ভারতীয় পাইলট অভিনন্দনকে ফিরিয়ে দিল পাকিস্তান

abhi-5c79645a29248

নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে হামলা চালানোর সময় ভূপাতিত হওয়া ভারতের যুদ্ধবিমানের আটক পাইলট অভিনন্দন ভার্থামানকে ‘শান্তির নিদর্শন’ হিসেবে ফিরিয়ে দিয়েছে পাকিস্তান।

শুক্রবার অভিন্দনকে ইসলামাবাদ থেকে সড়ক পথে লাহোরে আনার পর রাতে পাঞ্জাবের ওয়াঘা-আত্তারি সীমান্ত দিয়ে তাকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। খবর এনডিটিভি ও ডনের

অভিনন্দনের মুক্তি প্রত্যক্ষ করতে শুক্রবার সকাল থেকে ওয়াঘা সীমান্তে জড়ো হন শত শত ভারতীয়। তাদের ‘ভারত মাতা কি জয়’, ‘বন্দে মাতরম’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে সীমান্ত এলাকা। সকলেই অধীর আগ্রহে অভিনন্দনের মুক্তির অপেক্ষা করতে থাকেন।

প্রথম দিকে জানানো হয়েছিল, দুপুরেই হস্তান্তর করা হবে অভিনন্দনকে। পরে কয়েক দফায় সময় পিছিয়ে রাত সাড়ে ৯টার পর কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পাইলট অভিনন্দনকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে ফিরিয়ে দেয় পাকিস্তান।

এ বিষয়ে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আটক ভারতীয় বিমান বাহিনীর উইং কমান্ডার অভিনন্দন ভার্থামানকে আজ (শুক্রবার) ভারতে ফিরে গেছেন। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘণ করায় পাকিস্তানি বিমান বাহিনী ভারতীয় বিমান বাহিনীর ্একটি মিগ-২১ বিমান আজাদ জম্মু ও কাশ্মীরে ভূপাতিত করলে তিনি গ্রেফতার হন।’

আটক অবস্থায় অভিনন্দনকে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে এবং আন্তর্জাতিক আইন মেনে রাখা হয়েছিল বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

দেশ দুটির মধ্যে চলমান উত্তেজনা ও সংঘাতের মধ্যেই নিয়ন্ত্রণ রেখা অতিক্রম করে হামলা চালানোর সময় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বুধবার পাকিস্তানের সীমারেখা অতিক্রম করে প্রায় ৭ কিলোমিটার ভেতরে ভূপাতিত হয় ভারতের একটি যুদ্ধবিমান। ওই বিমান থেকেই প্যারাসুট দিয়ে নেমে একটি গ্রামে প্রথমে স্থানীয় কিছু তরুণ ও পরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে আটক হন পাইলট অভিনন্দন ভার্থামান।

গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় দেশটির আধা সামরিক বাহিনীর গাড়িবহরে আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জনেরও বেশি নিহত হন, যে ঘটনার দায় স্বীকার করে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মুহাম্মদ। তবে পাকিস্তান সরকার এই ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

এরই মধ্যে পুলওয়ামা হামলার জবাব দিতে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ভোরে পাকিস্তানের ভেতরে বিমান হামলা চালায় ভারত। সেখানে ভারতীয় বিমান বাহিনীর অভিযানে ৩০০ জঙ্গি নিহত হয় বলে দাবি ভারতের। তবে পাকিস্তান এই দাবি প্রত্যাখ্যান করে।

দুই দেশের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে ২৭ ফেব্রুয়ারি ভারতের পক্ষ থেকে পাকিস্তানের একটি এবং পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ভারতের দুটি বিমান ভূপাতিত করার দাবি করা হয়।

এরপর প্রথমে ভারতের দুইজন পাইলট এবং তার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এক পাইলটকে আটকের কথা জানায় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। এক ভিডিওতে পাইলট অভিনন্দনকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা গেলেও পরের ভিডিওতে তাকে স্বাভাবিক অবস্থায় চা পান করতে দেখা যায়।

ওইদিনই বিকেলে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এক ভাষণে জানান, পুলাওয়ামাকাণ্ড নিয়ে পাকিস্তান যদি কোনওভাবে জড়িত থাকে তার তদন্ত করা হবে। সে সময় তিনি আলোচনার টেবিলে বসে সমস্যা সমাধানের জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানান।

দুই দেশের উত্তেজনা এবং আটক পাইলটকে মুক্তির দাবি নিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি জরুরি বৈঠকের পর কথা বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। অবিলম্বে তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। এরপর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বৃহস্পতিবার পার্লামেন্টে এক ঘোষণায় জানান, ‘শান্তির নিদর্শন’ হিসেবে শুক্রবার ভারতীয় পাইলট অভিনন্দনকে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

সে অনুযায়ী শুক্রবার পাঞ্জাবের ওয়াঘা-আত্তারি সীমান্ত দিয়ে পাইলট অভিনন্দন ভার্থামানকে ফিরিয়ে দেয় পাকিস্তান।

Pin It