দেশের অন্যতম শীর্ষ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘পারটেক্স গ্রুপ’ এর প্রতিষ্ঠাতা ও বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য এমএ হাশেমের ছেলে শওকত আজিজ রাসেলের গাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। শুক্রবার গভীর রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকার চৌরঙ্গী ফিলিং স্টেশনের সামনে থেকে এই মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। শনিবার বিকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বিষয়টি জানিয়েছেন।
এ ঘটনায় গাড়ি চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে। গাড়ির মালিক শওকত আজিজ রাসেল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক ও রাজধানীর অভিজাত গুলশান ক্লাবের সভাপতি। এ সময় গাড়িতে শওকত আজিজ রাসেলের স্ত্রী ফারাহ রাসেল ও ছেলে আনাব আজিজ ছিল বলে একটি সূত্র জানালেও তাদেরকে আটক দেখানো হয়নি। এ ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য আইনে দুইটি মামলা হয়েছে। মামলায় শওকত আজিজ রাসেলকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। তবে তিনি পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা পুলিশ জানায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদকে ঢাকার বাসায় নামিয়ে দিয়ে চালক পর নারায়নগঞ্জ ফিরছিলেন। শুক্রবার আনুমানিক রাত ১টার দিকে তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তায় মগবাজার ফ্লাইওভারের কাছাকাছি পৌঁছালে রাস্তায় যানজটে আটকে পড়েন। তখন এসপির গাড়ি চালক জুয়েল মিয়া হর্ন দিলে সামনে থাকা গাড়ির ভেতর থেকে একজন লোক এসে গাড়ির বাম পাশের গ্লাসে জোরে আঘাত করেন এবং গালিগালাজ করতে থাকেন। ওই ব্যক্তি বলেন, ‘আমি পারটেক্সের রাসেল, গাড়ির দরজা খোল।’
এমন কথা বললে এসপির গাড়ির চালক গাড়ির গ্লাস খুলে প্রতিবাদ করলে উক্ত ব্যক্তি তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় পিস্তল তাক করে। পরে পুলিশের লোক বুঝতে পেরে দ্রুত নিজের গাড়িতে করে পালিয়ে যাওয়ার সময় এসপির গাড়ি চালক ও দেহরক্ষী গাড়িটি অনুসরণ করে। পরে গাড়িটি নারায়ণগঞ্জের দিকে আসছে বলে এসপির গাড়ির চালক জুয়েল ডিবি পুলিশের এসআই জলিল মাতুব্বরকে জানান।
রাত পৌনে তিনটার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন সাইনবোর্ড চৌরঙ্গী ফিলিং এন্ড সিএনজি স্টেশন থেকে ওই গাড়ির চালক সুমনকে আটক করা হয়। তবে শওকত আজিজ রাসেল পালিয়ে যান এবং গাড়িতে থাকা তার স্ত্রী-পুত্রকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়।
পুলিশ আরও জানায়, ওই গাড়ি থেকে পিস্তলের ২৮ রাউন্ড গুলি, ১২শ’ পিস ইয়াবা, ২৪ বোতল বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ, ২৮ ক্যান বিয়ার, নগদ ২২ হাজার ৩৮০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় সাদা রঙের একটি জিপ গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-ঘ: ১৩-৮৩৭৫) পুলিশের জব্দ তালিকায় দেখানো হয়েছে। গাড়ি থেকে উদ্ধারকৃত পিস্তলের গুলি ও মাদক শওকত আজিজ রাসেলের (৩৯) বলে ডিবির কাছে জানায় আটক গাড়ি চালক সুমন।
এদিকে এ ঘটনায় শনিবার সকালেই জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ছুটে আসেন পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা এম এ হাশেম, পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও এমএ হাশেমের স্ত্রী সুলতানা হাশেম ও এমডি আজিজ আল মাহমুদ। পরে গাড়িতে থাকা শওকত আজিজ রাসেলের স্ত্রী ফারাহ রাসেল ও ছেলে আনাব আজিজকে তাদের হেফাজতে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এসপি হারুন অর রশীদ বলেন, ‘শওকত আজিজ রাসেলের গাড়ি তল্লাশি করে ইয়াবা, পিস্তলের গুলি ও বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা তাকে ধরতে পারিনি। তিনি পালিয়ে গেছে। তবে তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে দুইটি মামলা হয়েছে। তাকে ধরার জন্য গুলশান এলাকা, ঢাকার একটি ক্লাব ও তার বাসায় যাই। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। আসামি রাসেলকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’