• বিপাকে রপ্তানিকারকেরা • বাংলাদেশ ব্যাংক গত ২৫ ফেব্রুয়ারি অফশোর ব্যাংকিং পরিচালনার নীতিমালা জারি করে • এতে বিল নগদায়ন-সুবিধা বন্ধ হয়ে গেছে ।
পণ্য রপ্তানি করে সেই বিল তাৎক্ষণিক নগদায়নের সুবিধা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে নগদ টাকা পাওয়ার সুবিধা বন্ধ হয়ে গেছে, টান পড়তে শুরু করেছে রপ্তানিকারকদের তহবিলে। এতে বিপাকে পড়েছেন পণ্য রপ্তানির সঙ্গে জড়িত দেশের ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে অফশোর ব্যাংকিং পরিচালনার নীতিমালা জারি করার পরই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। নীতিমালাটি করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সময় লেগেছে প্রায় ছয় বছর।
জানা গেছে, রপ্তানিকারকদের মধ্যে পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা পণ্য রপ্তানির পর সেই বিল ব্যাংকের কাছে বিক্রি করে দেন। ব্যাংকগুলোতে অফশোর তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদে রপ্তানিকারকদের বিল কিনে টাকা দেয়। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সংশ্লিষ্ট বিলের পুরোটাই কিনে নিতে পারে। রপ্তানি বিলের টাকা এলে তা থেকে সমন্বয় করে ব্যাংকগুলো। এ সুবিধার ফলে ব্যবসায়ীদের নগদ টাকার প্রবাহ থাকে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক অফশোর ব্যাংকিং পরিচালনার নীতিমালা জারি করে। এর ফলে আগের সব নির্দেশনা বাতিল হয়ে যায়। নতুন নীতিমালায় বিল নগদায়নের সুবিধা রাখা হয়নি। বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকগুলো অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের তহবিল ব্যবহার করে প্রত্যক্ষ ও প্রচ্ছন্ন রপ্তানি বিল নগদায়ন করতে পারে।
জানতে চাইলে নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘রপ্তানিকারকদের নিয়মিত টাকার প্রয়োজন হয়। বিল নগদায়ন-সুবিধা ব্যবহার করেই সবাই নগদ টাকার চাহিদা মেটায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নীতিমালা আমাদের ব্যবসার জন্য অন্তরায়। আশা করছি, রপ্তানির স্বার্থে দ্রুত কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনবে।’
কয়েকটি ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনে জড়িত কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন নীতিমালার পর রপ্তানি বিল নগদায়ন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে আগের যেসব বিল নগদায়ন করা হয়েছে, সে সুবিধা বহাল আছে। ব্যবসায়ীরা ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করেও বিষয়টির কোনো সুরাহা করতে পারছেন না।
বর্তমানে প্রতি মাসে গড়ে ৩০০ কোটি ডলারের ওপরে পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানির অর্থ দেশে আসতে হয় ১২০ দিনের মধ্যে। এ সময়ের মধ্যে রপ্তানির অর্থ দেশে না এলে জরিমানাসহ বিভিন্ন শাস্তির মুখে পড়তে হয় ব্যাংক ও রপ্তানিকারকদের। এ বিপরীতে রপ্তানিকারকেরা প্রতি মাসে ৪০ থেকে ৫০ কোটি ডলার নগদায়ন করে। অর্থাৎ প্রতি মাসে রপ্তানির বিপরীতে ৪ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত টাকা পায় রপ্তানিকারকেরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে গত বছরের মার্চে বিল নগদায়ন করা হয়েছিল ৫০ কোটি ডলার ও এপ্রিলে ৪৯ কোটি ডলার। আর এখন রপ্তানি বিলের নগদায়ন স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭০ কোটি ডলার।
এ বিষয়ে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হালিম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অফশোর নীতিমালার পর রপ্তানি বিল নগদায়নের সুযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। রপ্তানিকারকেরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। আমরা বলেছি, কেন্দ্রীয় ব্যাংক নতুন করে কোনো সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে।’