উন্নয়নের পথে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার নেতৃত্বে প্রধানমন্ত্রী তার উপর ভরসা রাখতে জনগণের প্রতি যে আহ্বান জানিয়েছেন, অর্থনীতির হালের চিত্র তুলে ধরে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শেখ হাসিনার ভাষণে রাজনৈতিক সংলাপের কোনো ইঙ্গিত না পেয়ে হতাশ হওয়ার কথাও জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।
সরকারের এক বছর পূর্তিতে মঙ্গলবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাতে তিনি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পথে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলে তার উপর ভরসা রাখতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
ওই ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় বুধবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে ফখরুল বলেন, “তিনি (প্রধানমন্ত্রী) যে ভরসা রাখতে বলেছেন, সেই ভরসা মানুষ কোত্থেকে রাখবে?
“অর্থনীতি চরমভাবে নিচে নেমে গেছে। যে অর্থনীতির বর্ণনা তিনি দিয়েছেন তার ভাষণের মধ্যে, (অর্থনীতি) সেই ভাষণের ঠিক উল্টোটা। ব্যাংকগুলো ভেঙে পড়ছে সবগুলো। মানুষ আস্থা রাখবে কোথায়?”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “গতকালই আমার কথা হচ্ছিল একজন সাবেক ব্যাংকারের সঙ্গে, যিনি তার সমস্ত জীবনের সঞ্চয় অবসরে যাওয়ার পরে যে প্রায় কোটি টাকার মতো রেখেছেন। যেখান থেকে মাসে তিনি এক লাখ টাকা করে ইন্টারেস্ট পাবেন, যাতে তার সংসার চলবে। কালকে তিনি বলেছেন যে, হিসাব করে দেখেছেন তিনি ৪৫ হাজার টাকার বেশি আর পাবেন না।
“অর্থাৎ শুরু হচ্ছে কী? সাধারণ মানুষের কাছে তাদের আয় কমে যাচ্ছে, তাদের ব্যয় বাড়ছে, প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়েছে। এমন একটা জিনিস নাই যে দাম বাড়েনি। সেক্ষেত্রে আজকে সাধারণ মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে।”
বাংলাদেশ ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ বলে ক্ষমতাসীনদের বরাবরের দাবিকে নাকচ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই রোল মডেল হচ্ছে দুর্নীতির রোল মডেল, দুঃশাসনের রোল মডেল।”
গত বছর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়ের মধ্য দিয়ে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ‘ভোট ডাকাতি’র অভিযোগ করে আসা বিএনপি নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে।
বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘রাজনৈতিক সঙ্কট’ আখ্যায়িত করে ফখরুল বলেন, “বর্তমানে রাজনীতিতে-অর্থনীতিতে যে প্রধান সঙ্কট, সেটা কিন্তু পুরোপুরিভাবে রাজনৈতিক সঙ্কট। সেই সঙ্কট হচ্ছে, একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা দখল করে বসে আছে।”
এই পরিস্থিতির সমাধানের কোনো ইঙ্গিত প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “জাতির একটা প্রত্যাশা ছিল, তিনি একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনা একটি নতুন নির্বাচন কথা বা তার একটা ইঙ্গিত দেবেন বা সংলাপের একটা ইঙ্গিত দেবেন। কোনোটাই তিনি করেন নাই। অর্থাৎ সেই সঙ্কটটা নিরসনের জন্য তিনি কোনোই পথ দেখাননি।”
একাদশ নির্বাচনের আগে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে সংলাপ করেছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে সেই সংলাপ ‘অর্থবহ হয়নি’ বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ নিয়ে ফখরুল বলেন, “এই বক্তব্যটা উনাদের নিজেদের জন্যে। উনার নিজের একটা আত্মতুষ্টি দেওয়ার জন্য।
“উনারা জনগণের কাছ থেকে দূরে সরে গেছে, জনগণের ভাষা যে উনারা বুঝতে পারছেন না, জনগণের আওয়াজ যে তারা শুনতে পারছেন না, এই বক্তব্যটা তারই প্রমাণ।”
ভাষণে বিএনপিকে নিয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্যে ক্ষোভ জানিয়ে ফখরুল বলেন, “দোষারোপ করা হয়েছে সবসময়ই বিএনপিকে যে বিএনপি সন্ত্রাস করেছে। ভুলে গেছেন ১৭৩ দিন হরতাল করেছেন কেয়ারটেকার সরকারের দাবিতে? সেই সময়ে বাসে ১১ জন ব্যক্তিতে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছে এবং এই আন্দোলনের ফলে অনেকে নিহত হয়েছেন।
“সেই যে রাজনৈতিক কালচারটা ছিল, এখনও সেই কালচারটা আছে, তারা করছেন, সরকার করছে। তারা হত্যা করছে, তারা এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং করছে, তারা তুলে নিয়ে গিয়ে মারাছে, গুম হচ্ছে, নিখোঁজ হয়ে যাচ্ছে- এই জিনিসগুলো তার (প্রধানমন্ত্রী) বক্তব্যের মধ্যে আসেনি।”