বিয়ের আগে জরুরি স্বাস্থ্য পরীক্ষা

tests-reuters-151219-01

নতুন জীবন যাতে স্বাস্থ্যকর হয় সে জন্য বিয়ের আগেই বর ও কনের কয়েকটি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত।

দেনমোহর নিয়ে দরকষা, গয়না, শাড়ি, শেরওয়ানি কেনা, বিয়ের খানাদানা কী হবে- এসব নিয়ে যত ব্যস্ততা দেখা যায় ততটাই এড়িয়ে যাওয়া হয় বিয়ে করতে যাওয়া বর ও কনের স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়টা। অথচ স্বাস্থ্যকর সুখের জীবন শুরু করতে এই বিষয়টাই আগে নজরে আনা প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে এই বিষয়ের ওপর প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানানো হল বিস্তারিত।

বন্ধ্যত্ব পরীক্ষা: এই পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যাবে নারীর ডিম্বাশয় কিংবা পুরুষের অণ্ডকোষের স্বাস্থ্য এবং পুরুষের শুক্রাণুর পরিমাণ সম্পর্কে। কারণ এই বিষয়গুলোই নারী-পুরুষের প্রজনন ক্ষমতার অবস্থা জানান দেয়। তাই ভবিষ্যতে সন্তান নিতে পারা কিংবা স্বাভাবিক যৌনজীবন পাওয়ার জন্য এই পরীক্ষা করানো জরুরি। নিজের প্রজননক্ষমতা সম্পর্কে আগেই জানা থাকলে সঠিক চিকিৎসা নেওয়া কিংবা অসুখ চিকিৎসাযোগ্য না হলে বিয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়।

রক্তের গ্রুপ পরীক্ষা: আপাত দৃষ্টিতে এই পরীক্ষাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে নাও হতে পারে। তবে ভবিষ্যতে সন্তানের সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান হওয়ার জন্য বাবা-মায়ের রক্তের ‘আরএইচ ফ্যাক্টর’ বা ‘রিসাস ফ্যাক্টর’ একই হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্বামী-স্ত্রীর রক্তের গ্রুপ পরস্পরের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে গর্ভাবস্থায় নানান জটিলতা দেখা দিতে পারে। বাবা-মায়ের ‘আরএইচ ইনকম্প্যাটিবিলিটি’ থাকলে দ্বিতীয় সন্তানের জন্য তা প্রাণঘাতি হতে পারে। কারণ, এমনটা হলে মায়ের রক্তের ‘অ্যান্টিবডি’ তার গর্ভের সন্তানের রক্তকণিকা ধ্বংস করবে।

বংশগত রোগের পরীক্ষা: অসংখ্য বংশগত রোগ বাবা-মায়ের জিনগত বৈশিষ্ট্য থেকে সন্তানের জিনগত বৈশিষ্ট্যের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। তাই হবু স্বামী কিংবা স্ত্রীর এমন কোনো ঝুঁকি আছে কি-না তা সময় থাকতেই জেনে নেওয়া জরুরি। এই রোগগুলোর মধ্যে আছে স্তন ক্যান্সার, অন্ত্রের ক্যান্সার, বৃক্কের রোগ, ডায়াবেটিস ইত্যাদি। সময় মতো পরীক্ষা করানো হলে প্রতিষেধনের বদলে রোগ প্রতিরোধ করার ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

এসটিডি টেস্ট: যৌনমিলনের মাধ্যমে সংক্রমিত হয় এমন রোগগুলোকে বলা হয় ‘সেক্সুয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ (এসটিডি)’। সারা জীবনের জন্য কারও সঙ্গী হওয়ার আগে নিজের কিংবা হবু সঙ্গীর এমন কোনো রোগ আছে কি-না তা জেনে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এই ধরনের রোগের মধ্যে আছে এইচআইভি/এইডস, গনোরিয়া, হার্পিস, সিফিলিস, হেপাটাইটিস সি ইত্যাদি। এদের মধ্যে কিছু রোগ প্রাণঘাতি, কোনোটার আবার কোনো চিকিৎসা নেই। তাই বিয়ের আগে প্রতিটি মানুষের উচিত ‘এসটিডি টেস্ট’ করানো।

এই পরীক্ষাগুলোর মধ্যে কোনোটায় খারাপ সংবাদ আসলে তা দুজনের জন্যই একদিক থেকে মঙ্গল। আর সেই দিকটি হল বিয়ের পর খারাপ সংবাদ পেলে সারাজীবন যে অপরাধবোধ, দুশ্চিন্তা, মানসিক অত্যাচার আপনাকে সইতে হত তা থেকে মুক্তি পেলেন।

পাশাপাশি রোগের ঝুঁকি কিংবা রোগ সম্পর্কে প্রাথমিক অবস্থাতেই অবগত হয়ে গেলেন, যা তার চিকিৎসাকে আরও কার্যকর করবে। হয়ত এই পরীক্ষার কারণেই ভবিষ্যত প্রাণঘাতি রোগ থেকে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে পরিত্রাণ মিলবে। তবে বিয়ে করেই যে পরীক্ষা করাতে হবে এমন কোনো কথা নেই, নিজের মতো যেকোনো সময় এই পরীক্ষাগুলো করে রাখা যেতে পারে।

Pin It