পরবর্তী প্রজন্মের উৎপাদনশীলতার বিষয়ে ধারণা পেতে বিশ্বব্যাংকের তৈরি করা মানবসম্পদ সূচকে অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের। এ সূচকে গত দুই বছরে দশমিক শূন্য দুই পয়েন্ট অবনতি হয়েছে।
একটি শিশু জন্মগ্রহণের পর তার সম্ভাবনা কতটুকু কাজে লাগাতে পারবে তার ওপর ভিত্তি করে ‘দ্য হিউম্যান ক্যাপিটাল ইনডেক্স’ তৈরি করে সংস্থাটি। শিশুর শিক্ষার সুযোগ, স্বাস্থ্যসেবা এবং টিকে থাকার সক্ষমতার ভিত্তিতে ভবিষ্যতে তার উত্পাদনশীলতা এবং আয়ের সম্ভাবনা নির্ধারণ করা হয় এর মাধ্যমে।
এ সূচকের মান শূন্য থেকে এক পর্যন্ত। কোনো দেশের স্কোর যদি এক হয় তাহলে ধরে নেওয়া হয় সে দেশে জন্ম নেওয়া শিশুটি তার পূর্ণ উত্পাদনশীলতা কাজে লাগাতে সক্ষম হবে।
এই সূচকে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের পয়েন্ট ছিল দশমিক ৪৮। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ২০২০ সালের প্রতিবেদনে এটি কমে দশমিক ৪৬ এ নেমেছে। অর্থাত্ একটি শিশু তার উত্পাদনশীলতার অর্ধেকেরও কম ব্যবহারে সক্ষম হবে। দুই বছরে অবস্থার আরো অবনতি হয়েছে।
করোনার সময়কালে দেশে শিশুদের খর্বাকায় হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে বলেও প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া আরো দশমিক শূন্য এক পয়েন্ট অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।
‘দ্য হিউম্যান ক্যাপিটাল ইন দ্য টাইম অব কোভিড-১৯’ শিরোনামে এবারের প্রতিবেদনে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশু মৃত্যুহার, শিশুদের স্কুলে যাওয়ার গড় সময়, শিক্ষার মান, ঝরে পড়া রোধ, শিশুদের সঠিক আকারে বেড়ে ওঠার হার এমন মানদণ্ড ব্যবহার করা হয়েছে সূচক তৈরির ক্ষেত্রে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া একটি শিশু বড় হয়ে কর্মক্ষেত্রে গড়ে ৪৬ শতাংশ উত্পাদনশীল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতে এ হার ৪৯ শতাংশ আর পাকিস্তানে ৪১ শতাংশ। তবে শ্রীলঙ্কা ও নেপালে এ হার যথাক্রমে ৬০ ও ৫০ শতাংশ। এ তালিকায় শীর্ষে রয়েছে সিঙ্গাপুর, হংকং, জাপান, কোরিয়া, কানাডা ও ফিনল্যান্ড। তাদের পয়েন্ট দশমিক ৮৯ থেকে ৮০ পর্যন্ত। তালিকায় নিচের দিকে রয়েছে মধ্যআফ্রিকা প্রজাতন্ত্র, চাদ, দক্ষিণ সুদান, নাইজার ও মালি। তাদের পয়েন্ট দশমিক ৩২ থেকে ৩৩-এর মধ্যে। সূচকে পিছিয়ে পড়লেও বাংলাদেশের স্কুলে ভর্তির হার, ঝরে পড়া রোধ, শিশু মৃত্যুর হার কমে আসার বিষয়ে প্রশংসা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
বিশ্বব্যাংক উল্লেখ করেছে, কোভিড-১৯ অতিমারির প্রভাবে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে গত এক দশকের অর্জন হুমকির মুখে পড়েছে, বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলোতে। বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস এক বার্তায় উল্লেখ করেন, অতিমারির প্রভাবে দরিদ্র পরিবারগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে অনেকেরই খাদ্য নিরাপত্তা এবং দারিদ্র্যের ঝুঁকিতে রয়েছে। গত এক দশক ধরে মানব উন্নয়ন, স্বাস্থ্য খাতের অর্জন, স্কুলে ভর্তির হার বৃদ্ধি, খর্বাকায় শিশুর হার কমে আসার যে অর্জন রয়েছে সেগুলো ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে মানব উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়, করোনার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী ১০০ কোটি শিশু এখন শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে রয়েছে। বহু শিশু আর স্কুলে ফিরে যেতে পারবে না। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ কর্মহীন হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে মানব উন্নয়ন করতে স্বাস্থ্যসেবার আওতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। সেই সঙ্গে অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোকে সহায়তার তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি।