ছেলেদের ক্রিকেটে হতাশার দিনে মুখে হাসি ফোটাল নারী ক্রিকেট। আইসিসির ২০২০ টি২০ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। স্কটল্যান্ডের ডান্ডিতে আট দল নিয়ে আয়োজিত টুর্নামেন্টের ফাইনালে শনিবার থাইল্যান্ডকে ৭০ রানের ব্যবধানে হারিয়েছেন সালমা খাতুনরা। প্রথমে ব্যাট করে সানজিদা ইসলামের ৭১ রানের রেকর্ড ইনিংসে ভর করে ৫ উইকেটে ১৩০ রান তোলে বাংলাদেশ। এরপর আঁটসাঁট বোলিংয়ে থাই মেয়েদের মাত্র ৬০ রানে আটকে ফেলেন নাহিদা-শায়লারা।
শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে হারলেও ফাইনালে ওঠার মাধ্যমে বাংলাদেশের পাশাপাশি থাইল্যান্ডও ২০২০ টি২০ বিশ্বকাপের চূড়ান্ত পর্বে জায়গা করে নিয়েছে। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে অস্ট্রেলিয়ায় হওয়ার কথা রয়েছে নারী ক্রিকেটের বিশওভারি বিশ্ব আসর। চ্যাম্পিয়ন হিসেবে বাংলাদেশ পড়েছে অস্ট্রেলিয়া, ভারত, নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলংকার সঙ্গে গ্রুপ এ-তে।
ডান্ডির ফোরফারশায়ার ক্রিকেট ক্লাব মাঠে অনুষ্ঠিত ফাইনালে বাংলাদেশ ম্যাচ মুঠোয় নিয়ে আসে প্রথম ইনিংসেই। টস জিতে ব্যাট করতে নামার পর মুরশিদা খাতুনকে নিয়ে মাত্র ১০ ওভারেই ৬৮ রান সংগ্রহ করে ফেলেন সানজিদা। ৩৪ বলে ৩৩ রান করে মুরশিদা আউট হওয়ার পর আর কেউ এসে তেমন একটা থিতু হতে পারেননি। এক প্রকার একা হাতেই দলকে টেনে নিয়েছেন সানজিদা। সেমিফাইনালে অপরাজিত ৩২ রানের ইনিংস খেলা এ ব্যাটার ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিতে পৌঁছান ৪৭ বলে। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভার শেষে যখন অপরাজিত হয়ে মাঠ ছাড়েন, নামের পাশে তখন ৬০ বলে ৭১ রান। যে ইনিংসে আছে ছয়টি চারের পাশাপাশি তিনটি ছয়। নারী টি২০ ক্রিকেটে এটিই বাংলাদেশের কোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ ইনিংস। আগের সর্বোচ্চ ছিল গত বছর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে করা ফারজানা হকের (৬৬*)। সানজিদা নিজের করে নিয়েছেন এক সিরিজে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডও। ২০১৮ এশিয়া কাপে শামিমা সুলতানার ১৩১ রান টপকে সানজিদার রান ১৫৬। সানজিদার ব্যক্তিগত কীর্তির সুবাদে দল গড়ে নিজেদের টি২০ ইতিহাসের সপ্তম সর্বোচ্চ ১৩০ রানের সংগ্রহ। গত কয়েক বছরে নারী ক্রিকেটে দারুণ উন্নতি করলেও এই রান থাই মেয়েদের জন্য ছিল বড় চ্যালেঞ্জের। এখন পর্যন্ত একবারই মাত্র ১৩০-এর ঘর পেরোতে পেরেছে দলটি। দ্বিতীয়বার যে এবারের ফাইনালে হচ্ছে না, সেটি ঠিক হয়ে যায় তাদের প্রথম ১০ ওভার ব্যাটিং শেষেই। জাহানারা আলম, খাদিজাতুল কুবরা, সালমা খাতুনরা বল হাতে এতটাই চেপে ধরেন যে ১৭ রানের মধ্যেই চলে যায় ৪ উইকেট। উইকেট বাঁচাতে মরিয়া হতে গিয়ে ১০ ওভার শেষে থাইল্যান্ডের রান দাঁড়ায় মাত্র ২০। পরের ১০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে আরও ৪০ রান যোগ করলেও বাংলাদেশের অর্ধেকে পৌঁছাতে পারেনি। ৬০ রানে থেমে গিয়ে ম্যাচ হারে ৭০ রানের ব্যবধানে। রান ব্যবধানের দিক থেকে এটি বাংলাদেশের যৌথভাবে সবচেয়ে বড় জয়। এর আগে গত বছর মালয়েশিয়ার মেয়েদের বিপক্ষেও ১৩১ রানের লক্ষ্য দাঁড় করিয়ে ৭০ রানে জিতেছিল বাংলাদেশ। বোলিংয়ে বাংলাদেশের পক্ষে দুটি করে উইকেট নেন নাহিদা আক্তার ও শায়লা শারমিন। তবে সেরা বোলিং ১ উইকেট নেওয়া অধিনায়ক সালমার, ৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে দুটি মেডেন নিয়ে মাত্র ৪ রান খরচ করেন তিনি। ম্যাচসেরা হয়েছেন সানজিদা। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুরু টি২০ বিশ্বকাপের মূল আসরে বাংলাদেশ নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবে ২৪ ফেব্রুয়ারি ভারতের বিপক্ষে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ নারী দল : ২০ ওভারে ১৩০/৫ (সানজিদা ৭১*, মুরশিদা ৩৩, নিগার ৮; বুকাথাম ২/৩১)।
থাইল্যান্ড নারী দল : ২০ ওভারে ৬০/৭ (পাডাংলার্ড ১৫*, লিনপ্রাসার্ট ১১; শায়লা ২/৯, নাহিদা ২/১৭, সালমা ১/৪, খাদিজা ১/৮)।
ম্যাচসেরা : সানজিদা ইসলাম।
বিশ্বকাপে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার গ্রুপে বাংলাদেশ
অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০২০ টি-২০ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। শনিবার বাছাইপর্বের ফাইনালে থাইল্যান্ডকে ৭০ রানের বিশাল ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। তার আগে বাছাইপর্বের সেমিফাইনালে আয়ারল্যান্ডকে হারায় মেয়েরা। ফাইনাল নিশ্চিত হতেই টি-২০ বিশ্বকাপও নিশ্চিত হয় মেয়েদের।
শনিবারের ফাইনাল ম্যাচের পরই মেয়েদের ২০২০ টি-২০ বিশ্বকাপের সূচি চূড়ান্ত করা হয়েছে। সেখানে কঠিন গ্রুপে পড়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে টি-২০ বিশ্বকাপের সর্বশেষ আসরের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে। সঙ্গে ভারত-নিউজিল্যান্ডের মতো পরাশক্তিও আছে। বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দশ দলকে দুটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ আছে ‘এ’ গ্রুপে। এই গ্রুপে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড ছাড়াও আছে শ্রীলংকা। অন্যদিকে ‘বি’ গ্রুপে ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ,, দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে আছে পাকিস্তান ও বাছাইপর্ব থেকে আসা থাইল্যান্ড নারী দল। আগামী বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হবে। আগামী ২০২০ আসরের ছেলে ও মেয়েদের টি-২০ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে অস্ট্রেলিয়ায়।