আগের ম্যাচে কোনোরকমে একশ পেরিয়েছিল তামিম একাদশ। এই ম্যাচে হয়েছিল দেড়শর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার দশা। ৯ নম্বরে নেমে চিত্র পাল্টে দিলেন মেহেদি হাসান। এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডারের দুর্দান্ত এক আগ্রাসী ইনিংসে দুইশ ছাড়িয়ে দল পেল লড়ার মতো রান।
প্রেসিডেন্ট’স কাপের তৃতীয় ম্যাচে শান্ত একাদশের বিপক্ষে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২২১ রান তুলেছে তামিম একাদশ।
টুর্নামেন্টের তিন ম্যাচে প্রথমবার দুইশ স্পর্শ করল কোনো দল।
দুইশ রানের সীমানা কিংবা ৫০ ওভার খেলা, দুটিই একসময় মনে হচ্ছিল তামিমদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। ১২৫ রানে হারিয়েছিল তারা অষ্টম উইকেট। ৫৭ বলে ৮২ রানের ইনিংস খেলে মেহেদি শুধু উদ্ধারই করেননি দলকে, এনে দিয়েছেন জয়ের আশা করার মতো পুঁজি।
নবম উইকেটে মেহেদিকে দারুণ সঙ্গ দেন তাইজুল ইসলাম। দুজনে গড়েন ৯৫ রানের জুটি।
৩ উইকেট নিয়ে শান্ত একাদশের সফলতম বোলার আল আমিন হোসেন। তবে সেরা বোলার ছিলেন নিঃসন্দেহে নাঈম হাসান। ১০ ওভারে ৪টি মেডেন নেন এই অফ স্পিনার, উইকেট দুটি। লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন দুটি উইকেট উপহার পান, বোলিংয়ে ছিল না খুব ধার।
আগের দুই ম্যাচের তুলনায় উইকেট যথেষ্ট ভালো এ দিন, বল ব্যাটে এসেছে বেশ। তারপরও ধুঁকেছে তামিম একাদশের টপ ও মিডল অর্ডার।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই তামিমের জুটি জমেনি এদিনও। আগের ম্যাচে শুরুতে ফিরেছিলেন তামিম ইকবাল, এবার তানজিদ তামিম।
শুরুতে দারুণ কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তানজিদ। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে আল আমিনকে পুল করে বাউন্ডারির পর আরেকটি চার মানের দৃষ্টিনন্দন স্কয়ার ড্রাইভে। রোমাঞ্চের পেছনে তার ছোটার সমাপ্তি ওই ওভারেই। আরেকটি পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন মিড অনে।
দ্বিতীয় উইকেটে তামিম ও এনামুল হক জুটি গড়ে তোলার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সেই চেষ্টা শেষ হয় তাসকিন আহমেদের বলে এনামুলের আলগা শট ও স্লিপে সৌম্য সরকারের দুর্দান্ত ক্যাচে।
পেসারদের পর স্পিন আক্রমণে এলেও স্বস্তিতে ব্যাট করতে পারেননি তামিমরা। নাঈমের আঁটসাঁট বোলিং আটকে রাখে তামিম ও মিঠুনকে। শুধু রান আটকানোই নয়, দুজনকে বিদায়ও করেন এই অফ স্পিনার।
থিতু হয়ে যাওয়া তামিম ৪৫ বলে ৩৩ রান করে ফিরেন দারুণ এক ডেলিভারিতে, স্লিপে চমৎকার ক্যাচ নেন রিশাদ। ২১ বলে ৪ রানের অস্বস্তিময় ইনিংস খেলে মিঠুন বোল্ড হন আচমকা স্লগ করতে গিয়ে।
তরুণ শাহাদাত ও অভিজ্ঞ মোসাদ্দেক এরপর গড়েন কিছুটা প্রতিরোধ। রানের গতি যদিও ছিল প্রায় থমকে, ধীরে ধীরে তবু একটা জুটি গড়ে তোলেন দুজন। কিন্তু রিশাদ আহমেদের লেগ স্পিনে দৃষ্টিকটু শটে বিদায় নেন দুজনই।৪৬ বলে ১২ করে মোসাদ্দেক আউট হন অফ স্টাম্পের বাইরের বলে অযথা ব্যাট চালিয়ে। লেগ স্টাম্পের বাইরে থাকা যে শর্ট বল খেলা যেত অন সাইডে যে কোনো জায়গায়, শাহাদাত সেই বলেই ক্যাচ তুলে দেন শর্ট ফাইন লেগে। ৫২ বলে তরুণ ব্যাটসম্যান করেন ৩১।
অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক আকবর আলি উইকেটে ছিলেন ৫ বল, এর মধ্যে আউট হতে পারতেন ৩ বার। অল্পের জন্য বার দুয়েক বেঁচে গিয়ে মিড অনে ক্যাচ দেন তিনি দ্বিতীয় স্পেলে ফেরা আল আমিনের বলে।
উইকেটে সময় কাটানোর ধার ধারেননি মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিনও। বোল্ড হন ক্রিজে ছেড়ে বেরিয়ে আল আমিনকে তেঁড়েফুড়ে মারতে গিয়ে।
তামিম একাদশের ইনিংস তখন শেষ হওয়ার অপেক্ষা। মেহেদি ও তাইজুলের লড়াই সেখান থেকেই। শুরুতে এক-দুই নিয়ে এগিয়ে যান দুজন। বৃষ্টিতে ৬৭ মিনিট বন্ধ থাকে খেলা। বৃষ্টির পরও দুজনের ছন্দে ফিরতে সমস্যা হয়নি। শেষ দিকে মেহেদি তোলেন ঝড়, তাইজুল স্রেফ তাকে দিয়ে গেছেন স্ট্রাইক।
মূল বোলারদের ওভার শেষ হয়ে যাওয়ায় শেষ দিকে মুকিদুল ইসলাম ও সৌম্য সরকারকে দিয়ে কাজ চালাতে হয়েছে শান্ত একাদশকে। তাদের বোলিং ছিল অনুমিত, মেহেদি স্রেফ কচুকাটা করেন তাদের।
৯ চার ও ৩ ছক্কায় তার ইনিংস শেষ হয় শেষ ওভারে মুকিদুলকে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে। দল ততক্ষণে পৌঁছে গেছে আশাতীত অবস্থানে। তাইজুল অপরাজিত থেকে যান ২০ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
তামিম একাদশ: ৫০ ওভারে ২২১/৯ (তামিম ৩৩, তানজিদ ৮, এনামুল ১২, মিঠুন ৪, শাহাদাত ৩১, মোসাদ্দেক ১২, আকবর ২, সাইফ উদ্দিন ৩, মেহেদি ৮২, তাইজুল ২০*, শরিফুল ১*; তাসকিন ১০-০-৪১-১, আল আমিন ১০-১-৪৩-৩, মুকিদুল ১০-০-৪৪-১, নাঈম ১০-৪-২৮-২, সৌম্য ৫-০-৪১-০, রিশাদ ৫-০-২১-২)।