স্ত্রী রওশন এরশাদ জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গান গেয়ে শোনানোর দুই দিনের মাথায় ভাই জি এম কাদেরকে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যানের পদ থেকে সরিয়ে দিলেন নব্বইয়ে পা রাখা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
শুক্রবার রাতে জাতীয় পার্টির দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এরশাদ বলেছেন, তার অবর্তমানে কাদেরই দলের নেতৃত্বে আসবেন বলে তিনি আশা করেছিলেন। কিন্তু কাদের ‘ব্যর্থ’ হয়েছেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১ ধারা মোতাবেক জি এম কাদেরকে পার্টির সাংগঠনিক দায়িত্ব ও কো- চেয়ারম্যানের পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে।
তবে জি এম কাদের জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে বহাল থাকছেন।
একাদশ জাতীয় সংসদে জি এম কাদের বিরোধী দলের উপনেতার পদে থাকতে পারবেন কি না, তা জাতীয় পার্টির পার্লামেন্টারি কমিটি নির্ধারণ করবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
নির্বাচনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পাওয়া জাতীয় পার্টি সংসদে প্রধান বিরোধী দল। এই সংসদে এরশাদ নিজে বিরোধী দলীয় নেতা এবং ছোট ভাই কাদেরকে উপনেতা করেছেন। দশম সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন এরশাদের স্ত্রী ও পার্টির জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ।
গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ২০ জানুয়ারি চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান এরশাদ। সে সময় এরশাদ জানিয়ে গিয়েছিলেন, তার অনুপস্থিতিতে ভাই জি এম কাদের দলটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি এরশাদ দেশে ফিরলেও কোনো প্রকাশ্য সভায় আসেননি। বুধবার তার ৮৯তম জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে গান গেয়ে শোনান রওশন এরশাদ। ওই অনুষ্ঠানে এরশাদের পাশে জি এম কাদেরকেও দেখা যায়।
এরপর শুক্রবার রাতে জি এম কাদেরকে নিয়ে এরশাদের এই সিদ্ধান্ত এল।
এরশাদ স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়েছে,
“আমি ইতোপূর্বে ঘোষণা দিয়েছিলাম, আমার অবর্তমানে পার্টির কো চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের পার্টি পরিচালনার সার্বিক দায়িত্ব পালন করবেন এবং এটাও আশা করেছিলাম যে, পার্টির পরবর্তী জাতীয় কাউন্সিল তাকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবে। কিন্তু পার্টির সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় আমার ইতোপূর্বকার সেই ঘোষণা প্রত্যাহার করে নিলাম। যেহেতু জনাব কাদের পার্টি পরিচালনা করতে সম্পূর্ন ব্যর্থ হয়েছেন, পার্টির সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে, এবং তিনি পার্টির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করেছেন পার্টির সিনিয়র নেতৃবৃন্দও তার নেতৃত্বে সংগঠন করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির সহ-দপ্তর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান বলেন, “হ্যাঁ, ওই চিঠি স্যার পাঠিয়েছেন।”
এ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে ফোন করা হলে জি এম কাদের বলেন, “এ বিষয়ে এখন কথা বলব না, পরে বলব।”
এ বিষয়ে কথা বলতে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁকে মোবাইলে ফোন করে তাকে পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বারবারই আলোচিত সাবেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। ক্ষমতা দখল করে জাতীয় পার্টি গঠন করা এরশাদ বরাবরই বলে থাকেন, তিনি এই দলের প্রতিষ্ঠাতা এবং তার ইচ্ছায়ই দল চলবে।
কয়েক দিন আগে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জি এম কাদের বলেছিলেন, এই বছরই অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় পার্টির কাউন্সিলে এরশাদের সর্বময় ক্ষমতার বিষয়ে দলের নেতাকর্মীরা ‘সিদ্ধান্ত জানাবেন’।
প্রয়োজনে গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে হলেও দলের শীর্ষ নেতার ক্ষমতার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসার আভাস দিয়েছিলেন তিনি।
এদিকে দলের জ্যেষ্ঠ কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদের সঙ্গে জি এম কাদেরের দ্বন্দ্ব বহু পুরনো।
গত ১ জানুয়ারি এরশাদ এক বিবৃতিতে দলে তার উত্তরসূরি হিসেবে জি এম কাদেরকে মনোনীত করার কথা জানান। এরপর এরশাদের অনুপস্থিতিতে জি এম কাদেরের দায়িত্বভার গ্রহণের পর ‘রওশনপন্থি’ বলে পরিচিত নেতারা নাখোশ মনোভাবও দেখিয়েছেন বিভিন্ন সভায়।
বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জি এম কাদেরও সেই শীতল সম্পর্কেরই আভাস দিয়েছিলেন।
এর আগে ২০১৬ সালেও ভাই জি এম কাদেরকে কো চেয়ারম্যান করলে দলের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে। পরে জ্যেষ্ঠ কো চেয়ারম্যানে পদ সৃষ্টি করে তাতে স্ত্রী রওশন এরশাদকে আসীন করেছিলেন এরশাদ।
তার আগে এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে মহাসচিব করেছিলেন এরশাদ। রওশন সমর্থক হিসেবে পরিচিত বাবলুকে কটাক্ষ করে এক মন্তব্যের জন্য তখন একবার ভাই কাদেরকে সতর্ক করে নোটিস পাঠিয়েছিলেন এরশাদ।
শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বে বারবার বদল আসায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও ক্ষোভ জানান দলের বিভিন্ন সভায়।