সমালোচনার মুখে শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে বক্তব্যের জন্য ‘নিঃশর্ত ক্ষমা’ চেয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ।
বুধবার সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, “আমি নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাইছি। সমস্ত দোষ আমার ঘাড়ে নিলাম। আমি করজোড়ে তাদের কাছে ক্ষমা চাইছি। যারা কলিগ আছেন, তারা এটা ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।”
সংসদে কার্যপ্রণালী বিধির ২৭৪ ধারায় ব্যক্তিগত কৈফিয়তে দাঁড়িয়ে একথা বলেন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ রাঙ্গাঁ।
নূর হোসেনের পরিবারের কাছে বিশেষ করে নূর হোসেনের মায়ের কাছেও ক্ষমা চেয়েছেন জানিয়ে রাঙ্গাঁ বলেন, “আমি নূর হোসেনের পরিবারের কাছে, তার মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে পত্র দিয়েছি। আমি ভুল করেছি। এ জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেছি, বিবৃতি দিয়েছি।”
জাতীয় পার্টির এ সংসদ সদস্য দাবি করেন, তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে বিতর্কিত কোনো মন্তব্য করেননি।
তিনি বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আমার দল ক্ষমতায় এলেও আমি মন্ত্রী হতে পারতাম না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মন্ত্রী করেছেন। অনেক স্নেহ করতেন, অনেক ভালোবাসতেন। আমি মনে করি, সেই সম্পর্কটা আমার সাথে উনার থাকবে।”
বান্দরকে লাই দিলে মাথায় উঠে: রাঙ্গাঁকে নিয়ে ফিরোজ রশীদ
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী থাকাকালে সংসদে মন্ত্রী আশরাফুল ইসলামের অনুপস্থিতিতে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কথা উল্লেখ করে রাঙ্গাঁ বলেন, “তার পক্ষে দাঁড়িয়ে আমি ৩৭টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলাম। অজস্রবার জয়বাংলা বলেছি। অজস্রবার জাতির পিতা সম্পর্কে বলেছি। সুতরাং জাতির পিতা নিয়ে যদি আমি ভুল কিছু বলে থাকি সেজন্য আমাকে ক্ষমা করবেন মাননীয় স্পিকার।”
মহাজোট শরিক জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রাঙ্গাঁকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বিগত সরকারে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিল। তার সঙ্গে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিল জাতীয় পার্টির আরও দুই নেতাকে। পতিত সামরিক শাসক এরশাদকে করা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত।
রাঙ্গাঁ গত ১০ নভেম্বর দলের এক অনুষ্ঠানে প্রয়াত সামরিক শাসক এরশাদের পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলনে শহীদ নূর হোসেনকে ‘মাদকাসক্ত’ বলেছিলেন। সেইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও সমালোচনা করেন।
এরপর সর্বত্র সমালোচনার ঝড় উঠে।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, গণফোরামের সুলতান মনসুর, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজ ভান্ডারি এবং জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ ও মুজিবুল হক চুন্নু।
এ প্রসঙ্গ টেনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব রাঙ্গাঁ বলেন, “আমি ২০১৪ সালে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছি। গতকাল উনারা আমার ব্যাপারে যেভাবে কথা বলেছেন, আমি মনে করেছি উনারা আমাকে সচেতন করেছেন। আমি ভুল করেছি। আমাকে আপনারা শাসন করেছেন। সমস্ত দোষ আমার ঘাড়ে নিলাম। আমি নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি। আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।”
মহাজোটের সাথে নির্বাচন করার পাশাপাশি দেশের পরিবহন খাত সচল রাখার জন্য তার নেওয়া ভূমিকার কথাও স্মরণ করেন রাঙ্গাঁ।