ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে দীর্ঘসূত্রিতার অবসান

image-170480-1595856724

অবশেষে ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে দীর্ঘসূত্রিতার অবসান ঘটলো। সড়কপথে ট্রাকে, আকাশপথে এবং সমুদ্রপথে পণ্য আমদানিতে যে জটিলতা ছিলো তা এখন আর থাকছে না। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে মালবাহী ট্রাকে পণ্য আমদানি ছিলো সময়সাপেক্ষ বিষয়। আবার জরুরি পণ্য আকাশ পথে কিংবা সমুদ্রপথে আনতে গেলে আমদানিকারকদের খরচ পড়তো অনেক বেশি। কিন্তু এখন ভারত থেকে সরাসরি ট্রেনে কন্টেইনারের মাধ্যমে পণ্য আমদানিতে খরচ এবং সময় দুটোই সাশ্রয় হবে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।

উল্লেখ্য, তৈরি পোশাক খাতের বিভিন্ন কাঁচামালসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী ৫০টি কন্টেইনার নিয়ে গত রবিবার ভারত থেকে বাংলাদেশের বেনাপোল সীমান্তে আসে। কোলকাতা থেকে বেনাপোলে আসতে এ ট্রেনের সময় লেগেছে মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা। বাংলাদেশের লজিস্টিক কোম্পানি এমজিএইচ আমদানিকৃত পণ্য বাংলাদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে ভারতীয় রেলওয়ের সাথে চুক্তি করেছে। চুক্তি অনুযায়ী ভারতীয় রপ্তানিকারকরা এমজিএইচ লজিস্টিকস এর সাথে যোগাযোগ করে তাদের পণ্য বুকিং দেবে। দুদেশের রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দীর্ঘ আলোচনা শেষে বেনাপোল দিয়ে রেলওয়ের মাধ্যমে পণ্য আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রটি প্রস্তুত করে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ২০১৬ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাবটি দিয়েছিলো এমজিএইচ গ্রুপ। প্রস্তাবে তারা বলেছিলো যে, সড়কপথে কিংবা সমুদ্রপথে পণ্য আমদানির চেয়ে রেলওয়ের মাধ্যমে পণ্য আমদানিতে সময় যেমন কম লাগবে, খরচও নেমে আসবে অর্ধেকে। এ প্রস্তাবটি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। শেষ পর্যন্ত গত রবিবার এটি আলোর মুখ দেখে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশ গতবছর (২০১৯) ভারত থেকে মোট ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য আমদানি করে। এর বিপরীতে রপ্তানি করে মাত্র এক বিলিয়ন ডলারের পণ্য। বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্য আমদানি করে তার সিংহভাগ আসে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে। কিন্তু অতিরিক্ত পণ্য আমদানির কারণে এ বন্দরের ওপর চাপ অনেক বেড়েছে। এমনও দেখা গেছে এই বন্দরে একেকটি ট্রাক ১০ থেকে ১২দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করে। এতে করে যেসব রপ্তানিকারক পণ্য রপ্তানি করে তাদের লীডটাইম ধরতে কষ্ট হয়। আবার অনেককে ক্ষতিপূরণও গুনতে হয়। এখন রেলওয়ের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনের ফলে এ অসুবিধা দূর হবে।

এমজিএইচ গ্রুপের পরিচালক সুভাষ দেব বলেন, ভারত থেকে রেলওয়ের পণ্য আমদানির এ ধারনা এমজিএইচ গ্রুপ দেয় ২০১৬ সালে। এটি এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। তিনি বলেন, পচনশীল এবং জরুরি পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে রেলওয়ের বিকল্প নেই। এছাড়া পণ্য পরিবহনে খরচ কমানোর ক্ষেত্রেও এটি কাজে দেবে। সড়কপথ কিংবা সমুদ্রপথে পণ্য আমদানিতে যে পরিমাণ খরচ হয় রেলওয়েতে খরচ হবে তার অর্ধেক। রেলওয়ের মাধ্যমে আমদানিকৃত পণ্য কিভাবে শুল্কায়ন হবে তা জানতে চাইলে সুভাষ দেব জানান, ট্রেনটি বেনাপোলে পৌঁছার পর পণ্য ট্রাকে করে শুল্ক স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে শুল্কায়নের পর আমদানিকারকরা তা খালাস করে নিয়ে যাবেন। তবে ভবিষ্যতে একটি ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান। রেলওয়ের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনের অসুবিধা সম্পর্কে তিনি বলেন, ভারত থেকে যেহেতু পণ্য আমদানি বেশি হয় আর বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি কম হয় সেক্ষেত্রে যাওয়ার সময় অধিকাংশ কন্টেইনার খালি যাবে। এতে খরচ একটু বাড়বে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রপ্তানি বাড়াতে পারলে খরচ আরো কমবে।

Pin It