জমি ক্রয়-বিক্রয় বা অন্যের জমি নিজের নামে লিখে নেওয়াসহ নানা ধরনের ভূমি নিবন্ধন সংক্রান্ত জালিয়াতির দিনশেষ। কেননা, এখন থেকে জমিসংক্রান্ত কাজ জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ছাড়া আর সম্পন্ন করা হবে না।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানিয়েছে, অতীতে বিভিন্ন সময় ভূমি নিবন্ধন সংক্রান্ত জালিয়াতির অভিযোগ এলে করণীয় নির্ধারণে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে সংস্থাটি। সম্প্রতি ইসি ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। ফলে এখন থেকে সরকারের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো ভূমি মন্ত্রণালয়ও ইসির এনআইডি সার্ভার থেকে ব্যক্তির পরিচিতি নিশ্চিত হয়ে নেবে। ফলে জমি ক্রয়-বিক্রয়ে অপরাধ কমে আসবে। কমবে মামলাও।
এ বিষয়ে ইসির এনআইডি অনুবিভাগের কমিউনিকেশন শাখার অফিসার ইনচার্জ স্কোয়াড্রন লিডার কাজী আশিকুজ্জামান বাংলানিউজকে জানান, সম্প্রতি আমাদের সঙ্গে ভূমি মন্ত্রণালয়ের চুক্তিটি সম্পাদন হয়েছে। এ চুক্তির ফলে ভূমি বিরোধ, ভূমির মালিকানা শনাক্ত ও নামজারি করতে সহায়তাসহ এ সংক্রান্ত দীর্ঘদিনের জটিলতা নিরসনে সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, কেবল ভূমি মন্ত্রণালয় নয়, আরও সাতটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের এনআইডি যাচাই করে দেওয়ার চুক্তি হয়েছে। সেগুলো হলো- বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (বিডিবিএল), বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল), ইন্টার ক্লাউড লিমিটেড, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), প্রগতি সিস্টেমস লিমিটেড (সিওরক্যাশ) ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এসব প্রতিষ্ঠান সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রে সংরক্ষিত ব্যক্তির তথ্য যাচাই করার জন্য এনআইডি নিবন্ধন অনুবিভাগ বরাবর আবেদন করবে। জাতীয় তথ্য ভান্ডারে সংরক্ষিত ব্যক্তির নাম, ঠিকানাসহ বিভিন্ন তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে সঠিক ব্যক্তিকে শনাক্ত করে দেবে ইসি।
এতে আমদানি রপ্তানির ক্ষেত্রে সঠিক আমাদানি ও রপ্তানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ এ খাতে সংশ্লিষ্ট সঠিক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা যাবে। সঠিক ব্যক্তি চিহ্নিত করার ফলে চোরাচালানরোধ করা সম্ভব হবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।
অন্যদিকে, এনআইডি যাচাইয়ের মাধ্যমে রাজধানীতে ফ্ল্যাট ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান সমস্যার সমাধান হবে। একইভাবে এনআইডি কার্ড যাচাই করে উপযুক্ত নাগরিককে সঠিক সেবা দেওয়ায় সচেষ্ট হবে বিজিবি, শিওরক্যাশ, বিটিসিএলসহ অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান।
২০১২ সালের ২৫ জানুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে সেবা চালু করে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ। বর্তমানে ব্যাংক, বিমা, মোবাইল অপারেটরসহ দেশের ১৩৫টি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে এ সেবা দিয়ে আসছে এ বিভাগ। এ সেবা দিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগার সমৃদ্ধ করতেও ভূমিকা রাখছে ইসি।
জাতীয় পরিচয়পত্র ও সংরক্ষিত তথ্য-উপাত্ত প্রবিধানমালা অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠান তথ্য যাচাই করতে চাইলে এককালীন ৫ লাখ টাকা ফি দিয়ে প্রথমে নিবন্ধিত হতে হয়। আর এরপর প্রতিটি তথ্য প্রতিবার যাচাইয়ের জন্য পরিশোধ করতে হয় ২ টাকা। আর বিল প্রাপ্তির ১০ দিনের মধ্যে নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ না করলে বিলম্ব ফি দেওয়ার বিধান রয়েছে মোট বিলের অতিরিক্ত শূন্য দশমিক পাঁচ শতাংশ।
তবে সরকারি বা সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের জন্য নিবন্ধন ফি ৫ লাখ টাকা হলেও বার্ষিক চার্জ বা নবায়ন চার্জ ১ লাখ টাকা। আর প্রতি তথ্য প্রতিবার যাচাইয়ের জন্য ফি ধরা হয়েছে ১ টাকা।
এছাড়া কারও এনআইডি হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে পুনর্ত্তোলন, সংশোধন, ঠিকানা স্থানান্তর সংক্রান্ত সেবার বিনিময়েও আইন নির্ধারিত অর্থ পরিশোধ করতে হয় নাগরিকদের। এক্ষেত্রে সেবার ধরণ অনুযায়ী ১০০ থেকে এক হাজার পরিশোধের বিধান রয়েছে। এসব সেবার বিপরীতে ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পরিশোধ করতে হবে ইসি সচিবের অনুকূলে।
ইসির এনআইডি অনুবিভাগের কমিউনিকেশন শাখার অফিসার ইনচার্জ স্কোয়াড্রন লিডার কাজী আশিকুজ্জামান জানিয়েছেন, গত এক বছরে মোট আয় হয়েছে ৩২ কোটি ৪৮ লাখ ৭৫ হাজার ৫৩৩ টাকা।