বৃষ্টিতে চামড়া নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের

1688050983.chamra

ঈদের দিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার কোরবানির চামড়া দুপুর থেকে ব্যবসায়ীরা নিয়ে আসছেন লালবাগের পোস্তায়। সেখানে আড়তদাররা মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কেনেন।

এ বছর চামড়ার দাম ভালো হলেও টানা বৃষ্টির জন্য অনেক চামড়া নষ্ট হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

তারা বলছেন, মৌসুমি ব্যবসায়ী কম আসায় পোস্তায় চামড়া আমদানি কমে গেছে। আর সকাল থেকে টানা বৃষ্টির কারণে ঢাকার চামড়া আনতে পারলেও ঢাকার বাইরের চামড়া সময়মতো আমাদের কাছে আনতে পারবে না। গত বছরের চেয়ে এ বছর কাঁচা চামড়া বেশি নষ্ট হবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

বৃহস্পতিবার (২৯ জুন) লালবাগের পোস্তায় গিয়ে দেখা যায়, বিকেল ৩টার পর থেকেই সেখানে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে কোরবানির চামড়া আসছে। আড়তদারদের হাঁকডাকে সরব হয়ে উঠেছে লালবাগের শায়েস্তা খান, রাজনারায়ণ ধর রোডসহ আশপাশের বিভিন্ন সড়ক। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন এলাকার মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া সংগ্রহ শুরু করেছেন। রাত যত বাড়বে পোস্তায় কেনাবেচা তত জমবে।

এ দিন বড় আকারের প্রতিটি চামড়া ৮৫০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং ছোট ও মাঝারি আকারের চামড়াগুলো ৪৫০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। গড়ে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর চামড়ার দাম বাড়লেও লবণের দাম ও শ্রমিক খরচ ৭০ টাকার মতো বেড়েছে।

পোস্তার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলা জানা যায়, পোস্তায় গভীর রাত পর্যন্ত চামড়া সংগ্রহ করা হবে। এখানে চামড়া সংগ্রহের পর প্রথমে লবণজাত করা হবে। পরে তারা সাভারের ট্যানারিগুলোতে পাঠিয়ে দেবেন। এ বছর সরকার ছোট ও মাঝাড়ি সাইজের চামড়ার দাম ৬০ থেকে ৮০ টাকা ও বড় আকারের চামড়ার দাম ১৫০ টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এ বছর বৃষ্টির জন্য রাতে যে চামড়াগুলো আসবে সেটার গুণগত মান ঠিক থাকবে না। অনেক চামড়া পচে যাবে। আবার এ বছর মানুষের হাতে টাকা না থাকায় কোরবানিও অনেক কম হয়েছে। ফলে দেশের সবচেয়ে বড় কাঁচা চামড়ার আড়তে গতবারের মতো এবারো লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ হবে না বলে আশঙ্কা ব্যবসায়ীদের।

এ বিষয়ে ছমির হানিফ অ্যান্ড সন্সের মালিক হাজী মো. ছমির উদ্দিন বলেন, ৪৮ বছর ধরে চামড়ার ব্যবসা করছি। এখন পোস্তায় আগের মতো আর চামড়া আসে না। অনেক চামড়া সরাসরি ট্যানারিতে চলে যায়। তবে এ বছর টানা বৃষ্টি হওয়ায় অনেক চামড়া সময়মতো লবণ দিতে না পারলে নষ্ট হবে। ঢাকার চামড়া সময়মতো লবণ দেওয়া সম্ভব। কারণ এই চামড়াটা সন্ধ্যার মধ্যেই চলে আসবে। কিন্তু রাত ৮টার পর যে চামড়া আসবে, সেটার গুণগত মান ধরে রাখা যাবে না। কারণ একটা পশু সকাল ১০টায় কোরবানি হলে সেই চামড়া যদি রাত ৮টা বা ১০টায় নিয়ে আসে তাহলে চামড়ায় পচন ধরে যায়। সেই চামড়া কোনো আড়তদার নিতে চায় না। তখন ফড়িয়াড়া জোর করে দিয়ে যায়। তখন আমরা যেটা ভালো আছে, সেটার দাম দেই। বিষয়টিকে অনেকে সিন্ডিকেট বলেন। আসলে কাঁচা চামড়া নিয়ে সিন্ডিকেট করার সুযোগ নেই। আমি যে চামড়া রাখবো সেটা তো আমাকে বিক্রি করতে হবে।

