প্রতিপক্ষ ছিল কঠিন। টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেবারিট নিউ জিল্যান্ড। সেই দলকেই একশর আগে গুটিয়ে জয়ের দারুণ সম্ভাবনা তৈরি করে দিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। কিন্তু সাজানো মঞ্চে ব্যাটাররা হয়ে উঠলেন আত্মঘাতী। ক্রমে স্বপ্ন হয়ে গেল ফিকে। হাতছাড়া হলো সুবর্ণ সুযোগ। জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও বাংলাদেশের মেয়েরা ডুবল হারের হতাশায়।
নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ‘এ’ গ্রুপের ম্যাচে মেলবোর্নে নিউ জিল্যান্ডের কাছে ১৭ রানে হেরেছে বাংলাদেশ।
জাংশন ওভালে শনিবার কিউই মেয়েদের ৯১ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর বাংলাদেশ থমকে গেছে ৭৪ রানে। টানা তিন হারে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেল বাংলাদেশের।
যেকোনো সংস্করণে এটিই ছিল দুই দলের প্রথম সাক্ষাৎ। উপলক্ষটা জয়ে রাঙানোর সুযোগ কাজে লাগাতে পারল না বাংলাদেশের মেয়েরা।
অথচ ম্যাচের প্রথম ভাগে সবকিছু ছিল বাংলাদেশের পক্ষেই। বোলিং, গ্রাউন্ড ফিল্ডিং ও ক্যাচিং ছিল দুর্দান্ত। শরীরী ভাষায় মেয়েদের মনে হচ্ছিল দারুণ উজ্জীবিত। আগের দুই ম্যাচের হতাশা পেছনে ফেলে দলকে মাঠে দেখা যায় যেন অন্য চেহারায়।
রিতু মনি, সালমা খাতুনদের দারুণ বোলিংয়ে প্রথম চার ব্যাটার ছাড়া নিউ জিল্যান্ডের আর কেউ যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। সর্বোচ্চ ২৫ রান আসে র্যাচেল প্রিস্টের ব্যাট থেকে।
বাংলাদেশের সেরা বোলার রিতু। টুর্নামেন্টে প্রথমবার খেলতে নামা মিডিয়াম পেসার ১৮ রানে নেন ৪ উইকেট।
এবারের আসরে এখনও পর্যন্ত এটি সব দল মিলিয়ে সেরা বোলিং। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সব আসর মিলিয়েও প্রথমবার ৪ উইকেটের স্বাদ পেলেন বাংলাদেশের কেউ।
অধিনায়ক সালমা খাতুন ৩ উইকেট নিয়েছেন কেবল ৭ রান খরচায়।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বড় ব্যবধানে হারা ম্যাচ থেকে বাংলাদেশ পরিবর্তন আনে চারটি। আয়েশা রহমান, রিতু, সোবহানা মুস্তারি, পান্না ঘোষকে জায়গা দিতে বাদ পড়েন শামিমা সুলতানা, সানজিদা ইসলাম, খাদিজা তুল কুবরা ও নাহিদা আক্তার।
সপ্তম ওভারে আক্রমণে এসেই দলকে প্রথম সাফল্য এনে দেন সালমা খাতুন। সোফি ডিভাইনকে ফিরিয়ে বাংলাদেশ অধিনায়ক ভাঙেন ৩৬ রানের উদ্বোধনী জুটি।
বাংলাদেশ অধিনায়ক নিজের পরের ওভারে ফেরান আরেক ওপেনার র্যাচেল প্রিস্টকেও। ক্রস খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হওয়া প্রিস্ট ৩২ বলে ৩ চারে করেন ২৫ রান।
