ব্রয়লারের কেজি ২১০ ডিমের হালি ৫০ টাকা

image-642480-1675715640

আবারও ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি হালি ডিমের দাম ১০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি ৫০ টাকা বেড়ে ২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এসব পণ্য কিনতে এসে ক্রেতার চোখ কপালে উঠে গেছে।

সোমবার রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ দিন প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ২১০ টাকা। যা সাত দিন আগেও ১৫৫-১৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি হালি ফার্মের ডিম বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা, যা আগে ৪০ টাকা ছিল।

এদিকে এই দাম বাড়ার চিত্র সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দৈনিক বাজার পণ্যমূল্য তালিকায় লক্ষ করা গেছে। টিসিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাত দিনের ব্যবধানে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ২২.৫৮ শতাংশ বেড়েছে। প্রতি হালি ডিমের দাম বেড়েছে ৮.২৮ শতাংশ।

রাজধানীর নয়াবাজারে ক্রেতা সোলাইমান বলেন, ব্রয়লার মুরগি কিনতে এসে পিলে চমকে গেছে। সাত দিনের ব্যবধানে কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। ডিমের দামও বেড়েছে। সাত দিনে এমন অস্বাভাবিক দাম বাড়া-এটা কী করে সম্ভব? এমন হলে না খেয়ে থাকতে হবে।

বিক্রেতা হাসেম বলেন, ডিম-মুরগির দাম পাইকারিতে বাড়ানো হচ্ছে। প্রতিদিন আড়তে দাম বাড়ছে। মনে হচ্ছে রমজান ঘিরে এমন কারসাজি করা হচ্ছে। এখনই পদক্ষেপ না নেওয়া হলে কোথায় গিয়ে ঠেকবে জানি না।

খামারিদের সংগঠন পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন সূত্র জানায়, পোলট্রি খাতে বাচ্চা, খাবার (ফিড), মেডিসিনসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সবকিছু উৎপাদন করছে করপোরেট কোম্পানিগুলো। আবার তারা ডিম এবং মুরগিও উৎপাদন করছে। খামারিদের সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক উৎপাদন কাজে জড়িত আছে। সে কারণে দেশের সাধারণ খামারিরা তাদের সঙ্গে টিকতে পারছে না। কোম্পানিগুলো বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে।

বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, গত বছর ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দামে নৈরাজ্যের জন্য তদারকি করে অসাধুদের ধরা হয়েছিল। প্রয়োজনে এবার ধরে আর ছাড় দেওয়া হবে না।

রোজায় অতিব্যবহৃত ছয় পণ্যের এলসি জটিলতা কেটে গেছে : জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান জানান, রোজায় অতিব্যবহৃত ছয় পণ্যের (ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা, মসুর ডাল ও খেজুর) এলসি জটিলতা কেটে গেছে। মসলা আমদানিতে এলসি জটিলতাও শিগগিরই কেটে যাবে। ডিউটি ফি নির্দিষ্ট করে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করবে অধিদপ্তর।

সোমবার অধিদপ্তরে গরম মসলার মূল্য ও সরবরাহ স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সফিউজ্জামান বলেন, এলসির বিষয়টি বর্তমানে স্বাভাবিক হচ্ছে। মসলার আমদানির বিষয়ে এলসি খোলা নিয়ে আমি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হবে। এ সমস্যার সমাধানে বন্দরসহ অন্যদের সঙ্গে কাজ করব। রমজানের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্ক কাঠামোর বিষয়ে এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা চলছে। রমজান ঘিরে গরম মসলার দাম যদি কেউ অন্যায়ভাবে বাড়ান তাহলে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া ফুডগ্রেড রঙের পরিবর্তে যদি খাবারে অন্য রং মেশানো হয় তাহলেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজারে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে মূল্য তালিকা থাকতে হবে। এছাড়া অবশ্যই ক্যাশ মেমো ব্যবহার করতে হবে।

সভায় মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজমল হোসেন বাবু বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে ব্যাংক মসলার জন্য আমাদের এলসি দিচ্ছে না। আর মসলার বাজার হচ্ছে আমদানিনির্ভর। শুধু বাংলাদেশ নয়, নানা কারণে সারা বিশ্বেই এ সমস্যা চলছে। চেষ্টা করছি এ সমস্যা থেকে বের হয়ে আসার জন্য। আশা করি, রমজানে মসলার বাজার স্থিতিশীল রাখতে পারব।

Pin It