বৈরুতে ঘরহারা তিন লাখ মানুষ, মজুদ খাদ্যের ৮৫% ধ্বংস

massive-blast-rips-beirut-060820-02

লেবাননের রাজধানী বৈরুতকে তছনছ করে দেওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় হতাহতের পাশাপাশি প্রায় তিন লাখ মানুষ গৃহহীন হয়েছেন বলে জানিয়েছেন শহরটির গভর্নর মারওয়ান আবুদ।

মঙ্গলবারের ওই বিস্ফোরণে বৈরুত শহরের অর্ধেক অংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অনেকে আটকে থাকায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা মারওয়ানের।

বিস্ফোরণে লেবাননের মজুদ খাদ্যশস্যের ৮৫ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে বলে বুধবার জানা গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের এ দেশটি আমদানি করা খাদ্যশস্যের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।

খাদ্যশস্যের এখন যা মজুদ আছে তা দিয়ে দেশটি বড় জোর আর এক মাস চলতে পারবে বলে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

ব্রিটিশ এ সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, বুধবারও বৈরুত বন্দরের একাংশ থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে। শহরটির অসংখ্য বাসিন্দা নিখোঁজ স্বজনদের সন্ধানে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

অন্তত ১৩৫ জনের প্রাণ কেড়ে নেওয়া বিস্ফোরণে আহতের সংখ্যাও প্রায় ৫ হাজার, বলছে গার্ডিয়ান। রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে দেখা যাচ্ছে আহতদের উপচে পড়া ভিড়।

লেবাননের সরকার জানিয়েছে, মঙ্গলবারের বিস্ফোরণ নিয়ে চলমান তদন্তের মধ্যেই বৈরুত বন্দরের দায়িত্বে থাকা বেশকিছু কর্মকর্তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে।

কীভাবে এ বিস্ফোরণ হয়েছে তা নিয়ে অস্পষ্টতা থাকলেও লেবানন সরকারের কর্মকর্তারা বলছেন, বন্দরের গুদামে কয়েক বছর ধরে পড়ে থাকা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের কারণেই বিস্ফোরণটি হয়েছে।

ছয় বছর আগে একটি কার্গো জাহাজ থেকে জব্দ করা অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট এতদিন বন্দরের গুদামে কেন পড়ে ছিল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

লেবাননের কাস্টমস প্রধান বাদ্রি দাহের বলেছেন, তার সংস্থা গুদাম থেকে ওই রাসায়নিক পদার্থগুলো সরিয়ে ফেলার জন্য তাগাদা দিলেও ‘কাজ হয়নি’।

সার বানানোর অন্যতম প্রধান উপকরণ অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরক হিসেবেও ব্যবহৃত হয়

মঙ্গলবার বিস্ফোরণের পর যে কমলা রংয়ের ধোঁয়ার মেঘ বৈরুতজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল, সেটি নাইট্রেটের বিস্ফোরণের কারণে হয়েছে বলে মত বিশ্লেষকদের। বিস্ফোরণের কারণে বাতাসে বিষাক্ত নাইট্রোজেন অক্সাইড ছড়িয়ে পড়েছিল বলেও ধারণা তাদের।

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মঙ্গলবারের মতো ভয়াবহ বিস্ফোরণ লেবানন এর আগে দেখেনি।

ব্রিটেনের শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের ধারণা, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমায় ফেলা পারমাণবিক বোমার শক্তির দশভাগের এক ভাগ বৈরুতের বিস্ফোরণে দেখা গেছে।

“সন্দেহাতীতভাবেই এটি ইতিহাসের অন্যতম বড় অ-পারমাণবিক বিস্ফোরণ,” বলেছেন তারা।

বিস্ফোরণে নিহতদের স্মরণে তিন দিনের শোক পালন করছে লেবানন। দুই সপ্তাহের জন্য জারি হয়েছে জরুরি অবস্থাও।

নেদারল্যান্ডসের জাতিসংঘ সমর্থিত বিশেষ ট্রাইব্যুনাল লেবাননের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরির হত্যাকাণ্ড নিয়ে মামলার রায় ঘোষণা স্থগিত করেছে। শুক্রবার এ রায় দেয়ার কথা ছিল।

যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইরান, ইসরায়েল ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে লেবাননকে সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা পরিস্থিতির উপর নজর রাখছে।

Pin It