবার। পাশাপাশি অনেক খাবারের সঙ্গেও যোগ করে খাওয়া যায়। আর তরমুজর পুরোটাই খাওয়ার যোগ্য, এমনকি খোসাও।
ডেজার্ট হিসেবে জাম-জাতীয় ফল
মানাকার বলেন, “তরমুজের পাশাপাশি আরেকটি ফল কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখতে অত্যন্ত উপকারী, আর তা হল যেকোনো জাম-জাতীয় ফল। প্রাকৃতিকভাবেই এগুলো মিষ্টি। তাই চিনি যোগ করার প্রয়োজন নেই। আর পুষ্টিগুণের প্রাচুর্য তো আছেই।”
জাম, স্ট্রবেরি, ব্লুবেরি সবই এই ধরনের ফলের অন্তর্ভুক্ত। হিমায়িত ফল থেকেও একই পরিমাণ উপকার পাওয়া যায়।