টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) অর্জনের বিষয়ে দ্বিতীয় অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এ প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, বেশ কিছু সূচকে বাংলাদেশ পিছিয়ে রয়েছে। বিশেষ করে বাল্যবিবাহ রোধ, ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের নিয়োগ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অনেক বিষয়েই পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে গতকাল ‘টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট :বাংলাদেশ অগ্রগতি প্রতিবেদন ২০২০’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও গণমাধ্যমকে অবহিত করা হয়। জিইডির সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলমের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় অবহিতকরণ ও মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, পরিকল্পনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব আসাদুল ইসলাম ও পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন। সম্মানীত অতিথি ছিলেন ইউএনডিপির আবাসিক প্রতিনিধি সুদীপ্ত মুখার্জি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এসডিজির অগ্রগতি পরিমাপের ক্ষেত্রে অনেক সূচকের জন্য প্রয়োজনীয় উপাত্তের ঘাটতি রয়েছে। এ ঘাটতির কথা আর শুনতে চাই না। উপাত্ত প্রস্তুত করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোকে (বিবিএস) এ বিষয়ে ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে হবে। কারণ, সরকারের সমন্বিত আনুষ্ঠানিক উপাত্ত প্রণয়নের জন্য তারা আইনত দায়বদ্ধ।
প্রতিবেদনে বিভিন্ন অগ্রগতির বিষয়ে তিনি বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন, নারী শিক্ষার উন্নয়ন, স্বাস্থ্য খাতের নানা বিষয়ে অগ্রগতি সাধনের পাশাপাশি সামাজিক অনেক সূচকে বাংলাদেশ পার্শ্ববর্তী অনেক দেশের তুলনায় এগিয়ে থাকলেও এখানে আয়বৈষম্য উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। এ বিষয়টি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এ বৈষম্য দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ অত্যাবশ্যক। তিনি বলেন, একটি পীড়াদায়ক বিষয় হলো এখনো দেশে বাল্যবিবাহের ব্যাপকতা বিরাজমান। এটি যে কোনো মূল্যে কমিয়ে আনতে হবে। এছাড়া শিশুদের জন্য এখনো পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়নি। এসব বিষয়ে অবশ্যই দ্রুত অগ্রগতি অর্জন করতে হবে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী এসডিজির ১৭টি সূচকের মধ্যে ১২টির বাস্তবায়নেই দুর্বল অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। দারিদ্র্য বিলোপের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সঠিক পথেই রয়েছে। ক্ষুধামুক্তির লক্ষ্যের ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকলেও অগ্রসরমান আছে। সুস্বাস্থ্য ও সামাজিক কল্যাণের ক্ষেত্রে পরিমিতভাবে দুর্বল, তবে অগ্রসরমান। অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষার ক্ষেত্রে অপ্রতুল উপাত্তের কারণে মূল্যায়ন করা যায়নি। জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়নে পরিমিত মাত্রায় দুর্বল, তবে অগ্রসরমান। নিরাপদ পানি ও পয়োনিষ্কাশনে অপ্রতুল উপাত্তের কারণে মূল্যায়ন সম্ভব হয়নি। স্থিতিশীল, অন্তর্ভুক্তিমূলক, টেকসই প্রবৃদ্ধি এবং শোভন কর্মসংস্থানের লক্ষ্যের ক্ষেত্রে দুর্বল এবং স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে। অভিঘাতসহিষ্ণু অবকাঠামো, টেকসই শিল্পায়ন ও উদ্ভাবনে পরিমিত মাত্রায় দুর্বল, অগ্রসরমান রয়েছে। অসমতা হ্রাসে অপ্রতুল উপাত্ত থাকায় মূল্যায়ন করা যায়নি। টেকসই নগর ও জনবসতির ক্ষেত্রে দুর্বল ও স্থবির অবস্থা বিরাজ করছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসডিজি বাস্তবায়নে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে সম্পদ সংহতকরণ ও আরো মানোন্নয়ন করা। এছাড়া অভ্যন্তরীণ সম্পদ ব্যবহারের সম্ভাবনা পুরোপুরি কাজে লাগানো, ভ্যাট আদায়ে কর্মী ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার সংকট, সক্ষমতা বিনির্মাণে প্রচুর বিনিয়োগ, অবৈধ অর্থপ্রবাহ বন্ধ, এলডিসি উত্তরণে কম সুদে ঋণ ও অন্যান্য সহায়তা কমে যাওয়া, প্রবাসী আয়ের উেস বৈচিত্র্য না হওয়া, সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা অন্যতম চ্যালেঞ্জ।