এরপর নিউ জিল্যান্ড উইকেট হারায় নিয়মিত বিরতিতে। মেয়েদের টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর ব্যাটার সুজি বেটসকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি রিতু। তার দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড হওয়া বেটস ১৪ বলে করেন ১৫।
পরের ওভারে রুমানা আহমেদকে বেরিয়ে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হন ম্যাডি গ্রিন। পরের বলেই নন-স্ট্রাইক পান্ত্রে রান আউটে ফেরেন হেইলি জেনসেন।
রিতু পরের ওভারে উইকেট নেন আরেকটি। এবার তার শিকার কেটি মার্টিন।
কিউইদের বিপদ আরও বাড়ে রিতুর পরের ওভারে জোড়া আঘাতে। ফারজানা হকের দুর্দান্ত এক ক্যাচে বিদায় নেন অ্যানা পিটারসন। আমেলিয়া কেরকে নিজের চতুর্থ শিকারে পরিণত করেন রিতু।
এরপর আর বেশিক্ষণ টেকেনি নিউ জিল্যান্ডের ইনিংস। লি তাহুহুকে ফিরিয়ে সালমা গুটিয়ে দেন ইনিংস।
কিউইদের ইনিংস শেষে বাংলাদেশের মেয়েদের উচ্ছ্বাসেই ফুটে উঠছিল, কতটা রোমাঞ্চিত তারা। কিন্তু অতি রোমাঞ্চই হয়তো কাল হয়েছে। স্বাভাবিক ব্যাটিংই করতে পারেনি মেয়েরা। ব্যাটিংয়ে শুরু থেকেই ছিল অস্বস্তি, দুটি রান আউট ছিল স্রেফ আত্মহত্যার সামিল।
ওপেনার মুর্শিদা খাতুন ৫ রানে জীবন পেয়েও বাজে শটে ফিরেছেন ১১ রান করে। আসরে প্রথমবার খেলতে নামা অভিজ্ঞ আয়েশা ১ রান করতে খেলেছেন ৮ বল।
বাংলাদেশ উইকেট হারিয়েছে নিয়মিত। তিনে নেমে রিতু মনির ১০ রানে বল লেগেছে ২২টি। বাংলাদেশ বড় ধাক্কা খায় নিগার সুলতানা ব্যাটিংয়ের সময় চোট পেয়ে মাঠ ছাড়ায়। মিডল অর্ডার ভেঙে পড়ে হুড়মুড়িয়ে।
দলের শেষ ৭ ব্যাটারের কেউ ছুঁতে পারেননি দু অঙ্ক। নিগার পরে ব্যাটিংয়ে ফিরে চেষ্টা করেছেন। তবে ততক্ষণে জয় চলে গেছে নাগালের বাইরে। ২১ রান করে তার বিদায়েই শেষ হয়েছে ম্যাচ।
একই মাঠে আগামী সোমবার নিজেদের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ১৮.২ ওভারে ৯১ (ডিভাইন ১২, প্রিস্ট ২৫, বেটস ১৫, গ্রিন ১১, জেনসেন ২, মার্টিন ৬, কের ৫, পিটারসন ৫, ক্যাসপারেক ২, তাহুহু ৩, মইর ২*; পান্না ৩-০-১৬-০, ফাহিমা ৩-০-১৬-০, সালমা ২.২-০-৭-৩, জাহানারা ২-০-১৬-০, রিতু ৪-০-১৮-৪, রুমানা ৪-০-১৭-২)।
বাংলাদেশ: ১৯.৫ ওভারে ৭৪ (মুর্শিদা ১১, আয়েশা ১, রিতু ১০, নিগার ২১, ফারজানা ০, রুমানা ২, ফাহিমা ৬, সোবহানা ৭, জাহানারা ০, সালমা ৪, পান্না ৬*; কেস্পেরেক ৩.৫-২৩-১৭-৩, তাহুহু ১-০-৫-০, কের ৪-০-১০-১, জেনসেন ৪-০-১১-৩, ডিভাইন ৪-০-১৪-১, পিটারসসন ৩-০-১০-০)
ফল: ১৭ রানে জয়ী নিউজিল্যান্ড
প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: হেইলি জেনসেন।