ভারতে মোট ভোটার ১৩০ কোটির কাছাকাছি। এর প্রায় অর্ধেকই নারী। কিন্তু নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করার ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নেই বললেই চলে।
এবছরই পার্লামেন্টে নারীর প্রতিনিধিত্ব নিয়ে ১৯৩টি দেশের ওপর জরিপ চালানো হয়। এতে ভারতের অবস্থান ১৪৯। এই জরিপে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের থেকে ভারত পিছিয়ে।
২০০৯ সালের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো লোকসভার ১০ শতাংশের বেশি আসনে জয়ী হন নারী প্রার্থীরা। বর্তমানে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৬ শতাংশে।
তবে দেশটির এবারের লোকসভা নির্বাচনে কোনো কোনো দল নারীদের এগিয়ে রেখেছে। অনেকেই মনে করছেন, লোকসভা নির্বাচনে বড় ‘ফ্যাক্টর’ হবেন তিন নারী।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনমত কোন পথে যাবে, তা নির্ধারণে কংগ্রেসের প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে।
নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস জোর দিয়েছে নারী প্রতিনিধিত্বের ওপর। দলটির ৪২ আসনের প্রার্থী তালিকার ৪১ শতাংশই নারী প্রার্থী। মমতার লোকসভা প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন ২৫ জন পুরুষ এবং ১৭ জন নারী।
রাজ্যের কৃষ্ণনগর আসনে তৃণমূল থেকে টিকিট পেয়েছেন মহুয়া মৈত্র। রাজনীতির মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। এই আসনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী কল্যাণ চৌবে।
লন্ডনে ব্যাংকের মোটা অঙ্কের চাকরি ছেড়ে দেশে ফিরে আসেন তিনি। যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৩৯ বছর পর সিপিএমকে হারিয়ে মহুয়া মৈত্র করিমপুরের বিধায়ক হন।
এবার তার লক্ষ্য লোকসভা। নির্বাচনে কৃষ্ণনগর আসন থেকে জিততে জোর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
মহুয়া বলেন, অতীতে নির্বাচন হয়েছে সরকার পরিবর্তনের জন্য। কিন্তু এবারের নির্বাচন হচ্ছে ভারতের সংবিধান সংরক্ষণ করার জন্য। এটা কোনো সাধারণ ভোট নয়।
তৃণমূলের আরেক প্রার্থী কাকলি ঘোষ দস্তিদার। বারাসাত থেকে লড়ছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য তিনি। তৃণমূলের হয়ে দুইবার এমপিও হয়েছেন।
তিনি বলেন, নারীদের পেছনে ফেলে কোনোভাবেই সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে বেশি সংখ্যক নারীকে মনোনয়ন দেওয়া সংবিধান রক্ষার একটি প্রক্রিয়া।
গত নির্বাচনের পরিসংখ্যান টেনে তিনি বলেন, ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে তৃণমূল ৩৩ শতাংশ নারী প্রার্থী দিয়েছিল।
তৃণমূলের নারী প্রার্থীরা বলছেন, সংসদে যত বেশি নারী প্রতিনিধিত্ব হবে সর্বস্তরের নারীরা ততই উপকৃত হবেন। কারণ একজন নারী আরেক নারীর সমস্যাগুলো খুব সহজেই বোঝেন।
এদিকে গবেষণা বলছে, নারীর প্রতিনিধিত্ব দেশের অথনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও সহায়তা করে। কেননা পানি সরবরাহ, বিদ্যুৎ, সড়ক যোগাযোগ, স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে পুরুষের তুলনায় নারীরা অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়।
এ বিষয়ে কলকাতা সিটি কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক শাশ্বতী ঘোষ বলেন, ‘নীতিনির্ধারিণী পর্যায়ে নারীর প্রতিনিধিত্ব আরও দরকার। আমি মনে করি, নারীর অংশগ্রহণ বাড়লে সার্বিকভাবেই একটা পরিবর্তন আসবে।’
এবারের নির্বাচনে বিজেপি ১২ শতাংশ, কংগ্রেস ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ, বিজেডি ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ ও সপা ১৭ দশমিক ২ শতাংশ নারী প্রার্থী দিয়েছে।
কংগ্রেস ইশতেহারে বলেছে, ক্ষমতায় এলে তারা নারীদের রিজার্ভেশন বিল পাস করবে।
এর আগের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন বিজেপিও নির্বাচনী ইশতেহারে একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তবে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেনি তারা।
এবারের লোকসভা নির্বাচন দিয়ে ভারতে নারীর প্রতিনিধিত্বে দৃশ্যত কোনো পরিবর্তন আসে কিনা তাই এখন দেখার বিষয়।