বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ময়ূরপঙ্খী উড়োজাহাজ ছিনতাই চেষ্টাকারী পলাশ আহমেদকে বিমানবন্দরে চেকিংয়ের একটি ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে।
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে চেকিংয়ের পূর্ণাঙ্গ ভিডিওটি বুধবার ভাইরাল হয়। এটি ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকসহ নানা গণমাধ্যমে।
ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি কালো রঙের ব্যাগ স্ক্যানিং মেশিনে দিয়ে প্রবেশ করছে পলাশ। এ সময় মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তার দেহও তল্লাশি করা হয়। এর পর সে ব্যাগ নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই ভেতরে চলে যায়। দ্বিতীয় দফার তল্লাশিও নিখুঁতভাবে হয়।
এই ভিডিও নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এভিয়েশন নিরাপত্তা-বিশ্নেষকরা।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী এনামুল আহসান বলেন, ওই দিন যারা নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত ছিলেন, তারা এ ভিডিও প্রকাশ করেছেন। এটি প্রকাশ করে তারা প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন, তাদের নিরাপত্তায় কোনো ত্রুটি ছিল না। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে পলাশের হাতে অস্ত্র তুলে দিল কে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, সিভিল এভিয়েশনের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ওই দিনের বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের সব ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়। এতে নিরাপত্তার কোনো ত্রুটি দেখা যায়নি।
এদিকে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টার ঘটনায় বুধবার পর্যন্ত মোট ১৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, বেঁধে দেওয়া পাঁচ দিনের মধ্যেই তারা রিপোর্ট বিমান মন্ত্রণালয়ে জমা দেবেন। কমিটির সদস্যরা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালও পরিদর্শন করেছেন।
সিভিল এভিয়েশনের একাধিক কর্মকর্তা বুধবার জানিয়েছেন, পলাশের হাতের পিস্তলটি খেলনা ছিল।
বোমাসদৃশ বস্তু সম্পর্কে তারা বলেন, লাল রঙের ছোট প্লাস্টিকের কিছু ভাঙাচোরা পাইপ ও চিকন তার পলাশের সঙ্গে ছিল। বিমানের ওয়াশরুমে প্রবেশ করে পলাশ হাতের ঘড়িটির বেল্ট ফেলে দিয়ে প্লাস্টিকের টুকরোগুলোর মধ্যে ঘড়ি বসিয়ে তার দিয়ে পেঁচিয়ে বোমাসদৃশ একটি বস্তু তৈরি করে।
এরপর সিটে বসে ‘বোমা’ ‘বোমা’ বলে চিৎকার করে সবাইকে ভয় দেখায়। প্লাস্টিকের পাইপ নিরাপত্তা তল্লাশির সময় স্ক্যানিংয়ে ধরা পড়েনি। বিমানের ভেতরে কোনো বিস্ফোরণ বা গুলিও হয়নি। সেখানে এসবের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি বলেও কর্মকর্তারা জানান।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন (অব.) মোসাদ্দেক আহমেদ বলেন, বিমানের উড়োজাহাজটি চট্টগ্রামে রয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে সেটি ঢাকায় নিয়ে আসা হবে। তারপর পুরো চেকিং হবে। এরপর চলাচল শুরু করবে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি বিজি-১৪৭ ফ্লাইটটি ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের ১৫ মিনিট পরই পলাশ বোমা সদৃশ বস্তু ও অস্ত্র দেখিয়ে বিমানটি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। প্রায় দুই ঘণ্টার নাটকীয়কতার পর আট মিনিটের কমান্ডো অভিযানে নিহত হয় পলাশ। সব আরোহী বেরিয়ে আসেন নিরাপদে।