পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন আজ ব্যবসায়ে উন্নতি করার দক্ষতা অর্জনে সিউলের সহায়তা চেয়েছেন। বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া ব্যবসায়িক সূচকে চতুর্থ স্থানে রয়েছে, যেখানে ঢাকা এই সূচকে উপরে উঠতে আরও বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণে চেষ্টারত আছে। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন (বাংলাদেশ এবং দক্ষিণ কোরিয়া) দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর উৎযাপন করছি, তখন আমাদের দক্ষিণ কোরিয়ার বন্ধুরা আমাদের জানাতে পারে যে আমরা সহজে ব্যবসয়া কীভাবে আরও ভালো করতে পারি।’
উল্লেখ্য, ২০২৬ সালের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) গ্রুপ থেকে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদায় বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোরণের আগে ঢাকার অর্থনৈতিক কূটনীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে, ব্যবসায়ে উন্নতি করার কাজটি কীভাবে সহজে এগিয়ে নেয়া যায়, সেই সক্ষমতা অর্জন অন্যতম চ্যালেঞ্জ।
মন্ত্রী ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘কোরিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০ বছর’ শীর্ষক এক সেমিনারে বক্তব্য রাখছিলেন। সেমিনারে সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোরিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্কের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষা প্রদর্শন ও আলোচনা করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জাং-কেউন এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত দেলোয়ার হোসেন।
ড. মোমেন তার বক্তৃতায় যথাসময়ে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সম্পন্ন করার বিষয়ে, সিউল যেন বাংলাদেশকে তাদের এতদসংক্রান্ত জ্ঞান বিনিময় করে, সেই আহ্বানও জানান। যেখানে বাংলাদেশে প্রকল্পের কাজ শেষ করতে বিলম্ব হওয়া একটি সাধারণ ঘটন সেখানে দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বব্যাপী ‘চুক্তি সম্পাদনের’ ক্ষেত্রে এক নম্বর দেশ হিসেবে স্থান পেয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুর্দশাগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের মানবিক সহায়তা এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে সহায়তার জন্য তাদের ধন্যবাদ জানান। মোমেন মিয়ানমারের সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ার খুব ভালো সম্পর্ক রয়েছে বলে উল্লেখ কওে বলেন, গত কয়েক বছরে মিয়ানমারে কোরিয়ান বিনিয়োগের পরিমাণ বেশ উল্লেখযোগ্য ।এ বিষয়টি বিবেচনা করে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা যাতে দ্রুত মিয়ানমারে তাদের স্বদেশে ফিরে যেতে পারে, সেজন্য সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে দক্ষিণ কোরিয়াকে আরো উদ্যোগী হওয়ার আহ্বান জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মোমেন বলেন, ‘মিয়ানমারের উপর আপনার (দক্ষিণ কোরিয়ার) কিছু প্রভাব আছে, তাই আমি আপনাকে সেই প্রভাবটি (মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য) ব্যবহার করার জন্য অনুরোধ করছি।’
মন্ত্রী বলেন, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঢাকা সিউলের সঙ্গে সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে আগ্রহী, এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রেক্ষিতে অভিন্ন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে একটি ঘনিষ্ঠ ব্যাপকভিত্তিক অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে চায়।তিনি বলেন, ‘আমরা যখন পঞ্চাশ বছরের বন্ধুত্বের মাইলফলক অতিক্রম করছি, আমি আত্মবিশ্বাসী যে আমরা একসঙ্গে সকলের জন্য একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যত গড়ে তুলতে পারব।’
১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যসহ দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার বলে উল্লেখ করে মোমেন শুল্ক ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশ জুড়ে বাংলাদেশী পণ্যগুলোতে অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকারের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের প্রশংসা করেন এবং বলেন, ‘আমরা আশা করি, দক্ষিণ কোরিয়া সরকার ২০২৬ সালের পরেও আমাদের পণ্যগুলোতে অগ্রাধিকারমূলক বাজার প্রবেশাধিকার প্রসারিত করবে, যাতে আমাদের দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ অনুকূল বানিজ্যিক ভারসাম্যের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়াতে পারে।’ তিনি বলেন, সরকারি উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ)-এর অগ্রাধিকার অংশীদার দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দক্ষিণ কোরিয়ার সহজ ঋণের সবচেয়ে বড় গ্রহীতাদের মধ্যে একটি, এবং ২০২৬ সালে একটি উন্নয়নশীল দেশে আনুষ্ঠানিক উত্তোরণের পরেও অগ্রাধিকার অংশীদার দেশ হিসেবে থাকার আশা করে।
মোমেন বলেন, কোরিয়া বাংলাদেশের জন্য পঞ্চম বৃহত্তম সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) উৎস দেশ যেখানে ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি এফডিআই রয়েছে, বর্তমানে ১৫০টিরও বেশি কোরিয়ান কোম্পানি বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য।
এছাড়া তিনি বলেন, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা পিপিপি মডেলের আওতায় বাস্তবায়নের জন্য ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি মূল্যের চারটি অবকাঠামো প্রকল্প নির্বাচন করেছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা আশাবাদী যে আমাদের অবকাঠামো খাতে দক্ষিণ কোরিয়ার বেসরকারি বিনিয়োগ ২০২৬ এর পরেও আমাদের ইঙ্গিত দেওয়ার সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে আমাদের অর্থনৈতিক ল্যান্ডস্কেপকে আরও উন্নত করবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঢাকা তার অর্থনীতিতে কার্বনের তীব্রতা কমাতে দক্ষিণ কোরিয়ার সাম্প্রতিক জলবায়ু রোডম্যাপ গ্রহণ এবং স্বল্প-কার্বন অর্থনীতিতে উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তাদের উত্তরণে সহায়তা করার প্রদিশ্রুতির প্রশংসা করে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মো. আলী সিদ্দিকী, মো. আনোয়ারুল আজিম ও অদিতি চক্রবর্তী পৃথক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী, বিআইআইএসএসের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর এবং ঢাবি’র গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুল হক এ বিষয়ে আলোচনা করেন।