ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই উত্তেজনা, রোমাঞ্চ আর নাটকীয়তা। তবে মাঠের লড়াইয়ে ছিল না এসবের ছিটেফোঁটাও। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ম্যাচ হলো একপেশে। ভারতের বিপক্ষে এবারও বিশ্বকাপের গেরো কাটাতে পারল না পাকিস্তান। রোহিত শর্মার সেঞ্চুরির পর নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে সহজ জয় পেল বিরাট কোহলির দল।
ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে রোববার ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে ৮৯ রানে জিতেছে ভারত। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে সাত ম্যাচের সবগুলোতেই জিতল দুইবারের চ্যাম্পিয়নরা।
১৪০ রানের দাপুটে ইনিংসে দলকে পথ দেখান দেখান রোহিত। সহ-অধিনায়কের গড়ে দেওয়া ভিত কাজে লাগিয়ে দলকে রানের পাহাড়ে নিয়ে যান অধিনায়ক। ভারত ৫ উইকেটে করে ৩৩৬ রান।
কুলদীপ যাদব ও হার্দিক পান্ডিয়ার আঘাতে দিশেহারা হয়ে পড়ে পাকিস্তান। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তারা। বৃষ্টিতে কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ থাকায় ম্যাচের দৈর্ঘ্য নেমে আসে ৪০ ওভারে। ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে পাকিস্তান পায় ৩০২ রানের লক্ষ্য। সরফরাজের দল ৬ উইকেটে থামে ২১২ রানে।
ভারত বড় জয়ের ভিত পায় উদ্বোধনী জুটির দৃঢ়তায়। চোটের জন্য শিখর ধাওয়ানের অনুপস্থিতিতে ওপেনিংয়ে ফেরা লোকেশ রাহুলকে নিয়ে দলকে ভালো শুরু এনে দেন রোহিত। টস জিতে বোলিং নেওয়া পাকিস্তানকে উইকেটে থাকা সুবিধা নিতে দেননি তারা।
একপ্রান্তে আঁটসাঁট বোলিং করেন মোহাম্মদ আমির। অন্য প্রান্তে রান আসছিল সহজেই। হাসান আলি, ওয়াহাব রিয়াজ, শাদাব খান, ইমাদ ওয়াসিমদের কেউ পারেননি ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলতে।
একটু মন্থর পায়ে এগোচ্ছিলেন রাহুল, রোহিতের ব্যাট ছিল উত্তাল। ৩৪ বলে ফিফট স্পর্শ করেন ভারতের সহ-অধিনায়ক, রাহুল ৬৯ বলে। বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে যে কোনো উইকেটে ভারতের সর্বোচ্চ ১৩৬ রানের জুটি ভাঙেন ওয়াহাব। ৭৮ বলে ৫৭ রান করে ফিরে যান রাহুল।
কোহলির সঙ্গে দ্রুত জমে যায় রোহিতের জুটি। তরতর করে এগিয়ে যায় ভারত। এবারের আসরে দ্বিতীয় ও ক্যারিয়ারের ২৪তম সেঞ্চুরি ছুঁয়ে ছুটছিলেন রোহিত। হাসানকে স্কুপ করতে গিয়ে ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার দাপুটে ইনিংস। ১১৩ বলে ১৪ চার ও তিন ছক্কায় ১৪০ রান করে ফিরেন এই ওপেনার।
এসেই চড়াও হয়েছিলেন পান্ডিয়া। তাকে বেশি দূর যেতে দেননি আমির। বাঁহাতি এই পেসার পরে দ্রুত ফেরান মহেন্দ্র সিং ধোনিকে। আমিরের তৃতীয় শিকার কোহলি।
