ঢাকার খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা নিলুফার আলম টিকা নিতে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে।
ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন ষাটোর্ধ এই নারী। কোভিড-১৯ টিকা নেওয়ার পর বিশ্রামাগারে যখন বসেছিলেন, তখন সঙ্গে কথা হয় তার।
নিলুফার বলেন, “করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে টিকা নেওয়া ভালো। আগে কিছুটা গুজব ছিল, এ কারণে ভয় পাচ্ছিলাম কিছুটা। তবে সবাই টিকা নিচ্ছে দেখে ভয় কেটে গেছে।”
গণ টিকাদানের শুরুর দিন থেকেই বিএসএমএমইউর টিকাদান কেন্দ্রে কোভিড-১৯ টিকা দেওয়া চলছে। তবে মঙ্গলবার ৬টি বুথে ভিড় ছিল প্রথম দুদিনের চেয়ে বেশি।
ঢাকার অন্য টিকাদান কেন্দ্রগুলোতেও ভিড় আগের চেয়ে বেশি দেখা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস শাখার পরিচালক ও এইচএসআই অ্যান্ড ই-হেলথের লাইন ডিরেক্টর ডা. মিজানুর রহমান বলেন, সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের টিকা নিতে দেখে সাধারণ মানুষের উৎসাহ বেড়েছে। আর প্রথম দুই দিনের চেয়ে টিকা নিবন্ধনকারীদের কাছে মোবাইলে এসএমএসও বেশি গেছে।
তৃতীয় দিনে ভিড় বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার ধারণা, মানুষ দেখছিল কী হয়, অপেক্ষা করছিল। এ কারণে সময় নিয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা টিকা নিচ্ছেন। তা দেখে ভয় কেটে গেছে।”
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার কোভিড-১৯ টিকা দিয়ে বাংলাদেশে বিনামূল্যে টিকাদান শুরু হয়েছে। এই টিকার দুটি ডোজ নিতে হয়।
বিএসএমএইউতে টিকাদান বুথে গত দুদিনের তুলনায় নারীদের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে।
বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুলফিকার আহমেদ আমিন জানান, রোববার ৫৬০ জন, সোমবার ৮৯৮ জনকে টিকা দিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার ১২শ জনকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য ছিল। তবে দুপুর ১২টার মধ্যেই সংখ্যাটি তার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল।
“মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। এ কারণে উপস্থিতি বেড়েছে। ১২শ জনকে টিকা দেব, এর বেশি আসলেও আমাদের এখানে দেওয়ার ব্যবস্থা আছে,” বলছিলেন জুলফিকার।
রামপুরা এলাকা থেকে স্ত্রীসহ টিকা নিতে এসেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আজগর আলী। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফার ডটকমকে বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসা হিসেবেই টিকা এসেছে। তাই নেওয়া উচিৎ।
“টিকা বিশ্বের সব দেশের মানুষই নিচ্ছে। এটা চিকিৎসার অংশ। এ কারণে টিকা নিয়ে ভয়ের কিছু ছিল না। টিকা নেওয়ার পরও কোনো সমস্যা দেখছি না।”
বিএসএমএমইউর টিকাদান কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েও নিবন্ধন করার সুবিধা রাখা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের গণ টিকাদান কর্মসূচির তৃতীয় দিন মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড-১৯ টিকা নিচ্ছেন এক ব্যক্তি।করোনাভাইরাসের গণ টিকাদান কর্মসূচির তৃতীয় দিন মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড-১৯ টিকা নিচ্ছেন এক ব্যক্তি।
মহাখালীর জাতীয় অ্যাজমা সেন্টার কেন্দ্রেও গত দুদিনের চেয়ে টিকা নিতে আসা মানুষের সংখ্যা বেশি দেখা গিয়েছিল।
বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তানভীর আহমেদ চৌধুরী জানান, রোববার ৩৫ জনের পর সোমবার ১০০ জনকে টিকা দিয়েছিলেন তারা। মঙ্গলবার ২৬২ জন এসেছেন টিকা নিতে।
ব্র্যাকের কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম টিকা নেওয়া শেষে পর্যবেক্ষণে ছিলেন সেখানে।
টিকা দেওয়ার গুরুত্ব সবাইকে অনুধাবনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, “আমি নিরাপদ থাকলে আমার পরিবার, সহকর্মীরা নিরাপদ থাকবে। আমাকে দেখে অনেকে উৎসাহ পাবে, এ কারণেই টিকা নিলাম।”
মহাখালীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালেও টিকা নিতে আসা মানুষের উপস্থিতি ছিল বেশি।
গত দুই দিন ৯৮ ও ১৫৬ জন টিকা নেওয়ার পর মঙ্গলবার সেখানে টিকা নেন ২৭২ জন।
দুপুর ২টার দিকে গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে টিকা নিতে যান অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালেও গত দুদিনের তুলনায় টিকা নিতে আসা মানুষের ভিড় বাড়ার কথা জানান হাসপাতালের সমন্বয়ক ডা. শিহাব উদ্দিন।
তিনি বলেন, মঙ্গলবার ৪৫০ জনকে টিকা নিতে ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ দেওয়া হয়েছিল। তবে টিকা নিয়েছেন ৪৮৬ জন।
“যাদের আগে রেজিস্ট্রেশন করা ছিল তাদের বাইরেও অনেকে এসেছেন। তাদের স্পটেই রেজিস্ট্রেশন করে টিকা দিয়েছি।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার ঢাকায় ১২ হাজারের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়। এই সংখ্যা আগের দিন ছিল ৭ হাজার ১৭৮।