বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর মতো মাথা গরম না করার পরামর্শ দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পাশাপাশি বিএনপিকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, বেশি কথা বললে হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেবো।
বেশি কথা বললে খুঁজে খুঁজে বের করব, বিএনপির কে কে ভারতীয় পণ্য ব্যবহার করে।
সোমবার (২৫ মার্চ) বিকেলে গণহত্যা দিবস স্মরণে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে যৌথভাবে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আজ দুপুরবেলা নয়াপল্টনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ করেছেন। আমি জানতে চাই, মির্জা ফখরুল আপনি একাত্তরে কোথায় ছিলেন? একাত্তরে কোথায় মুক্তিযুদ্ধ করেছেন? কোন সেক্টরে আপনি যুদ্ধ করেছেন? ২৫ মার্চের গণহত্যা নিয়ে তারা একটি শব্দও উচ্চারণ করেনি। তারা কারা? তারা পাকিস্তানের দালাল। মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ভুয়া।
তিনি বলেন, যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, তারা কোনো দিনও মুক্তিযোদ্ধা হতে পারে না। তারা দালাল। এ দালালদের জন্য ২৫ মার্চের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আজও আমরা পাইনি। এ দালালদের জন্য আজও আমরা আমাদের ন্যায্য পাওনা পাইনি। পাকিস্তানের নাগরিকেরা বছরের পর বছর আমাদের ঘাড়ে বোঝা হয়ে আছেন। কথা দিয়েও পাকিস্তান তাদের নাগরিকদের ফেরত নেয়নি।
তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান একাত্তরের গণহত্যার জন্য একটিবারও দুঃখ প্রকাশ করেনি। পাকিস্তানের কোনো সরকার, সরকারি দল প্রকাশ্যে যুদ্ধাপরাধের জন্য বাংলাদেশের জনগণের কাছে এ পর্যন্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। সেই পাকিস্তানের যারা দালালি করে, তারা স্বাধীনতার শত্রু। বিএনপি পাকিস্তানের দালালি করে, তারা আমাদের শত্রু। এই শত্রুরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে, জেলে চার নেতাকে হত্যা করে। এই বিএনপি আমাদের জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ করে, ৭ মার্চ নিষিদ্ধ করে, ১৬ ডিসেম্বরের নায়ককে নিষিদ্ধ করে, ২৬ মার্চের স্বাধীনতার স্থপতিকে নিষিদ্ধ করে। কে করেছিলেন? জিয়াউর রহমান।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ক্ষমতার দিবাস্বপ্ন দেখছে তারা। ফখরুল সিঙ্গাপুর থেকে এসে দিবাস্বপ্নে বিভোর। বিদেশে আমাদের (আওয়ামী লীগ) বন্ধু আছে, প্রভু না। বিএনপির প্রভু আছে। যারা তাদের স্বার্থের পক্ষে ওকালতি করে। আমাদের বন্ধুরা একাত্তরেও আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। বাংলাদেশের নির্বাচনে কোনো বিদেশি বন্ধু হস্তক্ষেপ করেনি। বিএনপির প্রভুরা যখন এ নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত করেছিল, তখন আমাদের বন্ধুরা আমাদের পক্ষে, নির্বাচনের পক্ষে, শেখ হাসিনার পক্ষে সেদিন দাঁড়িয়েছিল।
তিনি বলেন, আজ বিএনপির লোকদের বাড়িঘরে গিয়ে বুঝতে হবে, রান্নাঘরে যা যা তারা ব্যবহার করে, এর মধ্যে ভারতীয় পণ্য কোনটি কোনটি। রান্নাঘরে যান, প্রত্যেকের ঘরে ভারতীয় পণ্য। শোয়ার ঘরে যান, প্রত্যেকের শাড়ি-কাপড় ভারতীয় পণ্য। এখন রিজভী রাজনীতি করার জন্য গা থেকে কাশ্মীরি শাল ফেলে আগুনে পুড়িয়েছেন। আরও কয়টি শাল রিজভীর ঘরে আছে, কে জানে! ভারতীয় পণ্য ছাড়া খাবার জোটে না।
বিএনপি মহাসচিবের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল সাহেব, আপনিও রিজভীর মতো মাথা গরম করবেন না। বেশি কথা বললে আমরা হাটে হাঁড়ি ভেঙে দেবো। বেশি কথা বললে খুঁজে খুঁজে বের করব, বিএনপির লোকেরা কী কী ভারতীয় পণ্য ব্যবহার করে।
তিনি আরও বলেন, বিএনপির আন্দোলন ভুয়া, বিএনপির অভ্যুত্থান ভুয়া, বিএনপির ২০ দফা ভুয়া, বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ভুয়া। ডাবল ভুয়া। এর চেয়ে ভুয়া আর কিছু নেই। মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা নেই, বঙ্গবন্ধু নিয়ে কথা নেই, গাজা-ইসরায়েল নিয়ে কথা বলে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এস এস মান্নান কচির পরিচালনায় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাড. কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির, জাতীয় সংসদের হুইপ সানজিদা খানম, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকি প্রমুখ।