৬৫ বলে ৭ চারে ৭৭ রান করে ফিরেন ভারত অধিনায়ক। এই ইনিংস খেলার পথে ভারতের ব্যাটিং কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারকে (২৭৬) ছাড়িয়ে ওয়ানডেতে দ্রুততম ১১ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছান তিনি। কোহলির লেগেছে ২২২ ইনিংস।
কেদার যাদবকে নিয়ে বিজয় শঙ্কর দলকে নিয়ে যান ৩৩৬ রানে। তাতে এই আসরে ইংল্যান্ডের করা ৯ উইকেটে ৩৩৪ ছাড়িয়ে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে কোনো দলের সর্বোচ্চ সংগ্রহ গড়ে ভারত। ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে তাদের আগের সেরা ছিল গত আসরের ৭ উইকেটে ৩০০।
প্রথম ৫ ওভারে ৯ রান দেওয়া আমির শেষ পর্যন্ত ৪৭ রানে নেন ৩ উইকেট।
বোলিংয়ে শুরুতে বড় একটা ধাক্কা খায় ভারত। পঞ্চম ওভারে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন ভুবনেশ্বর কুমার। এদিন আর খেলায় ফিরেননি এই পেসার।
তার অসমাপ্ত ওভারটি শেষ করতে এসেই আঘাত হানেন শঙ্কর। টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো মাঠে নামা এই অলরাউন্ডার প্রথম বলে ফিরিয়ে দেন ইমাম-উল-হককে। মাত্র তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে পেলেন প্রথম বলে উইকেট।
১০৪ রানের জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন ফখর জামান ও বাবর আজম। দারুণ এক ডেলিভারিতে বাবরকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন কুলদীপ। বাঁহাতি এই রিস্ট স্পিনার পরের ওভারে থামান ফখরকে। এই ওপেনার ৭ চার ও এক ছক্কায় ৭৫ বলে করেন ৬২ রান।
পাকিস্তানের সবচেয়ে অভিজ্ঞ দুই ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ হাফিজ ও শোয়েব মালিককে পরপর দুই বলে ফিরিয়ে দেন পান্ডিয়া। ১২ রানের মধ্যে চার উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচ পুরোপুরি মুঠোয় নিয়ে আসে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
৩৫তম ওভারে বোলিংয়ে ফিরে সরফরাজকে বোল্ড করে নিজের দ্বিতীয় উইকেট নেন শঙ্কর। এই ওভার শেষে বৃষ্টি নামে তখন পাকিস্তানের স্কোর ছিল ১৬৬/৬। আবার খেলা শুরু হলে দলটি ৪০ ওভারে পায় ৩০২ রানের লক্ষ্য। অর্থাৎ শেষ ৫ ওভারে ১৩৬ রান। শেষের দিকে ইমাদ ও শাদাবের ব্যাটে পরাজয়ের ব্যবধান কিছুটা কমায় পাকিস্তান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত: ৫০ ওভারে ৩৩৬/৫ (রাহুল ৫৭, রোহিত ১৪০, কোহলি ৭৭, পান্ডিয়া ২৬, ধোনি ১, শঙ্কর ১৫*, কেদার ৯*; আমির ১০-১-৪৭-৩, হাসান ৯-০-৮৪-১, ওয়াহাব ১০-০-৭১-১, ওয়াসিম ১০-০-৪৯-০, শাদাব ৯-০-৬১-০, মালিক ১-০-১১-০, হাফিজ ১-০-১১-০)
পাকিস্তান: (লক্ষ্য ৪০ ওভারে ৩০২) ৪০ ওভারে ২১২/৬ (ইমাম ৭, ফখর ৬২, বাবর ৪৮, হাফিজ ৯, সরফরাজ ১২, মালিক ০, ওয়াসিম ৪৬*, শাদাব ২০*; ভুবনশ্বের ২.৪-০-৮-০, বুমরাহ ৮-০-৫২-০, শঙ্কর ৫.২-০-২২-২, পান্ডিয়া ৮-০-৪৪-২, কুলদীপ ৯-১-৩২-২, চেহেল ৭-০-৫৩-০)
ফল: ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে ভারত ৮৯ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রোহিত শর্মা