বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে থাকার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ বাতিলের দাবিতে সোচ্চার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
তাদের প্রশ্ন, বিবাহিত হওয়া কি অপরাধ? মাতৃত্ব কেন হলে থাকতে প্রতিবন্ধকতা হবে?
শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি হলের একদল নারী শিক্ষার্থী।
ছাত্রীদের এসব দাবির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আবদুল বাছির জানান, কমিটির পরবর্তী মিটিংয়ে এটা এজেন্ডা হিসেবে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, “সেখানে আলোচনার পর যে সিদ্ধান্ত হয়, তা আমরা জানিয়ে দেব।“
শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শামসুন নাহার হল সংসদের সাবেক ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি।
এসময় বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাগুফতা বুশরা মিশমা, সুফিয়া কামাল হল সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরা শারমিন ও সাবেক পাঠকক্ষ সম্পাদক অর্পিতা উপস্থিত ছিলেন।
ইমি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ছাত্রীদের ওঠার সময় একটি অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করতে হয়। এর একটি ধারায় উল্লেখ আছে, “কোনো ছাত্রী বিবাহিত হলে অবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। অন্যথায় নিয়ম ভঙ্গের কারণে তার সিট বাতিল হবে।
শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে বিবাহিত ছাত্রীকে হলে থেকে অধ্যয়নের সুযোগ দেওয়া হবে। অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রী হলে থাকতে পারবেন না।“
বিবাহিত হওয়ায় সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হল ও সামসুন নাহার হলের দুই শিক্ষার্থীর সিট হল প্রশাসন বাতিল করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, হল প্রাধ্যক্ষের কাছে আবেদন করে আশ্বাস না পেয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে এ নিয়ম বাতিলসহ চার দফা দাবি দিয়েছেন।
এসব দাবির প্রেক্ষিতে উপাচার্যের প্রতিক্রিয়া উদ্ধৃত করে সংবাদ সম্মেলনে ইমি বলেন, “উপাচার্য বলেছেন কিছু লোকের হঠকারি চিন্তায় কিছু করা যাবে না। হল কর্তৃপক্ষ ও ডিনস কমিটির সভায় আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কোনো পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত এ নিয়মই বলবৎ থাকবে।“
বিবাহিত হওয়া কি অপরাধ প্রশ্ন রেখে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “বিবাহিত স্ট্যাটাসের সঙ্গে হলে থাকার সম্পর্ক বা থাকতে না দেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা বা কারণ তাদের কাছে নাই।
“একজন ছাত্রী বিবাহিত না অবিবাহিত সেটা দেখে হলে সিট কেন বরাদ্দ হবে, যেখানে সে মেধা অনুযায়ী- নিয়ম অনুযায়ী সিট পায়?”
কোভিডের সময় অনেক ছাত্র-ছাত্রীর বিয়ে হয়ে গেছে উল্লেখ করে তার প্রশ্ন, তারা কোথায় যাবেন এখন? এত খরচ কোত্থেকে বহন করবে ছাত্রীরা?
“একজন বিবাহিত ছাত্রীর যদি হলে থাকা অপরাধ হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের মতে হলের হাউজ টিউটর ও প্রভোস্টদের অবিবাহিত হতে হবে; বিবাহিত হলে তারা কোয়ার্টারে থাকতে পারবেন না।“
চার দফা দাবি হল-
>> বিবাহিত ছাত্রীদের হলে থাকার যে বিধিনিষেধ এবং তাদের জন্য প্রচলিত যে নিয়ম তা বাতিল করতে হবে।
>> শিক্ষার্থীদের প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের মর্যাদা রক্ষার্থে সব ছাত্রী হলে লোকাল গার্ডিয়ান বা স্থানীয় অভিভাবকের পরিবর্তে ইমার্জেন্সি কন্টাক্ট বা জরুরি যোগাযোগ শব্দটি রাখতে হবে।
>> আবাসিক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দ্বারা যেকোনও ধরনের হয়রানি এবং অসহযোগিতামূলক আচরণ বন্ধ করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
>> শিক্ষা কার্যক্রম চলমান থাকা সাপেক্ষে অনাবাসিক ছাত্রীদের হলে প্রবেশের অধিকার পুর্নর্বহাল করতে হবে এবং জরুরি প্রয়োজনে তাদেরকে হলে অবস্থান করতে দিতে হবে।