ভিয়েতনামের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য

bangladesh-vietnam-674762d8753f6

জোট হিসাবে ২৭ জাতির ইউরোপীয় ইউনিয়ন-ইইউ বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি বাজার। মোট রপ্তানি আয়ের ৫০ শতাংশের বেশি আসে এ জোটটি থেকে। তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনামের সঙ্গে ইইউর মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি-এফটিএ আংশিক কার্যকর হওয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। ভিয়েতনামের রপ্তানি বাড়ছে, কমছে বাংলাদেশের। আগামীতে এ চ্যালেঞ্জ আরও বাড়বে। কারণ ২০২৭ সালে একদিকে ভিয়েতনামের সঙ্গে এফটিএ শতভাগ কার্যকর হবে। তখন দেশটি রপ্তানিতে শুল্ক মুক্ত সুবিধা ভোগ করবে। অন্যদিকে স্বল্পোন্নত দেশের-এলডিসির কাতার থেকে উত্তরণের পর শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা হারাবে বাংলাদেশ। তখন বাংলাদেশের পণ্যে ৯ দশিমক শতাংশ শুল্কারোপ হবে। অর্থাৎ বর্তমান শুল্কমুক্ত সুবিধা এবং ভিয়েতনামের ৯ শতাংশ শুল্করোপ বাস্তবতার বিপরীতে বাংলাদেশের পণ্যে শুল্কারোপ দাঁড়াবে ভিয়েতনামের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি।

২০২৬ সালের নভেম্বর এলডিসি থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণ হবে বাংলাদেশের। উত্তরণের পরবর্তী ৩ বছর বর্তমানের মতোই শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহত থাকবে। এ মেয়াদ শেষ হলেই ইইউতে রপ্তানিতে ধাক্কা খেতে পারে বাংলাদেশ। বিশ্ববাণিজ্য সংস্থা-ডব্লিউটিওর আশঙ্কা, ইইউ এবং অন্যান্য বাজার মিলে বর্তমানের চেয়ে ১৪ দশমিক ৩ শতাংশ রপ্তানি আয় হারাবে বাংলাদেশ।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) এক সেমিনারে এ ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট র‌্যাপির চেয়ারম্যান ড. আব্দুর রাজ্জাক। জার্মানির অলাভজনক উন্নয়ন সংস্থা ফ্রেডরিক ইবার্ট স্ট্রিপটাং-এফইএস এবং র‌্যাপিড যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে। রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ-ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকি। বক্তৃতা করেন র‌্যাপিডের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক এম আবু ইউসুফ, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো-ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান এবং বিজিএমইএ’র প্রশাসক আনোয়ার হোসেন, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাশরুর রিয়াজ।

আলোচনায় অংশ নেন, ইইউ দূতাবাসের ট্রেড কাউন্সিলর আবু সায়েদ বেলাল, বাংলাদেশে এফইএসের আবাসিক প্রতিনিধি ড. ফিলিক্স গার্ডস, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এফটিএ শাখার অতিরিক্ত সচিব আয়েশা আক্তার, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটের পরিচালক ড. শামীমা নাসরিন, বিল্ডের প্রধান নির্বাহী ফেরদৌস আরা বেগম, বিআইআইএসএসের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ২০২০ সালে ইইউ-ভিয়েতনাম এফটিএ সইয়ের পর কার্যকর হয়। এখন পর্যন্ত ভিয়েতনামের ৭১ শতাংশ পণ্য শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা ভোগ করছে। বাকি পণ্যগুলোতে বর্তমানে ৪ থেকে ৬ শতাংশর হারে শুল্কারোপ রয়েছে। এতেই ভিয়েতনামের রপ্তানি বেড়েছে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ। আগামী ২০২৭ সালে শতভাগ পণ্য এ সুবিধা কার্যকর হবে। গত বছর ইইউ জোটে ভিয়েতনামের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৫০ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। যেখানে বাংলাদেশের এ পরিমাণ ২০ বিলিয়ন ডলার। তবে ভিয়েতনামের রপ্তানিতে পণ্যের মধ্যে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি রপ্তানির পরিমাণ মোট রপ্তানির ৪০ শতাংশ। পোশাকের হিস্যা ৮ শতাংশের মতো। কারণ তৈরি পোশাক এখনো শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় আসেনি। গড়ে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ শুল্কারোপ রয়েছে পোশাক পণ্যে। এর বিপরীতে অস্ত্র বাদে সব পণ্য (ইবিএ) স্কিমের আওতায় বাংলাদেশের পণ্য এখনো শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে। এ সুবিধায় গত বছর পর্যন্ত পোশাকের রপ্তানি ইউর মোট আমদানির ২১ দশমিক ৭ শতাংশ। অর্থাৎ তৈরি পোশাকে এখনো বাংলাদেশ আধিপত্য বজায় রেখেছে।

Pin It