আমীর অ্যান্ড ব্রার্দাসের মালিক হাজী মো. আমীর হোসেন বলেন, সরকার এ বছরও লবণযুক্ত চামড়ার দাম ৩ টাকা বাড়িয়েছে। আমরা যেহেতু কাঁচা চামড়া কিনছি, প্রতি ফুটে ৫/৭ টাকা কমে কিনছি। তবে সেটা গত বছর থেকে প্রতি পিস চামড়ায় ৬০ থেকে ৮০ টাকা বেশি দিচ্ছি। এ বছর আমাদের টাকা বা লবণের কোনো সংকট নেই। তবে পোস্তায় আগের মতো আর চামড়া আসে না। ফড়িয়ারা সরাসরি ট্যানারিতে চামড়া নিয়ে যায়। চামড়া নিয়ে আসলে কেউ ফেরত যাবে না। সবাই ন্যায্য দাম পাবে। তবে অবশ্যই চামড়ার গুণগতমান ঠিক থাকতে হবে। কারণ টানা বৃষ্টিতে সারা দিন চামড়াগুলো বৃষ্টিতে ভিজেছে। যখন ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা পার হবে তখন চামড়াগুলোর টেম্পার থাকবে না, পচন ধরে যাবে। জেনেশুনে কেউ পচা চামড়া নেবে না। যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লবণ দিয়ে আমাদের কাছে নিয়ে আসে, তাহলে কোনো চামড়া ফেরত যাবে না। এ বছর আমার মনে হয় ঢাকার ভেতরের চামড়া নষ্ট না হলেও ঢাকার বাইরের চামড়া নষ্ট বেশি হবে। মূলত বৃষ্টির কারণে গত বছরের চেয়ে বেশি চামড়া নষ্ট হবে।

ঢাকার শহীদনগর থেকে ৮টি চামড়া নিয়ে এসেছেন মো. দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, প্রতিটি চামড়া ৮৫০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। সবগুলো চামড়াই বড় ছিল। ভাবছিলাম এ বছর যেহেতু সরকার দাম বাড়িয়েছে তাই প্রতিটি চামড়ার দাম এক হাজার টাকার বেশি পাব। কিন্তু সবগুলো চামড়া বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। সেজন্য দাম একটু কম পেলাম।

পুরান ঢাকার সুত্রাপুর থেকে আব্দুল মতিন সারা দিন ঘুরে ৪৮টি চামড়া নিয়ে এসেছেন পোস্তায়। তিনি বলেন, প্রতিটি চামড়া গড়ে ৭৫০ টাকায় বিক্রি করছি। গত বছর গড়ে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি করেছি। এ বছর চামড়ার আমদানি কম হওয়ায় দাম ভালো যাচ্ছে। তবে বৃষ্টির জন্য চামড়ার টেম্পার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। রাত যত হবে চামড়াও তত নষ্ট হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি আফতাব খান বলেন, দুপুরে ঢাকা শহর ও এর আশেপাশের কোরবানির পশুর চামড়া পোস্তায় আসতে শুরু করেছে। এ বছর মৌসুমি ব্যবসায়ীদের আনাগোনা কম। তবে মাদ্রাসা ভিত্তিক ব্যবসায়ীদের বেশি দেখা যাচ্ছে। ঈদের তিন দিন সাড়ে ৩ লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করতে পারব। সব মিলিয়ে এ বছর পোস্তায় ৩০ থেকে ৩১ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহ করা হবে। চামড়ার দাম গত বছরের তুলনায় বেড়েছে। পাশাপাশি লবণের দাম বস্তায় ৩৫০ টাকা ও শ্রমিকের মজুরিও বড়েছে। ফলে আমাদের সংরক্ষণ খরচও বড়েছে।

তিনি বলেন, এ বছর বৃষ্টির কারণে রাতে যে চামড়াগুলো আসবে সেগুলোর গুণগত মান ঠিক থাকবে না। আবার দেখা যাবে অনেক চামড়ায় পচন ধরেছে। সেসব চামড়া ব্যবসায়ীরা কিনবে না। সেই চামড়াটা নষ্ট হবে। আমরা আশঙ্কা করছি বৃষ্টির জন্য এ বছর গত বছরের চেয়ে বেশি চামড়া নষ্ট হবে। চামড়া আমাদের রাষ্ট্রীয় সম্পদ, এটা রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। এজন্য গত কয়েক বছর ধরে আমরা সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছি, পশু কোরবানি হওয়ার ৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিটি চামড়ায় যেন লবন দেওয়া হয়। তাহলে চামড়ার গুণগত মান বজায় থাকবে।

Pin It