ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনে ‘গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে’ মন্তব্য করে দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, ‘আজ এই ভিখারির ঝোলা ভরে দিয়েছে দেশবাসী।’
লোকসভা নির্বাচনের ভোটের ফল ঘোষণার এক পর্যায়ে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটের বিজয় স্পষ্ট হতেই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন মোদি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ভোটের ফলে কার্যত এটা সুস্পষ্ট যে গতবারের চেয়েও বেশি আসন নিয়ে এবার সরকার গঠন করতে যাচ্ছে বিজেপি জোট। এছাড়া বিজেপি এককভাবেই সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আসন পেতে যাচ্ছে বলেও প্রতীয়মান হচ্ছে। যদিও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও সব শরীককে সঙ্গে নিয়েই সরকার গঠন করবেন বলে এর আগে জানিয়েছিলেন মোদি।
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে দেশের জনগণের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘দেশবাসীকে আমি প্রণাম করি। গণতন্ত্রের প্রতি ভারতবাসীর দায়দায়িত্ব সারা বিশ্বকে স্বীকার করতে হবে।’
নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘গণতন্ত্রের এই উৎসবে, গণতন্ত্রের জন্য যেসব মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, যেসব মানুষ আহত হয়েছেন, তাদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা জানাচ্ছি। গণতন্ত্রের ইতিহাসে গণতন্ত্রের জন্য মৃত্যু বরণ করা, আগামী প্রজন্মকে প্রেরণা দেবে। নির্বাচন কমিশন, সুরক্ষা বাহিনী এবং যারা যারা ভোটের সঙ্গে যুক্ত, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ।’
ভারতের এবারের লোকসভা নির্বাচনে কোনো প্রার্থী বা কোনো নেতা লড়াই করেনি বরং দেশের সাধারণ মানুষ লড়াই করেছে– এমন মন্তব্য করেন তিনি বলেন, এ কারণে কেউ যদি জয়ী হয়ে থাকে, তাহলে জয়ী হয়েছে ভারতবর্ষ, জয়ী হয়েছে দেশবাসী।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘এ বারের ভোটে একটা রাজনৈতিক দলও সেক্যুলারিজমের পক্ষ নিয়ে ভোটে লড়েনি। একটা বিরোধী দলও অভিযোগ করেনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে। বিজেপিই প্রথম কোনো রাজনৈতিক দল, পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার পরও যাদের বিরুদ্ধে কোনো দুর্নীতির অভিযোগ নেই।’
তিনি বলেন, এই দেশে এখন দুটি জাতি– গরিবি থেকে যারা মুক্তি পেতে চান এবং গরিবি থেকে মুক্তি দিতে চান। এই দুই পক্ষের হাতই শক্তিশালী করতে হবে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বরেন, ‘দেশ আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে। তাই এই সময় দেশবাসীকে আমি একটা কথা বলতে চাই– আপনারা এই ভিখারির ঝোলা ভর্তি করে দিয়েছেন, আপনাদের আশা-আকাঙ্খার সঙ্গে আমি সব সময় থাকবো। আপনাদের আশা-আকাঙ্খার গুরুত্ব আমি বুঝি। দেশের জনসাধারণ আমাদের ওপর আস্থা রেখেছেন, তাই আমাদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল। আমি আজ বলতে চাই, আপনারা আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন, তা পালন করবো।’
ফের ক্ষমতায় বসছে বিজেপি
অর্থনৈতিক দুরবস্থা, কৃষকের সংকট ও বেকার সমস্যা ‘মোদির জয়রথ’ থামিয়ে দিতে পারে বলে অনুমান করেছিলেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক। কিন্তু বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, ‘মোদি ঝড়ে’ সেসব দুমড়েমুচড়ে গেছে।
ভারতে লোকসভা নির্বাচনে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় শুরু হয় ভোট গণনা। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত ফলাফলে বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। লোকসভার ৫৪২টি আসনের মধ্যে ৩৪৯টি আসনে এগিয়ে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ)। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স (ইউপিএ) এগিয়ে রয়েছে ৯২টিতে এবং অন্যান্য দল এগিয়ে ১০১টি আসনে। খবর এনটিভির
কোনো দলকে সরকার গঠন করতে হলে জয় দরকার ২৭২টি আসনে। ফলে ২০১৪ সালের মতো ফের বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদি।
আমেথিতে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী বিজেপির স্মৃতি ইরানির কাছে পরাজয় মেনে নিয়েছেন।
‘মোদি ঝড়’ যে কেবল হিন্দিবলয় ও গুজরাটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ তা নয়। পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র এবং কর্নাটকেও মোদির জয়জয়কার দেখা যাচ্ছে। তবে শুধু কেরালা, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলেঙ্গানায় মোদির বিজেপি পিছিয়ে।
নির্বাচনে বিজেপির বিজয় প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, এই নির্বাচনে ‘গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে’। এ সময় দেশবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আজ এই ভিখারির ঝোলা ভরে দিয়েছে দেশবাসী।’
এদিকে ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল বিজেপি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ের পথে থাকায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া নরেন্দ্র মোদিকে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহেও।
লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে এবার ভোট হয়েছে ৫৪২টিতে। ভোট হয়নি শুধুমাত্র তামিলনাড়ু রাজ্যের ভেলর আসনে। অর্থিক লেনদেনের অভিযোগে আসনটিতে ভোট স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন। সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচন শুরু হয় গত ১১ এপ্রিল। সাত দফায় ভোট শেষ হয় গত রোববার। এবার লোকসভা নির্বাচনে ৯০ কোটি ভোটারের মধ্যে প্রায় ৬০ কোটি ভোট দিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে দেশটির নির্বাচন কমিশন।
ভারতের নির্বাচনে এবার সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যাপক ব্যবহার হয়েছে। আর এতে এগিয়ে ছিলেন মোদি। সোশ্যাল মিডিয়ার কতটা দখল কার হাতে থাকছে, সেদিকে বিশেষ নজর রেখেছিল প্রায় সব রাজনৈতিক দলই। সাত দফার নির্বাচনে শুধু ভোটগ্রহণের দিনগুলোকে নিয়ে একটি সমীক্ষা করে নয়াদিল্লি ইন্দ্রপ্রস্থ ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজি। এতে দেখা যায়, শুধু ভোটের দিনগুলোতেই মোট ১৭ লাখ ৪০ হাজার টু্ইট করা হয়েছে। সেখান থেকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল মোট ৮৬১টি হ্যাশট্যাগকে। দেখা যায়, সেই হ্যাশট্যাগের লড়াইয়ে এগিয়ে মোদি।