বিমান দুর্ঘটনায় নিহত যাত্রীর পরিবার পাবে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা

PM-5d63dbb850513

বিমান দুর্ঘটনায় কোনো যাত্রী মারা গেলে তার পরিবার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা পাবে। ক্ষতিপূরণ না দিলে উড়োজাহাজ কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ ১০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ১০০ কোটি টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড দেওয়া হবে। দেশের অভ্যন্তরে আকাশপথে দুর্ঘটনায়ও এ ক্ষতিপূরণ প্রযোজ্য হবে। এমন বিধান রেখে আকাশপথে পরিবহন (মন্ট্রিয়ল কনভেনশন, ১৯৯৯) আইন ২০১৯-এর খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার তেজগাঁও কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ আইন অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‌‘আকাশপথে বিমানে যাত্রীদের অধিকার সুরক্ষায় এ আইনটি করা হচ্ছে। আইনটি না থাকায় গত বছর নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় হতাহতদের পরিবার কম ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। মন্ট্রিয়ল কনভেনশন অনুযায়ী, বাংলাদেশে আইন থাকলে প্রত্যেক যাত্রীর পরিবার কয়েকগুণ বেশি ক্ষতিপূরণ পেত। যাত্রীদের স্বার্থে আইনটি করা হচ্ছে।’

তিনি জানান, এ আইনে মন্ট্রিয়ল কনভেনশন ১৯৯৯ অনুযায়ী কোনো ফ্লাইটে যাত্রী নিহত হলে ক্ষতিপূরণ আদায়ের পাশাপাশি যাত্রী আঘাতপ্রাপ্ত হলে এবং লাগেজ হারিয়ে গেলেও ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, কোনো বিমান কোম্পানি আইনটি ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে আইনের পৃথক ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে সরকার। সেক্ষেত্রেও মন্ট্রিয়ল কনভেনশন ১৯৯৯ অনুযায়ী, যাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় যাত্রীপ্রতি এক লাখ ৪০ হাজার ডলার করে জরিমানা করা হবে। সব টাকা আদায় করবে সরকার। পরে তা নিহত বা আহত যাত্রীদের দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। আইন বাস্তবায়নের ফলে বিমানের ভাড়া বাড়বে না। ক্ষতিপূরণের টাকা সংশ্নিষ্ট বিমান কর্তৃপক্ষ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছ থেকে নেবে। এমনকি কোনো যাত্রীর ক্ষেত্রে তার সম্পত্তির বৈধ প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তির মধ্যে ক্ষতিপূরণের অর্থ ভাগ করা যাবে।

চামড়াজাত পণ্যের উন্নয়নে পরিষদ হবে:

মন্ত্রিসভায় চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য উন্নয়ন নীতিমালা-২০১৯-এর খসড়া অনুমোদন হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, রফতানি পণ্যের ক্ষেত্রে চামড়া বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী দ্বিতীয় খাত। ২০২৪ সাল নাগাদ ৫ বিলিয়ন ডলারের চামড়া পণ্য রফতানি করা যাবে বলে সরকার আশা করছে। নীতিমালার আওতায় শিল্পমন্ত্রীর নেতৃত্বে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের ৪১ সদস্যের একটি উন্নয়ন নীতিমালা পরিষদ গঠন হবে। শিল্প সচিবের নেতৃত্বে ২০ সদস্যের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের নীতিমালা বাস্তবায়ন পরিষদ থাকবে। এই নীতিমালার আলোকে ট্যানারি শিল্প মালিকদের ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা থাকবে।

মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তের ৮১ শতাংশ বাস্তবায়ন:

মন্ত্রিসভার বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০১৯ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন (এপ্রিল-জুন) উপস্থাপন করার পর অনুমোদন হয়। এ সময় মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়েছে সাতটি। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৭২টি। বাস্তবায়িত হয়েছে ৫৯টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৮১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে ১৩টি। বাস্তবায়নাধীন সিদ্ধান্তের হার ১৯ দশমিক ৬ শতাংশ। তিন মাসে অনুমোদিত নীতি/কর্মকৌশল নেওয়া হয়েছে একটি। এই সময়ে চুক্তি/সমঝোতা স্মারক অনুমোদন হয়েছে একটি। সংসদে আইন পাস হয়েছে ৬টি।

মিথ্যা বিবরণে গৃহঋণ নিলে শাস্তি:

সোমবার মন্ত্রিসভায় বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন আইন ২০১৯-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন হয়। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, এতদিন এটি ১৯৭৩ সালের রাষ্ট্রপতির আদেশ দ্বারা পরিচালিত হয়ে আসছিল। এখন এটি আইনে পরিণত করা হচ্ছে। বিদ্যমান আইনে ‘হাউস’ লেখা হতো। এখন নতুন আইনে ‘হাউজ’ লিখতে হবে। এ আইনে নতুন করে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। চেয়ারম্যান ও পরিচালক যুক্ত করা হয়েছে। আগের আইনে এসব ছিল না। এর প্রধান অফিস হবে ঢাকায়। পরিচালকরা তিন বছর মেয়াদে মনোনীত হবেন।

আইনের কোনো শর্ত ভঙ্গ করলে বা মিথ্যা বিবরণ দিয়ে ঋণ গ্রহণ করলে সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ৫ বছরের দণ্ড এবং ৫ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড। করপোরেশনের অনুমোদিত মূলধন হবে এক হাজার কোটি টাকা। আগে ছিল ১১০ কোটি টাকা। করপোরেশন পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা হবে, যা ছিল ১১০ কোটি টাকা।

মোজাফফর আহমদের মৃত্যুতে শোক:

প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও ন্যাপ নেতা অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের মৃত্যুতে মন্ত্রিসভায় শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে।

Pin It