অনেক তো হলো শিক্ষণীয়, মজার বা হাসির গল্প, এবার একটু আলাদা ভূতুড়ে গল্প শুনলে কেমন হয় !
আজ আমার জীবনে ঘটে যাওয়া এক গল্প লিখব। নতুন বাড়ি কিনেছি। অনেক বড় বাড়ি, বাড়ির সামনে বিশাল এক খালি জায়গা দেখে মনে হচ্ছিল ওখানেও বুঝি আগে কোন বাড়ি ছিল।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য মাত্র অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে এ বাড়ি আমার কাছে বিক্রি করা হয়েছে। সত্যি বলতে কি, রাত জেগে গল্প লেখা আমার এক অভ্যাস। মায়ের সঙ্গে যখন থাকতাম তখনও সে আমাকে এর জন্য খুব বকাবকি করত। আমার মন্দ লাগে না। প্রায় দুইটা বাজে। বিদ্যুৎ চলে যায়। আমি আবার বিজ্ঞানের ছাত্র, এসব ভূত-টুতে বিশ্বাস করি না। নির্ভয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে আবার গল্প লিখতে বসে পড়লাম।
কেন জানি হঠাৎ করে বৃষ্টি নেমে এলো। আকাশে এত তারা জ্বলজ্বল করছিল, অথচ হঠাৎ বৃষ্টি! যাই হোক, হয়তো আবহাওয়ার খেলা। মোমবাতি হঠাৎ নিভে গেল, আমি আবার যুক্তি বের করলাম- হয়তো পুরনো মোমবাতি বলে নিভে গেছে।
মোমবাতিটি আবার জ্বালালাম। অনুভব করলাম আমার পেছনে জোরে একটা বাতাস বয়ে গিয়েছে। আবারও যুক্তি বের করলাম হয়তো বৃষ্টির কারণে। জানালা তো সব বন্ধ আর বিদ্যুৎতো নেই, তাহলে…! আজেবাজে চিন্তা আসতে লাগল মাথায় আমার।
বাড়িওয়ালা চাচার দুই মেয়ে ছিল। একটি মেয়ে শাড়ি পরতে খুব পছন্দ করত, আরেকটি মেয়ে পুতুল খেলতে পছন্দ করত।
একটু থমকে গেলাম, দেখলাম মোমবাতিতে আমার ছায়া দেখা যাচ্ছে। আমি ছায়ার সঙ্গে একটু খেললাম। হঠাৎ দেখি আমার ছায়া একটা মেয়ে হয়ে গিয়েছে। কিন্তু কীভাবে! আমি তো আর মাথায় ঝুঁটি করি না, শাড়ি পরি না! তাহলে কীভাবে আমার ছায়া মেয়ে হয়ে গেলো?
কীসের মোমবাতি! মোমবাতি ফেলে দৌড়। ডানে বামে না দেখে উপরের তলায় উঠে বিছানায় শুয়ে পড়লাম, ভাবলাম হয়তো হ্যালোসিনেশন। এবার গরম মনে হচ্ছিল। খুব সাহস নিয়ে পিছিয়ে তাকিয়ে দেখলাম আমার পাশে একটা পুতুল শুয়ে আছে। একটা চিৎকার আর ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলাম পুতুলটিকে।
এবার বিছানা থেকে উঠে জানালার সামনে দাঁড়ালাম। বৃষ্টির মাঝে আবছা আবছা খালি জায়গাটি দেখতে পাচ্ছি। চোখের পলকে দেখলাম ওখানে একটি বিশাল বাড়ি। চোখ দুটো ভালো করে পরিষ্কার করে চশমাটি পরে নিলাম। কিরে কই! বাড়ি তো ওখানেই আছে। কীভাবে! ওখানে তো বাড়ি থাকার কথা নয়, ওটা তো খালি।
এই ভাবতে ভাবতে সকাল হয়ে গেলো। ঘুমিয়ে পড়েছিলাম মেঝেতে, চশমাটি তুলে পরে নিলাম। আবার তাকিয়ে থাকলাম, বাইরে দেখি ওখানে কোন বাড়ির চিহ্ন নেই। আগের বাড়িওয়ালাকে ডাকলাম, সব জানতে চাইলাম এবং সব বললাম।
ভদ্রলোক খুব ঘামছে। এবার মুখ খুললো সে। ভদ্রলোক বললেন, এ বাড়ির সামনে যে বাড়ি ছিল সে বাড়িওয়ালা চাচার দুই মেয়ে ছিল। একটি মেয়ে শাড়ি পরতে খুব পছন্দ করত, আরেকটি মেয়ে পুতুল খেলতে পছন্দ করত। ভদ্রলোক বলল, তার চাচার এক শত্রু বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর বাড়িটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আর মারা যায় সেখানে উপস্থিত দুই মেয়ে।
আমি এবার চুপ হয়ে গেলাম। ভদ্রলোক আর কিছু না বলে ঘাড় ঘুরিয়ে চলে গেল আর কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে ছিলাম আমি। অবাক করা বিষয় লোকটি হঠাৎ অদৃশ্য হয়ে গেলো। মনে পড়লো ভদ্রলোকও তো আজ আর জীবিত নেই, সে এসেছিল তার প্রতিবিম্ব হয়ে।
তারপর থেকে আমি আর কখনও উঠোনে বাড়িটি আর ওই মেয়ে দুটোকে দেখিনি। বৃষ্টির রাতে তাদের ছায়া দেখা যায়।