প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স সুবিধাভোগীর কাছে দ্রুত পৌঁছে দিতে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ‘বিশেষ সুবিধা’ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এখন থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনো প্রবাসী রেমিটেন্স পাঠালে সেই টাকা আসার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত সুবিধাভোগীর কাছে পাঠিয়ে দেবে।
সোমবার ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা প্রবাসীদের রেমিটেন্স মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) হিসাবের মাধ্যমে বিতরণের সীমা নির্ধারণ করে দিয়ে একটি সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো ‘বৈধ উপায়ে প্রেরিত রেমিট্যান্স নগদ প্রণোদনাসহ সুবিধাভোগীর মোবাইল হিসাবে বিতরণ’ শীর্ষক সার্কুলারে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং চ্যানেলে আসা রেমিটেন্সের অর্থ নগদ প্রণোদনাসহ সর্বোচ্চ ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা ব্যাংক কর্তৃক সরাসরি সুবিধাভোগীর এমএফএস হিসাবে প্রদান করা যাবে।
রেমিটেন্সের অর্থ ব্যতীত এমএফএস লেনদেনের অন্য সব শর্ত চলতি বছরের ১৯ মে জারি করা সার্কুলার অনুসরণ করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
১৯ মে’র সার্কুলারে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন সীমা আগের চেয়ে দ্বিগুণ করা হয়। সেইসঙ্গে অ্যাকাউন্টে দিনে জমা বা ক্যাশ ইন-এর পরিমাণও দ্বিগুণ করা হয়েছে।
মদিনা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে বিলমাসিহ নামক স্থানে মরুভূমির মাঝে একটি কৃষিখামারে কাজ করছেন বাংলাদেশিরা।
সেই থেকে একজন গ্রাহক তার অ্যাকাউন্টে দিনে পাঁচ বারে ৩০ হাজার টাকা ক্যাশ ইন বা জমা করতে পারছেন। আর মাসে ২৫ বারে সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা ক্যাশ ইন করা যায়।একইসঙ্গে দিনে সর্বোচ্চ পাঁচ বারে ২৫ হাজার টাকা তোলা বা ক্যাশ আউট করা যায়। মাসে ২০ বারে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করা যাচ্ছে।
প্রবাসীদের পাঠানো টাকা দ্রুত তার পরিবার-পরিজনের কাছে পৌঁছে দিতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এমএফএস একটি ক্রম বিকাশমান সেবা, যা বিগত কয়েক বছর যাবৎ আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে।
“দেশের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির সাথে তাল মিলিয়ে এ সেবা এখন ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে আসা রেমিটেন্স সঙ্গে সঙ্গে সুবিধাগোগীর কাছে পৌছে দেবে।”
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে দেশের প্রধান মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশ।
প্রতিষ্ঠানটির হেড অব কর্পোরেট কমিউনিকেশন্স শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বৈধপথে মানি ট্রান্সফার হাউজ ও ব্যাংকিং চ্যানেল হয়ে এমএফএসের মাধ্যমে দেশে রেমিটেন্স পাঠানোর সুবিধা দ্রুত সবার কাছে জনপ্রিয় হয়েছে। সরকার ঘোষিত ২ শতাংশ প্রণোদনা প্রবাসীদের বৈধপথে রেমিটেন্স পাঠাতে আরো আগ্রহী করে তুলেছে।
“তবে একবারে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পাঠানোর সীমা নির্ধারিত থাকায় অনেকেই তাদের আয়ের বাকি অর্থ অনানুষ্ঠানিক পথে পাঠানোর চেষ্টা করতেন। এখন সেটা কমবে। অর্থাৎ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা আসার পরিমাণ কমবে।”
বিকাশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতিই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে দাবি করেন ডালিম।
আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সময়োপযোগী সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রবাসীদের বৈধপথে রেমিটেন্স পাঠাতে আরো বেশি উৎসাহিত করবে।”
প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। প্রবাসীরা এখন ১০০ টাকা দেশে পাঠালে যার নামে টাকা পাঠাচ্ছেন তিনি ঔ ১০০ টাকার সঙ্গে ২ টাকা যোগ করে ১০২ টাকা তুলতে পারছেন।
বাজেটে এ জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি নীতিমালা ঘোষণা করেছে। ৬ অগাস্ট তা প্রকাশ করা হয়েছে; তাতে বলা হয়েছে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সে প্রণোদনা পেতে ১ হাজার ৫০০ ডলার পর্যন্ত কোন ধরনের কাগজপত্র লাগবে না।
অর্থাৎ বর্তামান বাজার দরে এক লাখ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কোন ধরনের কাগজপত্র লাগবে না। এই টাকাটা দ্রুত রেমিটেন্সভোগীর কাছে পৌঁছে দিতেই ‘বিশেষ সুবিধা’ দেওয়া হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা।
তবে রেমিটেন্সের পরিমাণ এই অংকের বেশি হলে প্রাপককে প্রেরকের পাসপোর্টের কপি এবং বিদেশী নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের নিয়োগপত্র অবশ্যই জমা দিতে হবে।আর ব্যবসায়ী ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবসার লাইসেন্সের কপি দাখিল করতে হবে।
এদিকে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রবাহে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রয়েছে। সদ্য সমাপ্ত নভেম্বর মাসে ১৫৫ কোটি ৫২ লাখ (১.৫৫ বিলিয়ন) ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন তারা। এই অংক গত বছরের নভেম্বরের চেয়ে ৩১ দশমিক ৭৫ শতাংশ বেশি।
আর চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রেমিটেন্স এসেছে ৭৭১ কোটি (৭.৭১ বিলিয়ন) ডলার। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ দশমিক ৬৬ শতাংশ বেশি।
দুই শতাংশ হারে প্রণোদনা, জনশক্তি রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা।