বিস্তৃত পরিসরে সরকারি আইনি সহায়তা সেবা দিচ্ছে সরকার। করোনাকালেও বন্ধ নেই এই আইনি সহায়তা সেবা। কারাবন্দিদের আইনগত সহায়তা ছাড়াই শ্রমিকদের জন্য চালু করা হয়েছে শ্রমিক সহায়তা সেল। আর বিকল্প বিরোধ পদ্ধতি প্রয়োগের মধ্য দিয়ে মামলার পক্ষগণের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি করেও বজায় থাকছে সুসম্পর্ক। আদায় হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ফলে সময়ের ধারাবাহিকতায় জনপ্রিয় হচ্ছে সরকারি লিগ্যাল এইড কার্যক্রম।তবে করোনাকালে এ বছর আজ বুধবার সীমিত পরিসরে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে।
দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে “বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার, লিগ্যাল এইডের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছে শেখ হাসিনার সরকার”।
আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার প্রাপ্তিতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে আইনগত সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’ প্রণয়ন করেন। ঐ আইনের আওতায় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা প্রতিষ্ঠা করে সরকারি আইনগত সহায়তা প্রদান কার্যক্রমকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হয়। পরবর্তীকালে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নির্দেশনায় এই আইনি সহায়তা কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করা হয়। আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার বিভিন্ন কার্যক্রমের তথ্য তুলে ধরা হলো।
আইনি সহায়তাপ্রাপ্তিতে এগিয়ে নারীরা:
সংস্থার তথ্য অনুযায়ী ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত এক যুগে সংস্থাটি সর্বমোট ৬ লাখ ৭ হাজার ৮৮০ জনকে সরকারি আইনি সেবা প্রদান করেছে। যার মধ্যে ৬৪টি জেলা লিগ্যাল এইড কমিটির মাধ্যমে ২ লাখ ৮৯ হাজার ৯৬৮ জনকে সরকারি খরচে মামলা দায়ের ও আইনজীবী নিয়োগসহ প্রাসঙ্গিক সকল ব্যয় নির্বাহ করতে সহায়তা করেছে। সহায়তাপ্রাপ্ত ব্যক্তিগণের মধ্যে ১ লাখ ৪৬ হাজার ৪১১ জন নারী এবং ১ লাখ ৪২ হাজার ৪১৫ জন পুরুষ এবং ১ হাজার ১৪২ জন শিশু।
বিকল্প বিরোধ থেকে আদায় ৫৭ কোটি:
সংস্থাটি জুলাই ২০১৫ সাল হতে চলতি বছর পর্যন্ত ৪৭ হাজার ১২৮টি বিরোধ/মোকদ্দমার (প্রি-কেইস+পোষ্ট কেইস) মধ্যে ৪১ হাজার বিরোধ/মোকদ্দমা বিকল্প পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি করেছে। একইসঙ্গে উপকারভোগীদেরকে ৫৭ কোটি ৯ লাখ টাকা আদায় করে দিতে সক্ষম হয়েছে। ১ হাজার ৩৩৪ টি মোকদ্দমা বিকল্প পদ্ধতিতে বিরোধ নিষ্পত্তির ফলে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
মামলা নিষ্পত্তি প্রায় দেড় লাখ :
গত এক যুগে পারিবারিক, দেওয়ানি, ফৌজদারিসহ সর্বমোট ১ লাখ ৩৭ হাজার ৬৫৪ টি লিগ্যাল এইডের মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এ সময়ে সুপ্রিম কোর্টে ২ হাজার ৪৬ টি মামলায় সরকারি খরচে আইনি সহায়তা দেয়া হয়েছে। আর ১৯ হাজার ৭৩৭ জনকে আইনি পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
১৫ হাজার শ্রমিককে আইনি সহায়তা :
ঢাকা ও চট্টগ্রামের শ্রম আদালতে স্থাপিত
দুটি শ্রমিক আইন সহায়তা সেলের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৯৫৫ জনকে আইনি পরামর্শ প্রদান, ৩ হাজার ৩৭০ টি মামলা দায়ের, ৩০০ টি মামলা নিষ্পত্তি, ২৫৮ জনকে চাকুরিতে পুনর্বহাল এবং ৭১ টি সাময়িক বরখাস্তের আদেশ বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া ১ হাজার ১৭৭ টি বিরোধ বিকল্প পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ ৪ কোটি ৭৯ লক্ষ টাকা আদায় করা হয়েছে।
করোনাকালে আইন সহায়তা:
এক বছরের করোনাকালে ৫৪ হাজার ৩০৩ জনকে আইনি পরামর্শ প্রদান, ২৩ হাজার ১৬৯ জনকে আইনগত সহায়তা প্রদান এবং ১৩ হাজার ৩৫৪টি মামলা বিকল্প বিরোধ পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। একই সময়ে সংস্থাটি ক্ষতিগ্রস্ত বিচারপ্রার্থীগণকে ২৪ কোটি ৩২ লক্ষ ৩৯ হাজার ৯৮০ টাকা আদায় করে দিতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও অন্যান্যভাবে ৯ হাজার ৬৪৫ টি মামলা নিষ্পত্তি করেছে। এ সময়ে ৭ হাজার ৩৬০ জন কারাগারে আটককৃত ব্যক্তিকে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।